নদে পুকুর খনন!

নদে পুকুর খনন!

হুমকির মুখে ইরি ধান ও রবি শস্য
নাসিম উদ্দীন • নাটোর প্রতিনিধি

‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে' কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত এই কবিতার উৎস নাটোরের সিংড়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নাগর নদ। এ নদের অস্তিত্ব বিলীন হতে চলেছে অবৈধ দখলদার আর ভূমি দস্যুদের কালো থাবায়। নিয়মিত ড্রেজিং না করা, নদী জুড়ে পুকুর খনন ও বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত এই নদী আজ বিপন্ন প্রায়।  

নদীতে বাঁধের কারণে গত কয়েক দিনের বর্ষণ ও ঢলের পানি চলনবিলে ঢুকে পড়ায় হুমকির মুখে রয়েছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির আধাপাকা ইরি ধানসহ বিভিন্ন রবি শস্য।

বাঁধগুলো তাই অপসারণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।  

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, ভূমি দস্যুদের অবৈধ দখলের কারণে সেই নাগর নদ ও তার তৎসংলগ্ন গুড়-আত্রাই নদীর ঐতিহ্য ও গতি প্রবাহ হারিয়ে যেতে বসেছে। ভূমি দস্যুরা সিংড়া উপজেলার জয়নগর তাজপুর গ্রাম থেকে সারদানগর ফার্ম পর্যন্ত নাগর নদ দখল করে অর্ধ শতাধিক পুকুর ও নদের বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে।  

news24bd.tv

সম্প্রতি খরসতি গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি আলহাজ্ব ইদ্রিস আলী ও শামসুল ইসলাম ওরফে কালু সাদনগর এলাকায় নাগর নদ জুড়ে চারটি বিশাল বাঁধ নির্মাণ করেছেন।

এতে নদে নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়া গেল কয়েক দিনের বর্ষণ ও ঢলের পানি নামতে না দেয়ায় ধর্মপুর, বাশারনগর, ভুলবাড়িয়া এলাকার বিভিন্ন ভাঙ্গন দিয়ে ঢুকে চলনবিলে কয়েক হাজার হেক্টর জমির আধা-পাকা ইরি ধানসহ বিভিন্ন রবি শস্য হুমকির মুখে পড়েছে।

সরেজমিনে নাগর নদের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদ জুড়ে পুকুর খনন ও অবৈধ বাঁধ নির্মাণের কারণে নদীর পানি ধর্মপুর ও বাশারনগর এলাকার ভাঙ্গন দিয়ে বিলে পানি ঢুকছে। আর কৃষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণ করে ফসল রক্ষার চেষ্টা করছে।  

বাঁধে কর্মরত কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান, নজরুল ইসলাম ও ফজলুর রহমান বলেন, কিছু অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ীদের কারণে প্রতি বছরই এই ভাঙ্গন দিয়ে পানি ঢুকে ক্ষতিগ্রস্থ হয় চলনবিলের প্রায় লক্ষাধিক কৃষক। তাছাড়া নদীতে লক্ষ লক্ষ ঘনমিটার পলি পড়ে ও অবৈধভাবে পুকুর খননের কারণে এই নদী নাব্যতা হারিয়ে ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। তারা এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের সহযোগিতা কামনা করেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আলহাজ্ব ইদ্রিস আলী বলেন, জয়নগর থেকে সারদানগর ফার্ম পর্যন্ত নাগর নদে প্রায় শতাধিক পুকুর রয়েছে। তার শুধু একটিই পুকুর। আর পানি প্রবাহের জন্য বাঁধের কিছু অংশ খুলে দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে তিনি ভেকু গাড়ি দিয়ে আরো মাটি সরিয়ে দিবেন বলে জানান।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিনহাজ উদ্দিন জানান, এ বিষয়ে প্রভাবশালীদের নিষেধ করা হয়েছে। বাঁধ নির্মান বন্ধ রয়েছে। তবে অপসারণ না করলে সমাধান হবে না। কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে।  

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সন্দ্বীপ কুমার সরকার জানান, এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে এবং পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পুকুর খনন বন্ধ করা হয়েছে।

নাসিম/অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর


 

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর