পদ্মা সেতুকে ঘিরে বদলে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের চিত্র

বদলে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের চিত্র

পদ্মা সেতুকে ঘিরে বদলে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের চিত্র

বেলাল রিজভী,মাদারীপুর

পদ্মা সেতুকে ঘিরে বদলে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলো চিত্র। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে পদ্মাপাড়ের গড়ে উঠছে বিভিন্ন স্থাপনা। যে চরাঞ্চল ছিল জনবিচ্ছিন্ন, ছিলো না বিদ্যুৎ। সেই জনবিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল শিবচরসহ গোটা মাদারীপুর জুড়ে চলছে দেশের মেগা সব প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা।

এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বদলে যাবে দক্ষিণাঞ্চলের চিত্র। বদলে যাবে দেশের অর্থসামাজিক চিত্র।

 শুধু পদ্মা সেতুর কাজই এগিয়ে চলছে না, সাথে সেতুকে ঘিরে পদ্মা পাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকার মানও পরিবর্তন করার চেষ্টা চলছে। হাতে নেয়া হয়েছে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে মেগা প্রকল্প।

দক্ষিণের জেলা মাদারীপুরে এসব মেগা প্রকল্পের জন্যে অধিগ্রহণ করা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার একর জমি। এরই মধ্যে কয়েকটি প্রকল্পে কাজ দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।

এতে আশান্বিত সাধারণ মানুষ, দুঃখ ঘুচবে নিন্মঞ্চলের মানুষের। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বদলে যাবে দক্ষিণাঞ্চলের চিত্র। এছাড়া বেসরকারী উদ্যোগে বিভিন্ন কলকারখানা গড়ে তোলার জন্য জমি ক্রয় করছে বিভিন্ন বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান। এতে করে এই অঞ্চলে কর্মসংস্থান বাড়বে। কমবে বেকারত্ব। অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সোনালী দিনের স্বপ্ন দেখছে এসব প্রকল্প ঘিরে।

সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুরে ৭০ একর জায়াগায় দেশের প্রথম ইনফরমেশন টেকনোলজি ইনষ্টিটিউট ও হাইটেক পার্ক নির্মাণের জন্য ভুমি অধিগ্রহণের চিঠি দিয়েছে মন্ত্রনালয়। একই ইউনিয়নে ১শ ৮ একর জমিতে বেনারসি পল্লী নির্মানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নির্মানের জন্য ১৫ একর জমি অধিগ্রহন ভুমি মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে।   পরিকল্পিত শহরায়নের জন্য ৭৫০ একর জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে শিবচরে।

এখানে দাদা ভাই উপশহর নামে পরিকল্পিত শহরায়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায় রয়েছে। এছাড়া বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে ৮ কিলোমিটার লম্বা ও ৫ কিলোমিটার প্রস্থের বিমানবন্দর নির্মানের সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। চরাঞ্চলের চরজানাজাতে অলিম্পিক ভিলেজ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। চরজানাজাতে এক হাজার একর জমিতে মাটি ভরাট করা হচ্ছে অলিম্পিক ভিলেজ নির্মানের পরিকল্পনা নিয়ে। সেখানে ৭টি স্টেডিয়াম থাকবে বলে জানা গেছে।

news24bd.tv

এসব স্টেডিয়ামগুলো হবে আন্তর্জাতিক মানের সুবিধা সম্পন্ন। পাশেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সিটি নির্মানের জন্য গৃহায়ন মন্ত্রনালয় থেকে ১২ শ একর জমি শনাক্ত করেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল সড়ক হচ্ছে পদ্মা সেতুকে ঘিরেই। পদ্মাসেতুর দুই পাড়ে ৫৫ কিলোমিটার ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কে এই সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৯৬২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। চারলেন সড়ক নির্মাণের পাশাপাশি স্থানীয় যানবাহনরে জন্য নির্মাণ করা হবে আরো দুই লেন সড়ক। এতে প্রতি কিলোমিটার ব্যয় ১০৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এর নির্মাণ কাজ শুরু চলছে দ্রুত গতিতে।

দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনকিায়নে জন্য যাত্রাবাড়ি উড়াল সেতুর ঢাল থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া হয়ে পদ্মার দক্ষিণপারের মাদারীপুরের শিবচর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত মোট ৫৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চারলেন বিশিষ্ট দেশের প্রথম এক্সপ্রেস ওয়ে প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়। এর মধ্যে পদ্মার উত্তরপাড়ে ২৫কিলোমিটার এবং পদ্মার দক্ষিণপাড়ের মাদারীপুরের শিবচরে ৯ কিলোমিটার এবং ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ২১ কিলোমিটার সড়ক নির্মিত হচ্ছে।

 রাজধানী ঢাকা  এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রী ও পন্যপরিবহণ নিরাপদ, সময় সাশ্রয়ী ও আরামদায়ক করার লক্ষ্যে বাংলাাদশে সরকাররে নিজস্ব র্অথায়নে এই সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। ভবষিৎতে এই সড়কের ব্যবহার করে মেট্রারেল নির্মাণের পরকিল্পনার রয়েছে সরকারের। পদ্মা সেতুর কাজের সাথে সাথেই সম্পন্ন হবে এই সড়কের কাজ।   বিমানবন্দর নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে শিবচরের ২টি স্থান। পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক, সার্ভিস এরিয়া, পুর্ন:বাসন প্রকল্প নির্মান শেষে মূল সেতুর কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। এছাড়া মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায় ইকোনোমিক জোন নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজও চলমান রয়েছে।

মাদারীপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রাজন মাহমুদ বলেন, বেসরকারী উদ্যেগে বিভিন্ন কলকারখানা নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। এই অঞ্চলে কর্মসংস্থান বাড়বে। কমবে বেকারত্ব। অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সোনালী দিনের স্বপ্ন দেখছে এসব প্রকল্প ঘিরে। তবে আমাদের এই অঞ্চলে গ্যাসের সংযোগ নেই। গ্যাসের সংযোগ না থাকলে কলকারখানা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবী উন্নয়ন প্রকল্পের সাথে সাথেই যেন গ্যাস সংযোগের ব্যবস্থা করে।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওহিদুল ইসলাম বলেন, এরই মধ্যে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের জন্যে ২০১২ থেকে এই পর্যন্ত নানা সময়ে প্রায় ৫ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কিছু প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আগামীতে এসব প্রকল্প চলমান থাকলে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে মাদারীপুর। বদলে যাবে দক্ষিণাঞ্চলের চিত্র।

মাদারীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিয়াজউদ্দিন খান বলেন, সেতুকে ঘিরে চলমান মেঘা প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে দক্ষিণাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক চিত্র বদলে যাবে। এখান থেকে মংলা বন্দর এবং পয়রা বন্দরের নিকটে হওয়ায় গড়ে উঠবে কলকারখানা। বাড়বে কর্মসংস্থান। ব্যবসা বানিজ্যের ক্ষেত্র।

 

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/কেআই)

সম্পর্কিত খবর