‘মাহে রমজান আমাকে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসে’

‘মাহে রমজান আমাকে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসে’

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

নাস্তিক থেকে ইসলাম গ্রহণের মর্মস্পর্শী গল্প বলছিলেন এক ইউরোপীয়। রোজা, আযানের সুমধুর ধ্বনি এবং মুসলিম সংস্কৃতি যেভাবে তাকে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসে সেসব চাঞ্চল্যকর তথ্য তিনি প্রকাশ করেন এক সাক্ষাৎকারে।

আহমেদ কাশেম (ছদ্মনাম) তার ইসলাম গ্রহণের পুরো প্রক্রিয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, যখন আমি প্রথম বাহরাইন যাই, তখন আমি আশা করেছিলাম মধ্যপ্রাচ্যের কিছু ঐতিহ্য দেখব। কিন্তু এখানে এসে দেখলাম বেশিরভাগ মানুষই আলাদা আলাদা ধর্ম ও বিশ্বাসের অনুসারী।

কারণ তারা বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছিল। ফলে আমার কাছে ইসলাম অজানাই থেকে যায়। দীর্ঘদিন আমি ইসলাম সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতে পারিনি।

এরপর একদিন আমি আযান শুনলাম এবং তা আমাকে খুবই আকৃষ্ট করল।

আমি মানুষদের জিজ্ঞেস করলে তারা আমাকে অর্থ জানিয়েছিল এবং তা আমার কাছে খুবই আকর্ষণীয় ছিল। তবে এটা ছিল কেবলই প্রাথমিক পর্যায়ের তথ্য মাত্র।

এর দশ বছর পর আমি শারজাহ্ ও দুবাই ভ্রমণ করি। সংযুক্ত আরব আমিরাত ভ্রমণ শেষে তুরস্কে পাড়ি জমালাম। সেখানে গিয়ে যা দেখলাম তা একেবারেই আলাদা।

তার মানে এই নয় যে তুরস্কে ইসলাম যথাযথভাবে পালিত হয়, বরং তুরস্কে ইসলামকে নানানভাবে দমন করা হয়। কিন্তু ইসলাম সম্পর্কিত অনেক আকর্ষণীয় বিষয় খুঁজে পেয়েছিলাম সেখানে।

তুরস্কের রয়েছে ঐতিহাসিক ইসলামি সংস্কৃতি যা আমাকে সরাসরি আকৃষ্ট করেছে। আমি অটোমান সাম্রাজ্যের বেশ কিছু ইসলামিক স্থাপত্য খুঁজে পেয়েছিলাম। ততদিনে বেশ কিছু স্থানীয় মুসলিম আমার বন্ধু হয়েছিল।

অতঃপর মাহে রমজান আসলো এবং আমি আমাকে নতুনভাবে খুঁজে পেলাম। আমি অবাক হয়েছিলাম মানুষ দিনের বেলা এক কাপ চা-ও খায় না।

আমি খেয়াল করলাম এবং মনে মনে সেই ধরনের মানুষদেরকেই পছন্দ করতাম যাদেরকে এখানে দেখছি। যারা রোজা পালন করত তাদেরকে শ্রেষ্ঠ মানুষ মনে হত, যা আমাকে তাদের সাথে যোগ দিতে উৎসাহিত করে।

অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, আমি মুসলিম না হয়েও রোজা রাখতে শুরু করেছিলাম এবং আমি লক্ষ্য করলাম এটা খুবই আরামদায়ক ও মানসিক স্বস্তিদায়ক ছিল।

আমি রোজাকে খুবই উপভোগ করতাম, বিশেষ করে মাগরিবের পূর্ব সময়ে রোজাদারদের সাথে শান্তভাবে বসে থাকা এবং ইফতার গ্রহণের মুহূর্তকে।

এখানে সবাই রোজা রেখেই সারাদিন কাজ করত যা আমাকে অবাক করতো। আমি নিজেও সারাদিন রোজা রেখে কাজ করতাম। ব্যাপারটি আমাকে ইসলাম সম্পর্কে আরো বেশি জানতে আগ্রহী করে তোলে।

এমন অবস্থায় কেউ একজন ইংরেজিতে অনুবাদ করা একটি কুরআন আমাকে দেয়। আমি তা পড়ে অদ্ভুত কিছুই খুঁজে পেলাম না। আমি ভেবেছিলাম, হয়ত পশ্চিমা রহস্যজনক গল্পগুলোর মত হবে কিন্তু তা ছিল না। প্রকৃতপক্ষে আমি দেখলাম এটা বাইবেলের মত ছিল না।

বাইবেলকে অসঙ্গতি ও অদ্ভুত গল্পে পরিপূর্ণ মনে হত এবং যিশু খ্রিস্টের প্রকৃত বাণী ধারণ করছে বলে মনে হত না।

আমি বেশি বেশি কুরআন পড়তে আরম্ভ করলাম এবং যে বিষয়টি আমাকে ইসলামে আকৃষ্ট করল তা হল মহানবী হযরতম মুহাম্মদ (সা.)।

রাসূল (সা.) এর জীবনী আমাকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করল। কিন্তু তখন পর্যন্ত কেউ আমাকে ইসলামের প্রতি আহ্বান জানায়নি।

তুরস্ক থেকে আমি আবার দুবাই ফিরে আসলাম। আলহামদুলিল্লাহ্, আমি এমন একজন মানুষ পেয়েছিলাম যে আমার বন্ধু হয়েছিল। সে তার সামর্থ্য অনুযায়ী আমার সকল প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করত।

পরের শুক্রবারে তিনি স্থানীয় একটি মসজিদে ডাকেন এবং সেখানে আমি ইসলাম গ্রহণ করি, আলহামদুলিল্লাহ্। উপস্থিত হাজারো মানুষ আমাকে অভিবাদন জানায়। আমি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম। আমি কখনো্ এত হাসি মুখ দেখি নি, কখনোও না।

আমি যেন নতুনভাবে জন্ম নিয়েছি। জীবনকে নতুনভাবে জানতে পারছি।

ইসলামকে নিয়ে আমার অনেক ভুল ধারণা ছিল। যখন কুরআন পড়তে শুরু করেছিলাম এবং মুসলিমদের সাথে মিশতে শুরু করেছিলাম তখন থেকেই ইসলাম সম্পর্কে আমার ধারণা পাল্টাতে থাকে।

বাকিটা জীবন ঈমানদারিত্বের সঙ্গে কাটাতে চাই।

অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর