দৈহিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে নামি স্কুলের ছাত্রীরা

প্রতীকী ছবি

দৈহিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে নামি স্কুলের ছাত্রীরা

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

মাদক ও অবৈধ দৈহিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন কলকাতার নামিদামি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থীরা। আর এমন কাজে নামাতে হতাশায় ভোগা ধনী ঘরের সন্তানদের টার্গেট করছে বিভিন্ন চক্র। সম্প্রতি একটি চক্রের মূল হোতাসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে ভারতের নারকোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরো-এনসিবি।

যাদের আটক করা হয়েছে তাদের অধিকাংশেরই পারিবারিক বন্ধন খুবই দুর্বল।

মা-বাবার মধ্যে হয়ে গেছে বিচ্ছেদ। কারও আবার বাবা-মায়ের মধ্যে সম্পর্ক বহাল থাকলেও তা নামমাত্র। তারা সর্বদা ব্যস্ত নিজ নিজ গণ্ডি নিয়ে। ফলে অস্থির পারিবারিক পরিবেশে বড় হয়ে টিন-এজ সন্তানটি কখন যে পা বাড়িয়েছে বিপথে তা আর জানা হয়নি।
 

আটকদের মধ্যে দুই তরুণীও রয়েছেন। তারা কলকাতার একটি নামি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সাবেক ছাত্রী। আটকদের কাছ থেকে ১৯টি এলএসডি ব্লট ও আড়াই কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা।

তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, মূলত ধনী পরিবারের ছাত্রছাত্রীরাই এই মাদকের মূল ক্রেতা। গ্রেপ্তারের পর ওই চারজনকে মঙ্গলবার আলিপুর আদালতে পেশ করা হয়।

গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে ধরা পড়া চক্রটির সদস্যরা জানিয়েছেন, তারা মাদক সরবরাহের পাশাপাশি কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ‘এসকর্ট সার্ভিস’ব্যবসাও করতেন। আর এ থেকে আয় করতেন মোটা অংকের অর্থ।  

বেশ কয়েক বছর ধরেই কলকাতার অভিজাত পার্টিগুলোতে মাদক ব্যবহার ও অবৈধ যৌনাচারের অভিযোগ উঠছে।  

গোয়েন্দারা জানান, তাদের জালে ধরা পড়েছেন দিব্যেন্দু রায় নামে এক তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী ও সঙ্গী প্রশান্ত বাসনেট। গোয়েন্দাদের দাবি, দিব্যেন্দুই ছিলেন এই চক্রের প্রধান। বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতা শহরে এলএসডি, এমডিএমএর মতো পার্টি ড্রাগ আমদানি করতেন দিব্যেন্দু।

কলকাতার অভিজাত পার্টিতে মাদক পাচারের দায়ে ধরা পড়া কণিকাকে (নাম পরিবর্তিত) জেরা করে হতভম্ব হয়ে গেছেন গোয়েন্দারা।

কণিকার বয়স মাত্র ১৯ বছর। কিন্তু মাসে রোজগার কমপক্ষে তিন লাখ টাকা। কণিকাকে জেরা করে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, অভিজাত পার্টিতে মাদকের সঙ্গে যৌন সম্পর্কও করতেন তিনি।

শুধু কলকাতার অভিজাত পার্টি সার্কেল নয়, কণিকার পসরা পৌঁছত দিল্লি, রাঁচি ও খড়গপুরেও। আর তিনি এ কাজ নিয়মিত করতেন।

ব্যবসায়ী, শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মাঝারি মাপের অভিনেতারাও রয়েছেন কণিকার মক্কেলের তালিকায়।

দীর্ঘ দিন ধরেই গোয়েন্দাদের সন্দেহ ছিল, শহরের মাদক চক্রের সঙ্গে 'এসকর্ট সার্ভিস' (অর্থের বিনিময়ে যৌনকর্ম)  -এর যোগাযোগ রয়েছে। গত কয়েক মাসে কলকাতায় পার্টি ড্রাগ সরবরাহকারী তিনটি আলাদা গ্রুপকে গ্রেপ্তার করেছে এনসিবি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সেই সন্দেহের সত্যতা পেয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

কণিকা ও তার এক বান্ধবী নাতাশাকে (নাম পরিবর্তিত) গ্রেপ্তারের পর মাদক-এসকর্ট যোগাযোগের তথ্য বেরিয়ে আসে।

ট্যাংরায় বিবাহবিচ্ছিন্ন মাকে নিয়ে থাকেন কণিকা। একসময় কলকাতারই একটি নামি স্কুলের ছাত্রী ছিলেন তিনি। সেখানেই আলাপ হয় নাতাশার সঙ্গে। কাশ্মীরে জন্ম নেওয়া নাতাশা বড় হয়েছেন বেলগাছিয়াতে। ছোটবেলায় তার বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। বন্ধুদের হাত ধরে ধীরে ধীরে মাদকে জড়িয়ে পড়েন নাতাশা। তার বাবা-মা দুজনেই বিউটি পার্লারের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। দুজনের কাছ থেকেই তিনি টাকা পান। তাই নাতাশার পকেটমানির অভাব ছিল না কখনো। এলএসডি, এমডিএমের মতো পার্টি ড্রাগ নিতে নিতে ধীরে ধীরে তিনি জড়িয়ে যান মাদক ব্যবসায়।

প্রথমে নাতাশাকেই টার্গেট করে গোয়েন্দারা। তাকে ধরেই সন্ধান মেলে কণিকার।

জেরায় নাতাশা জানান, পাঁচতারা হোটেল, আলিপুরের পার্টিতে এসকর্ট হিসেবে যাতায়াত ছিল তার। সেসব জায়গায় পৌঁছে দিতেন মাদক। কয়েকটি ডেটিং সাইটের মাধ্যমে নতুন মক্কেলদের কাছেও যেতেন তিনি। মাদক বিক্রির লাভের পাশাপাশি এসকর্ট হিসেবে প্রতি রাতে নাতাশার উপার্জন ছিল ২০ হাজার রুপি।

তবে এসকর্টের ব্যবসার পুরোটাই কনিকা নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে জানান নাতাশা।

কণিকা-নাতাশাকে জেরা করে আরও একটি বিষয়ে নিশ্চিত হন গোয়েন্দারা। কলকাতার বিভিন্ন নামি স্কুল-কলেজের বর্তমান ও সাবেক কিছু ছাত্রছাত্রী রয়েছে এই মাদক ক্রেতাদের মধ্যে প্রথম সারিতে।

গ্রেপ্তার দুই তরুণীর কাছ থেকেই সন্ধান মেলে চক্রের মূল পাণ্ডা লেকটাউনের বাসিন্দা দিব্যেন্দু রায়ের। তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী দিব্যেন্দু বেঙ্গালুরু থেকে এই মাদক আনতেন। এর পর তার সঙ্গী প্রশান্ত বাসনেট এবং বাকিদের মাধ্যমে পৌঁছে দিতেন বিভিন্ন পার্টিতে। ২০১৫ সালে বেঙ্গালুরু থাকাকালীন মাদক পাচার করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন দিব্যেন্দু।

জানা গেছে, গ্রেপ্তারদের সবারই একটি বিষয়ে মিল আছে। প্রত্যেকেরই বাবা-মা বিবাহবিচ্ছিন্ন। পারিবারিক এই কারণ কি এই তরুণ-তরুণীদের মাদক ও অবাধ যৌনতার অন্ধকার কক্ষে ঠেলে দিচ্ছে কিনা তা উড়িয়ে দেননি গোয়েন্দারা। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা।

সম্পর্কিত খবর