মামলার সাক্ষীই হত্যাকারী!
হবিগঞ্জে বিউটি হত্যা

মামলার সাক্ষীই হত্যাকারী!

ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে বাবুল
নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে কিশোরী বিউটি আক্তার হত্যার ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ময়না মিয়া।  

এ সময় হত্যাকাণ্ডে নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গা শিউরে ওঠা অনেক তথ্য দিয়েছে সে। আদালতের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে ময়না মিয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

এদিকে এ ঘটনায় একই আদালতে গ্রেপ্তারকৃত বাবুল মিয়া ধর্ষণের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।

শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণডোরা গ্রামের সায়েদ আলীর মেয়ে বিউটি আক্তারকে ২১ জানুয়ারি ধর্ষণ করে একই গ্রামের ইউপি মেম্বার কলম চান বিবির ছেলে বাবুল মিয়া।  

এ ঘটনায় ৪ মার্চ হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে বাবুল ও তার মা কলম চান বিবির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সায়েদ আলী। মামলায় সাক্ষী করা হয় সায়েদ আলীর আত্মীয় ময়না মিয়াকে।

এদিকে ধর্ষণের ঘটনার পরই সায়েদ আলী মেয়ে বিউটিকে লাখাই উপজেলার গুণিপুর গ্রামে নানার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। ১৬ মার্চ রাতে সেখান থেকে নিখোঁজ হয় বিউটি। পরদিন গুণিপুর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে হাওরে তার মরদেহ পাওয়া যায়। তার শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায় পুলিশ।  

এ ঘটনায় ১৮ মার্চ কিশোরীর বাবা সায়েদ আলী বাদী হয়ে একই গ্রামের বাবুল মিয়া (৩২) ও তার মা ইউপি সদস্য কলম চান বিবিকে (৪৫) আসামি করে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর অভিযান চালিয়ে কলম চান বিবিকে শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ এবং বাবুলের বন্ধু ইসমাইল মিয়াকে অলিপুর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৩০ মার্চ সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বাবুল মিয়াকেও।

হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনা দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। প্রতিবাদের ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমে। এ কারণে পুলিশও হত্যার উদ্দেশ্য উদ্ঘাটনে মরিয়া হয়ে ওঠে।  

প্রথম দফায় তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করা হয়। বদল করা হয় তদন্তকারী কর্মকর্তা।  

দ্বিতীয় দফায় মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মানিকুল ইসলাম। দায়িত্ব নেয়ার কয়েকদিনের মাঝেই তিনি কারণ উদঘাটনে সক্ষম হন। বাবুল ও তার মা কলম চান বিবিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বিউটির বাবা, মা, মামা, নানিসহ স্বজন ও নিকটাত্মীয়দের।  

বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় দায়েরকৃত ধর্ষণ মামলার সাক্ষী ময়না মিয়াকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এসব জিজ্ঞাসাবাদেই বেরিয়ে আসে হত্যার মোটিভ। শেষ পর্যন্ত ময়না মিয়া হত্যাকাণ্ডে নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। প্রকাশ করে জড়িত অন্যদের নামও।  

তাকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সে অনেক লোমহর্ষক তথ্য দেয়। জানায়, হত্যাকাণ্ডে তার সরাসরি জড়িত থাকার কথা। আরও কারা জড়িত ছিল, কী দিয়ে, কিভাবে হত্যা করা হয়েছে সব তথ্যই সে আদালতে প্রকাশ করেছে।

এদিকে একই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বাবুল মিয়া। সে বিউটিকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। তবে হত্যাকাণ্ডে তার সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানিয়েছে।  

অপরদিকে বাবুলের মা ইউপি সদস্য কলম চান বিবিকে ২ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

 

 

সম্পর্কিত খবর