নার্সকে ধর্ষণ করে ভিডিও, হাসপাতাল মালিক গ্রেপ্তার

নার্সকে ধর্ষণ করে ভিডিও, হাসপাতাল মালিক গ্রেপ্তার

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিবাদ
নাটোর প্রতিনিধি

সংখ্যালঘু নার্সকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেছেন নাটোরের ‘আল সান’ নামের বেসরকারী হাসপাতালের মালিক ও পরিচালক শফিউল আলম বাবলু। নার্সের অশ্লীল ভিডিও ধারণ এবং ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশ বাবুলকে গ্রেপ্তার করে। শনিবার রাতে গ্রেপ্তারের পর বাবুলের কাছে থেকে ভিডিও চিত্রটি জব্দ করে পুলিশ। ধর্ষিত নার্স বাদী হয়ে শফিউল ইসলাম বাবলুর বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি মামলা করেন।

এদিকে, সংখ্যালঘু নারীকে ধর্ষণের প্রতিবাদ ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন নাটোর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নেতারা। তবে হাসপাতাল মালিক বাবুলকে ছাড়িয়ে নিতে রাতভর তৎপরতা চালায় একটি মহল।

পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, শহরের আলাইপুর এলাকার বাসিন্দা ওই সংখ্যালঘু নারী বড়হরিশপুর এলাকায় বেসরকারি আল সান হাসপাতালে নার্সের চাকরি করতেন। কাজের সুবিধার্থে সে হাসপাতাল এলাকায় তার জামাইবাবুর (ভগ্নিপতি) বাড়িতে থাকতেন।

হাসপাতালের মালিক ও পরিচালক শফিউল আলম বাবলু সম্প্রতি হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় তার নিজস্ব চেম্বারে ওই নার্সকে জোরপূর্বক ধর্ষণের পর ভিডিও চিত্র ধারণ করে। পরে ভিডিও দেখিয়ে ব্ল্যাক মেইল করে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করে। মান-সম্মানের ভয়ে সে ও তার পরিবার কাউকে কিছু না জানিয়ে চুপচাপ থাকে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পরিচালক শফিউল আলম বাবলু আবারো ওই নার্সের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে চাইলে সে রাজি হয় না। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে ওই নার্সকে শায়েস্ত করার উদ্দেশ্যে পরিচালক শনিবার থানায় ওই নার্সের বিরুদ্ধে হয়রানি করার অভিযোগ তুলে মৌখিক অভিযোগ করেন। নার্সের অশ্লীল ভিডিওসহ কিছু তথ্য প্রমাণ পুলিশের কাছে উপস্থাপন করে। এতে পুলিশের সন্দেহ হয় এবং বাবলুকে আটক করে। পরে ওই নার্স সদর থানায় গিয়ে তাকে ধর্ষণসহ ভিডিও চিত্র ধারণ করে ব্লাকমেইল করার অভিযোগ এনে শফিউল আলম বাবলুর বিরুদ্ধে মামলা করে। এ মামলার পুলিশ বাবুলকে গ্রেপ্তার দেখায়।

এদিকে শনিবার সন্ধ্যার পর ধর্ষণের অভিযোগে আল সান হাসপাতালের পরিচালককে গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে একটি প্রভাবশালী মহল ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালায়। ওই চক্র ধর্ষিতা নার্স ও তার স্বামীসহ পরিবারের সদস্যদের ভয় দেখিয়ে মামলা প্রত্যাহারের চাপ দেয়। রাতভর তারা 
বাবুলকে ছাড়িয়ে নিতে তৎপরতা চালায়।

নির্যাতিতের স্বামী ও ভাই জানান, মান সম্মানের ভয়ে তারা ঘটনাটি নিয়ে কাউকে কিছু বলেননি। তারা অভিযোগ করে বলেন, অশ্লীল ভিডিও করে ব্ল্যাক মেইল করে দিনের পর দিন নির্যাতন করা হয়েছে। মামলা না করার জন্য মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। তারা হাসপাতাল মালিক পরিচালক শফিউল আলম বাবুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।

অপরদিকে ধর্ষণের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন। জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুশান্ত কুমার ঘোষ জানান, এই ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি জানাতে তারা প্রয়োজনে 
রাজপথে নামবেন। রোববার তারা বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি নেবেন।

নাটোর সদর থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, নার্সকে ধর্ষণের অভিযোগে আল সান হাসপাতালের মালিক ও পরিচালক শফিউল আলম বাবলুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা কিছু আলমত পেয়েছি, সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। বাবুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, ধর্ষণের ভিডিও চিত্র 
ধারণ ও প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানান ওসি।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/নাসিম/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর