‘সার্ক মারা যায়নি, আছে কোমায়’

‘সার্ক মারা যায়নি, আছে কোমায়’

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

'সার্ক' বা দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক সহযোগিতা জোটের ভাবনা নিয়ে এখন যে আদৌ এগোনো সম্ভব নয়, ভারত সফররত নেপালের প্রধানমন্ত্রীকে দিল্লি তা স্পষ্ট করে জানিয়েছে।

পাকিস্তানে দুবছর আগেই সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও মূলত ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের জেরেই তা হতে পারেনি। অদূর ভবিষ্যতে যে তা হওয়ার সম্ভাবনা নেই সেটাও ভারতের এই অবস্থান থেকে পরিষ্কার।

সার্কের পরিবর্তে ভারত এখন 'বিমস্টেক' বা 'বিবিআইএনে'র মতো বিকল্প জোটগুলোর ওপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করলেও পর্যবেক্ষকরা অবশ্য বলছেন সার্কের মৃত্যু পরোয়ানা লিখে দেওয়ার সময় আসেনি - আর সেটা উচিতও হবে না।

খবর বিবিসির।

প্রায় চার বছর আগে ২০১৪র নভেম্বরে সার্কের শেষ শীর্ষ সম্মেলন হয়েছিল নেপালের কাঠমান্ডুতে।

সেই নেপালের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলি যখন এবার দিল্লিতে এসে সার্কের প্রসঙ্গ তোলেন, ভারত কিন্তু তাকে জানিয়ে দেয় পাকিস্তান যেভাবে সীমান্ত-পারের সন্ত্রাসবাদে মদত দিয়ে চলেছে তাতে তারা একেবারেই নিরুপায়।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলের কথায়, প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন তিনি কিন্তু খুব উৎসাহের সঙ্গেই কাঠমান্ডুর সার্ক সামিটে অংশ নিয়েছিলেন।

কিন্তু যেভাবে সীমান্তের অন্য পার থেকে সন্ত্রাসবাদে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। এই অঞ্চলে একটি শক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে সার্কের উদ্যোগ নিয়ে এগোনো আমাদের পক্ষে খুবই কঠিন।

সার্কের দরজা আপাতত বন্ধ করে দিয়ে ভারত যে বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে বিমস্টেক জোট কিংবা বাংলাদেশ-ভুটান-নেপালকে নিয়ে বিবিআইএনে-ই বেশি সম্ভাবনা দেখছে, সেটাও কোনও গোপন কথা নয়।

তবে দিল্লির থিঙ্কট্যাঙ্ক অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো জয়িতা ভট্টাচার্য মনে করেন, এগুলো ঠিক সার্কের বিকল্প নয় - বরং পরিপূরক।

আমি মনে করি আমাদের ন্যারেটিভটা বদলানোর প্রয়োজন আছে। বিমস্টেক বা বিবিআইএন-কে সার্কের পরিপূরক হিসেবে দেখা দরকার আর সে রাস্তাতেই এখন এগোনো উচিত।

তবে সার্ক এখন হচ্ছে না মানে আর কোনও দিনই হবে না এমনটা কিন্তু বলা যায় না। বড়জোর বলতে পারি সার্ক সাসপেনশনে আছে - কারণ জিওপলিটিক্স নিয়ত বদলাতে থাকে, একটা সহযোগিতা জোট চিরতরে পরিত্যক্ত বলাটা ঠিক নয়!

কিন্তু দুবছর আগে পাকিস্তানে সার্ক সামিট বয়কটের প্রশ্নে যেভাবে বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কাও ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছিল - জোটের সদস্য দেশগুলোর সেই অবস্থান কি এখনও অক্ষুণ্ণ থাকবে?

জয়িতা ভট্টাচার্য বলছেন, দেখুন, সন্ত্রাসবাদের ভুক্তভোগী এই দেশগুলো সবাই। কাজেই প্রশ্নটা যেখানে সন্ত্রাসবাদের, আমার ধারণা ভারতের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে - কারণ এটা এমন একটা ইস্যু, যা থেকে তাদের সরে আসার আমি কোনও কারণ দেখি না।

একই রকম আশার সুর শোনা গেছে ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিবের কন্ঠেও, যখন তিনি জানান নেপালের প্রধানমন্ত্রীও কিন্তু তার দেশে এ বছরেই বিমস্টেক শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন।

কিন্তু বিমস্টেক কিছুটা সফল হলেও তাতে সার্ক চিরতরে মুছে যাবে - এমনটা মনে করেন না রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও অধ্যাপক ইমনকল্যাণ লাহিড়ী।

আমরা বলি, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনও ফুলস্টপ হয় না, হয় শুধু কমা। সুতরাং সার্কের ক্ষেত্রেও সেটা সত্যি। মনে রাখতে হবে, পাকিস্তান দেশটা আমাদের পশ্চিম সীমান্তে থাকবেই, আর তাদের সঙ্গে আজ না-হয় কাল আলোচনাও চালাতে হবে। এই দুটো দেশের বিদেশনীতিও একে অন্যকে ছাড়া সম্পূর্ণ হতে পারে না।

আর তা ছাড়া বিবিআইএন দেখুন, সেখানে ভুটানে আপত্তি জানিয়েছে মোটর ভেহিক্যালস এগ্রিমেন্টে, তাই সেটা কার্যত বিআইএন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিমস্টেকেও মোরেহ-তামু কিংবা অন্যান্য সীমান্ত চৌকিতে যে বাণিজ্য হচ্ছে তা একেবারে নগণ্য, বলছিলেন অধ্যাপক লাহিড়ী।

সোজা কথায়, সার্ক নিয়ে ভারত নিরুৎসাহী হয়ে পড়লেও তার অন্য বিকল্পগুলোও যে দারুণ সাড়া ফেলতে পারছে তা মোটেও নয়। আর ঠিক এ কারণেই ভারতে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সার্ক এখনও মারা যায়নি - কিন্তু কোমায় আছে।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর