অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ হত্যা: ভয়ে মুখ খুলছে না নিহতের পরিবার

অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ হত্যা: ভয়ে মুখ খুলছে না নিহতের পরিবার

ফেনী প্রতিনিধি

ফেনীর দাগনভূঞায় গৃহবধূ শারমিনকে গুলি করে হত্যা ঘটনায় ঘাতক সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীরের ভয়ে মুখ খুলছে না নিহতের পরিবার। উপজেলার পূর্ব চন্দ্রপুর ইউনিয়নের নয়নপুর ভূইয়া বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শোকে মূহ্যমান নিহতের মা, বাবা, ভাই, বোন ও প্রতিবেশিরা। তারা আগের দিন দুপুরে পাশের ঘরের জাহাঙ্গীর পিস্তল দিয়ে শারমিনকে গুলি করে খুন করে স্বপরিবারে পালানোর কথা জানালেও হত্যাকারীর ভয়ে বেশি কিছু বলছে না। এদিকে, নিহতের মা আলেয়া বাদী হয়ে ঘাতক সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীরকে প্রধান আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন।

নিহতের বাড়িতে কথা বলার সময় জাহাঙ্গীরের নির্যাতনের শিকার পাশের বাড়ির বিবি মরিয়ম উচ্চস্বরে বলে ওঠেন, সে একটা শয়তান। প্রায় তিন মাস আগে সে আমাকে ও আমার মেয়ে কামরুন নাহারকে মারধর করে নির্যাতন করেছে। এজন্য আমি ফেনী মডেল থানায় তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা করেছি। মামলা এখনো চলছে।

এদিকে, এলাকাবাসী ও পাশ্ববর্তী মৌলবীবাজারের স্থানীয় লোকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী, খুনী ও নারীলিপ্সু জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সে এর আগেও ওই পিস্তল উঁচিয়ে মানুষকে ভয় দেখাতো। এছাড়া বিভিন্ন সময় নারীসহ এলাকাবাসীর হাতে ধরা পড়ে জরিমানা দেয়। তারা খুনি ও সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীরের ফাঁসির দাবি জানান। মূলত কী কারণে ৮ মাস আগে বিবাহিতা শারমিন বাবার বাড়িতে এসে খুন হল তার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় জয়নাল আবেদিন জানিয়েছে, এ রকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড গত ৫০ বছরেও আমাদের এলাকায় ঘটেনি। চিহ্নিত নারীলিপ্সু জাহাঙ্গীর কী কারণে ওই নারীকে খুন করলো তা বের করার পাশাপাশি অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। সে দাগনভূঞার স্থানীয় ডেওলিয়া বাজারে ডেকোরেটর ব্যবসার পাশাপাশি সার্ভেয়ার আমিন সহকারীর কাজ করতো। গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে সে বিভিন্ন অজুহাতে হয়রানি করতো।

গত ইউপি নির্বাচনে মেম্বার পদে পরাজিত জাহাঙ্গীর প্রসঙ্গে স্থানীয় মেম্বার সফিউল্লাহ স্বপন জানান, জাহাঙ্গীর ইতোপূর্বে ভূঞা দিঘির পাশে ও মৌলবীবাজারের উত্তরপাশে নারী কেলেঙ্কারিতে ধরা পড়েছে। পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারিতে গ্রাম্য সালিশে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য্য করা হয়। এর মধ্যে উসূল ২০ হাজার টাকা।  

নিহত শারমিনদের পরিবারে চার বোন ও দুই ভাই। বাবা শামসুল হকসহ এক ভাই ঢাকায় থাকে। মা ও অপর ভাই বোনেরা গ্রামে থাকতো। পার্শবর্তী সেনবাগ উপজেলার ছমিরমুন্সী ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের ওমর ফারুকের সাথে আট মাস আগে শারমিনের বিয়ে হয়। গত কিছুদিন পূর্বে সে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসে। সে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। পাশের বাড়ির জেঠাতো ভাই জাহাঙ্গীর মঙ্গলবার দুপুরে শারমিনদের ঘরে গিয়ে টিভি দেখছিল। এ সময় জাহাঙ্গীর পিস্তলের একটি গুলি শারমিনের কণ্ঠনালী ভেদ করলে সে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এ সময় দৌড়ে পলিয়ে যায় জাহাঙ্গীর।

দাগনভূঞা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান, নিহতের বিয়ে হয়েছে আট মাস আগে। ২২ দিন আগে সে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসে। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ফেনী জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে দাগনভূঞা থানা পুলিশ। তিনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করেন।

অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর