প্রশ্নের মুখে ঢাবি প্রশাসন

প্রশ্নের মুখে ঢাবি প্রশাসন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হল থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সম্পৃক্ত কয়েকজন ছাত্রীকে বের করে দেওয়ার ঘটনায় ফের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে। নানা প্রশ্নের মুখে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ঢাবি উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান দাবি করেছেন, ফেসবুকে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে তাদের হল থেকে বের করে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে, ফেসবুক থেকে গুজব রটানোর বিষয়টি তদন্তাধীন আছে।

এ অবস্থায় ছাত্রীদের হল থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়টি কতটা যৌক্তিক। কেউ কেউ বলছেন, দিনের জন্য অপেক্ষা না করে রাতের আঁধারে কেন এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের প্রতিহিংসামূলক আচরণ এবং ক্ষমতাসীনদের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাবির নগ্ন অবস্থান দৃশ্যমান হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। এর ফলে নিজেদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই অনিরাপদ বোধ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

হল থেকে শিক্ষার্থী বের করে দেওয়ার প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বের করে দেওয়া ছাত্রীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হলে ফিরিয়ে আনার আল্টিমেটাম দিয়েছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে আসা সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা। তারা বলেছেন, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ছাত্রীদের হলে না ফেরালে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।

শুক্রবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এই হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্ট সাবিতা রেজওয়ানা রহমানের পদত্যাগের দাবিও জানিয়েছেন তারা।

এদিকে অনেকের মতে, কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই পুরো আন্দোলনকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার কৌশলে হাঁটছে ক্ষমতাসীন দল, দলটির ছাত্র সংগঠনসহ বিভিন্ন মহল। বিশেষ করে আন্দোলনের শুরুর দিন পুলিশের বেপরোয়া হামলা এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের মারমুখী অবস্থান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে অহেতুক সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চলেছে বলে অভিযোগ ওঠে নানা জায়গা থেকে। আন্দোলন চলাকালীন ঢাবির বিভিন্ন আবাসিক হলে আন্দোলনের কর্মীদের মারধর, ক্যাম্পাসে সশস্ত্র মহড়া, হুমকি-ধামকিসহ বিভিন্ন অভিযোগ এসেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগেরই অনেক নেতাকর্মী প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতিও প্রকাশ করেছেন। কিন্তু সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রী নির্যাতনের অভিযোগে বহিষ্কার হওয়া ছাত্রলীগ নেত্রী ইফফাত জাহান এশার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পর পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকে। ক্যাম্পাসের চারদিকে ছাত্রলীগের প্রহরা এবং শোডাউন সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধীরে ধীরে আতঙ্ক বাড়াতে থাকে।

গত ১৬ এপ্রিল (সোমবার) বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের তিন নেতাকে ডিবি অফিসে তুলে নেওয়ার পর এ আতঙ্ক আরও গভীর হয়। ওইদিনের ঘটনার পর থেকে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে দাবি করেছেন আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে হলে হলে আন্দোলনকারীদের তালিকা তৈরিতে ছাত্রলীগের তৎপরতা, বিভিন্ন জায়গা থেকে হুমকি-ধামকি, যেকোনো সময় মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কা ইত্যাদি কারণে প্রতি মুহূর্তে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের।

অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর