টাকার ভাগ নিয়ে উপাচার্য-শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব চরমে
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

টাকার ভাগ নিয়ে উপাচার্য-শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব চরমে

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রির ২ কোটিরও বেশি টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে উপাচার্য ও শিক্ষকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। দুটি অনুষদের শিক্ষকরা তাদের জন্য বরাদ্দ অর্থ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। অন্যদিকে, উপাচার্য একাই ৩ লাখ টাকা নিয়েছেন।

অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পরীক্ষা কার্যক্রমের জন্য ২০ লাখ টাকা বেশি খরচ দেখানো হয়েছে।

এ ঘটনায় পরীক্ষা কমিটির প্রধান হিসেবে উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষকরা। এ নিয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে চলছে নানা সমালোচনা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, এ বছর অনার্স প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ছয়টি অনুষদে ৫৮ হাজার ৯০৬টি ভর্তি আবেদন ফরম বিক্রি হয়েছে। বিভিন্ন অনুষদের ফরমের দাম ৩৮৫ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ হয়েছে।

ফলে শুধু ভর্তি আবেদন ফরম বিক্রি করে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় হয়েছে দুই কোটি টাকার বেশি। পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র তৈরিসহ অন্যান্য খরচ বাবদ ব্যয় হয়েছে ৭০ লাখ টাকারও বেশি। বাকি প্রায় দেড় কোটি টাকা নিয়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ কর্তৃক অন্যান্য বছরের চেয়ে ২০ লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ দেখানোর বিষয়টি শিক্ষকরা কোনোভাবেই মেনে নেননি।

এতো টাকা কিভাবে খরচ দেখানো হলো, এ নিয়ে শিক্ষকরা নানা প্রশ্নে জর্জরিত করেন উপাচার্যকে। শেষ পর্যন্ত উপাচার্য নিজে ৩ লাখ টাকা নিয়ে বাকি টাকা শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে ভাগ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবার শিক্ষকরা যেখানে এক থেকে সোয়া লাখ বা তার চেয়েও বেশি টাকা পান, এবার তাদের তার অর্ধেক টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় শিক্ষকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যেই ইলেকট্রিক অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনসহ দু’টি অনুষদের শিক্ষকরা তাদের জন্য বরাদ্দ করা টাকা নিতে অস্বীকার করেছেন।  

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, ভর্তি পরীক্ষার সময় প্রতি বছর মোটা অঙ্কের টাকা ফরম বিক্রি করে আয় হয়। এর আগের উপাচার্য অধ্যাপক নুর উন নবী তার চার বছরের কার্যকালে কখনোই এই টাকা নিজের জন্য নেননি। বরং প্রতিবারই তার জন্য বরাদ্দ করা অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন তহবিলে দান করে দিতেন। কিন্তু বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ শিক্ষকদের আগে নিজে প্রথমে তিন লাখ টাকা নিয়ে নিয়েছেন, যা কোনোভাবেই শোভনীয় হয়নি। তাছাড়া এবার যে অতিরিক্ত ২০ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে, সেটা আসলে নয়-ছয় করা হয়েছে।

শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. তুহিন ওয়াদুদ অভিযোগ করে বলেন, ‘এবার ভর্তি পরীক্ষায় অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় দেখানো হয়েছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটি অনুষদগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করে টাকা ভাগ করার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছে। ফলে আমরা টাকা নেইনি। ’

সরকার সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের সভাপতি আফেল মাহমুদ বলেন, ‘দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন করা ফরমের টাকা নিয়ে এসব না করলেই চলতো। ’

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইবরাহিম কবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসব কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির ব্যাপার। এর বাইরে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

মন্তব্য জানতে উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর