আজ ঘোষণা হতে পারে ‘গাজীপুর মহানগরী পুলিশ’

প্রতীকী ছবি

আজ ঘোষণা হতে পারে ‘গাজীপুর মহানগরী পুলিশ’

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনের ষষ্ঠ দিনে বুধবার বিকেল পাঁচটায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন ‘গাজীপুর মহানগরী পুলিশ বিল, ২০১৮’ উপস্থাপন এবং বিল পাসের প্রস্তাব করবেন। দিনের কার্যসূচির মধ্যে আইন-প্রণয়ন কার্যাবলীর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এটি।

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয় লেজিসলেটিভ সাপোর্ট উইং আইন শাখা-১ সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন গাজীপুর মহানগরী এলাকার জন্য একটি স্বতন্ত্র পুলিশ বাহিনী গঠন এবং উহার পরিচালনার নিমিত্ত বিধান প্রণয়নকল্পে আনীত বিলটি স্থায়ী কমিটি কর্তৃক সুপারিশকৃত আকারে অবিলম্বে বিবেচনার জন্য উত্থাপন করবেন। পরে তিনি বিলটি পাস করার প্রস্তাব করবেন।

এর আগে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সাংবাদিকতা বিষয়ে পেশাগত প্রশিক্ষণ, সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা ও ডিগ্রি কোর্স পরিচালনা, গবেষণা ও প্রকাশনা, সম্মাননা প্রদান এবং সাংবাদিকতা পেশার উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি এবং যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট বিল, ২০১৮’ উত্থাপনের অনুমতি চাইবেন। অনুমতি পেলে বিলটির পরীক্ষাপূর্বক রিপোর্ট প্রদানের জন্য ‘তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি’তে প্রেরণের আহ্বান জানাবেন।

এর আগে অধিবেশনের চতুর্থ দিনে (৯ এপ্রিল) ‘গাজীপুর মহানগরী পুলিশ বিল, ২০১৮’-এর ওপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট সংসদে উপস্থাপন করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি টিপু মুনশি ও সদস্য শামসুল হক টুকু। পরে বিলটি সংশোধিত আকারে পাসের প্রস্তাব করা হয়।

গাজীপুর মহানগরীর জন্য স্বতন্ত্র পুলিশ বাহিনী গঠনের প্রস্তাব করে গত ১১ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিলটি উত্থাপন করেন। বিলে গাজীপুর মহানগরী এলাকায় ফৌজদারি বিচার কার্য পরিচালনায় মেট্রোপলিটন আদালত স্থাপন না হওয়া পর্যন্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিচারিক দায়িত্বে থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়।

বিলে বাহিনী গঠন, বাহিনীর তত্ত্বাবধান, পুলিশ কমিশনার নিয়োগ, অধঃস্তন পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগ, বদলি, সহায়ক কর্মকর্তা নিয়োগ, বাহিনীর প্রশাসন, অধঃস্তন পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তি, পুলিশ কর্মকর্তার ক্ষমতা ও কর্তব্য, জনগণ ও গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের প্রতি পুলিশ কর্মকর্তার কর্তব্য, রাস্তায় পুলিশ কর্মকর্তার কর্তব্য, পুলিশ কর্মকর্তার আইন-সঙ্গত নির্দেশ মানা, নির্দেশ কার্যকর করায় পুলিশ কর্মকর্তার ক্ষমতা, তথ্য সরবরাহের ক্ষমতা, সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে রাস্তায় তল্লাশির ক্ষমতা, বেওয়ারিশ সম্পত্তির দায়িত্ব গ্রহণ ও বিলিবন্টন, অসুস্থ ও অক্ষম জীবজন্তু নিধন, পরিমাপযন্ত্র ও দাঁড়িপাল্লা তল্লাশি, পরীক্ষা ও আটকসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধানের প্রস্তাব করা হয়।

এছাড়া বিলে পুলিশ কমিশনারের ক্ষমতা, জনসাধারণকে নির্দেশ প্রদানের ক্ষমতা, বিশৃঙ্খলা রোধ, জনস্বার্থে জনসমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধকরণ, গান-বাজনা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ, দাঙ্গা বন্ধ করা, চিত্তবিনোদনের স্থান ও জনসভায় গোলযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, জননিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ, কতিপয় অপরাধের জন্য দণ্ড ভোগকারী ব্যক্তির অপসারণ, অপরাধ, দণ্ড ও কার্যপদ্ধতি, বিনা পরোয়নায় গ্রেফতারসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধানের প্রস্তাব করা হয়।

দেশে বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনায় মেট্রোপলিটন পুলিশ ইউনিট রয়েছে। গাজীপুর সপ্তম মেট্রোপলিটন হিসেবে যাত্রা শুরু করবে। জিএমপিতে বর্তমানে গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় থাকা জয়দেবপুর ও টঙ্গী থানা এবং কোনাবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ি, ভোগড়া ও পূবাইল পুলিশ ক্যাম্প এলাকা নিয়ে মোট ১০টি থানা করার প্রস্তাব রয়েছে।

প্রস্তাবিত জিএমপি’র নতুন থানাগুলোর নাম হবে-জয়দেবপুর থানা, সালনা থানা, চৌরাস্তা থানা, কোনাবাড়ী থানা, মৌচাক থানা, কাশিমপুর থানা,  বোর্ডবাজার থানা, মীরেরবাজার থানা, টঙ্গী পূর্ব-থানা ও টঙ্গী পশ্চিম থানা।

গাজীপুর মেট্রোপলিটনের প্রধান উপ-মহাপরিদর্শকসহ (ডিআইজি) বিভিন্ন পদমর্যাদার মোট আট হাজার ২শ’ ২৬ জনবলের প্রস্তাব করা হয়েছে। গাড়ি চাওয়া হয়েছে ১ হাজার ২শ’ ১৭টি। এর মধ্যে ২৬৫টি ক্যাডার পদ। যেখানে ডিআইজি পদবির একজন দায়িত্ব পালন করবেন কমিশনার হিসেবে। তিনজন অতিরিক্ত ডিআইজি, এসপি পদ মর্যাদার ২১ জন ডিসি (ডেপুটি পুলিশ কমিশনার), এডিসি ৪৯ জন ও এএসপি ১৯১ জনের পদ সৃষ্টির প্রস্তাব রয়েছে। এ ছাড়া মেট্রোপলিটন হওয়ার পরও গাজীপুর জেলা পুলিশ বিদ্যমান থাকবে। এতে বছরে খরচ হবে ১শ’ ৮৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। বর্তমানে গাজীপুর জেলায় পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার প্রায় ১ হাজার ২শ’ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য রয়েছেন।

গাজীপুর ও টঙ্গী পৌরসভা এলাকার ৩২৯ দশমিক ৯০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি গাজীপুর সিটি করপোরেশন যাত্রা করে। এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে দু’টি গবেষণা প্রতিষ্ঠান।

এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইইউটি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট, সমরাস্ত্র কারখানা, সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (টাকশাল), বাংলাদেশ কৃষি ও ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট, টেলিযোগাযোগ স্টাফ কলেজ, কিশোর ও কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্র, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার, জেলা কারাগার, টেলিফোন শিল্প সংস্থা, দু’টি রেলওয়ে জংশন, তিনটি রেলওয়ে স্টেশন, একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ, তিনটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও কয়েকটি সরকারি হাসপাতাল।  

এছাড়া অসংখ্য গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিসহ বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বর্তমানে এই মহানগরের জনসংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। এছাড়া মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার টঙ্গীতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

সম্পর্কিত খবর