সরকারি দপ্তরের টয়লেটগুলোর এ কী হাল!

সরকারি দপ্তরের টয়লেটগুলোর এ কী হাল!

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

একবার ঢুকলে বোধহয় দ্বিতীয়বার ঢুকতে চাইবেন না কেউ। অনেকে তো এর দিকে তাকাতেই ঘৃণায় বমি করতে শুরু করেন। খুলনার অধিকাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের টয়লেটগুলোর এখন এমনই জীর্ণ অবস্থা। এ নিয়ে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ অন্ত নেই।

এরপরেও শৌচাগারগুলোকে ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে কোনো উদ্দ্যোগই গ্রহণ করছে না কর্তৃপক্ষ।

বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টয়লেটের অবস্থা খুবই নাজুক। কোনটির দরজা থাকলেও সিটকানি নেই। আবার দরজা ঠিক থাকলেও ভিতরে পানির ব্যবস্থা নেই।

আবার অনেক জায়গায় দরজা ও ট্যাপ ঠিক থাকলেও বদনার খবর নেই।  

কোনো কোনো টয়লেটের সবকিছু ঠিক থাকলেও ভেতরটা এতোটাই নোংরা আর দুর্গন্ধময় যে, নাকে রুমাল চেপে কেটে পড়তে হয়। অনেক শৌচাগারে মলমূত্র এমনভাবে স্তূপ হয়ে আছে যে ভেতরে যাওয়া তো দূরের কথা, আশপাশ দিয়ে যাওয়াই দুষ্কর।

আবার কিছু টয়লেট বছরের পর বছর পরিস্কার না করায় শেওলা জমে গেছে। এতে করে টয়লেটে পা পিছলে পড়ে যাওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটছে।   

সরকারি বি. এল. কলেজ, খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, আযম খান সরকারি কমার্স কলেজ, খুলনার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, খুলনা সদর হাসপাতালের টয়লেটগুলোর এমনই নাজুক  অবস্থা।  

খুলনার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের প্রায় সব ওয়ার্ডের টয়লেট অস্বাস্থ্যকর। স্বাস্থ্যসেবা প্রদান প্রতিষ্ঠানে অস্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যাবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসলেও এগুলো ব্যবহার উপযোগী করতে বিন্দুমাত্র পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের টয়লেটের দরজা ভাঙ্গা, পানির ট্যাপ নষ্ট, আলোর ব্যবস্থা আছে কিন্তু বাল্ব নাই অথবা তার ছিঁড়ে গেছে, নয়তো সুইচ নষ্ট। হাসপাতালের অনেক বাথরুমের দরজা ভাঙা ও সিটকিনি না থাকায় রোগীদের বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে নারীরা  বেশি ঝামেলায় পড়ছেন।

এ ব্যাপারে কথা বলতে সিভিল সার্জন ডা. এস এম আব্দুর রাজ্জাকের কক্ষে যাওয়া হয়। কিন্তু অফিসে না থাকায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের টয়লেটে খুব বেশি প্রয়োজন না পড়লে কোন শিক্ষার্থী ঢুকে না। কারণ টয়লেটগুলো খুবই নোংরা এবং ব্যবহারের অনুপযোগী।

সরকারি বি. এল. কলেজে বিকল্প উপায় না দেখে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিচ্ছেন শহীদ তিতুমীর হল, হাজী মহসিন হল, ড. জোহা হল, কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল, সুবোধ চন্দ্র হল ও মেয়েদের মন্নুজান হল, খালেদা জিয়া হলের শিক্ষার্থীরা। হলগুলোতে থাকে প্রায় ছয়শ শিক্ষার্থী। তাদের শঙ্কা, যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

খুলনা রেলস্টেশনের শোভন শ্রেণীর বিশ্রামাগারের টয়লেটে গিয়ে হাস্যকর একটি দৃশ্য চোখে পড়ে। সেখানে টয়লেট একটা আছে। কিন্তু ভেতরে বদনার বদলে পানির বোতল ব্যবহার করা হচ্ছে।  

এ ব্যাপারে স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার বলেন, বদনা দিলে চুরি হয়ে যায়। সিসি ক্যামেরা থাকার পরেও চুরি হয় কিভাবে এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন তিনি।

অনুসন্ধানকালে ভিন্ন চিত্রও লক্ষ্য করা যায়। গণ টয়লেটের নাজুক অবস্থা হলেও উল্লিখিত দপ্তরের কর্মকর্তাদের জন্য নির্ধারিত টয়লেট ঝকঝকে। ওইসব টয়লেটে নিম্নপদস্থ কর্মচারী ও সেবা গ্রহণকারীদের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। তারা সেখানে যেতে পারেন না। একই দপ্তরে দু'ধরনের টয়লেট ব্যবস্থা থাকায় অনেকের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন অনেক কর্মচারীও। তারা স্বাস্থ্যকর টয়লেট নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর