তাওবা-ইস্তেগফারের পার্থক্য ও গুরুত্ব

প্রতীকী ছবি

তাওবা-ইস্তেগফারের পার্থক্য ও গুরুত্ব

নিউজ টোয়েন্টিফোর ধর্ম ডেস্ক

তাওবা ও ইস্তেগফারের মধ্যে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। তাওবার মধ্যে তিনটি বিষয়ের উপস্থিতি জরুরি। ১. অতীতের কৃতকর্মের ওপর লজ্জিত হওয়া ও অনুশোচনা করা, ২. ফিল হাল গোনাহ ছেড়ে দেওয়া এবং ৩. ভবিষ্যতে গোনাহ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। স্পষ্ট হয়ে গেল যে তাওবার মধ্যে তিন বিষয়ের সম্পর্ক তিনটি কালের সাথে, অতীতের সাথে লজ্জিত হওয়ার সম্পর্ক।

বর্তমানের সাথে গোনাহ ছেড়ে দেওয়ার সম্পর্ক। ভবিষ্যতের সাথে গোনাহ না করার অঙ্গীকারের সম্পর্ক।  আর ইস্তেগফারের মর্ম হলো- আল্লাহর কাছে গোনাহ মাফ করার দু’আ করা। দুনিয়াতে গোনাহ ও অপকর্মগুলো প্রকাশ না করার দরখাস্ত করা।
আর আখিরাতে এসব বিষয়ে হিসাব না নেওয়ার দু’আ করা।

গফ্ফার নামের মর্ম : আল্লাহর সিফতি/গুণবাচক নাম গফ্ফার। গফ্ফারের মধ্যেও ভালোর প্রকাশ ও মন্দের গোপন করার মর্ম রয়েছে। ইমাম গাজ্জালী (রহ.) বলেন, গফ্ফার ওই সত্তাকে বলা হয়, যিনি সুন্দর ও ভালো জিনিসকে প্রকাশ করেন আর মন্দকে গোপন করেন। বলুন তো একজন মানুষের জীবনে গোনাহের চেয়ে মন্দ দিক আর কী হতে পারে? আল্লাহর কাছে গোনাহের ক্ষমা চাওয়া এবং এগুলো মানুষের সামনে প্রকাশ না করা ও আখিরাতে এ ব্যপারে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় না করানোর দু’আ করার নামই ইস্তেগফার।  

রোগ ও তার প্রতিকার : দৈহিক এমন কোনো রোগ নেই, যার প্রতিষেধক নেই। এটা হাদীসের কথা। এ রকম আত্মীক রোগেরও প্রতিষেধক রয়েছে। আত্মীক রোগের নাম গোনাহ। আর এর প্রতিষেধকের নাম ইস্তেগফার। যেমন: হযরত কাতাদা (রা.) বলেন, পবিত্র কোরআন তোমাদের রোগ ও তার ওষুধ দুটিই চিহ্নিত করে দিয়েছে। তোমাদের রোগের নাম গোনাহ আর তার ওষুধ হলো ইস্তেগফার।  

ইস্তেগফারের গুরুত্ব : ইস্তেগফার মানুষের গোনাহখাতার কার্যকর প্রতিষেধক, ইস্তেগফারকারীর ওপর আল্লাহ সন্তুষ্ট থাকেন। কারণ সে নিজের গোনাহ ও অপরাধ স্বীকার করে সততার পরিচয় দিয়েছে। রাসূল (সা.) ইস্তেগফারের প্রতি উৎসাহ প্রদান করে বলেন (অথচ তিনি মা’সুম-নিষ্পাপ), হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার ও তাওবা করো। কারণ আমি নিজেও দৈনিক শতবার তাওবা-ইস্তেগফার করি।  

অন্য হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) বলেন, যার আমলনামায় ইস্তেগফার অধিক সংখ্যায় পাওয়া যাবে তার জন্য রইল সুসংবাদ।

হযরত লোকমান হাকীম তাঁর সন্তানকে উপদেশ দান করে বলেন, হে আমার পুত্র! ‘আল্লাহুম্মাগ ফিরলী’ বলাকে অভ্যাসে পরিণত করে নাও। কারণ এমন কিছু সময় আছে যখন আল্লাহ তা’আলা যেকোনো দু’আকারীর দু’আ কবুল করেন।

হযরত আবু মূসা (রা.) বলেন, আমাদের সুরক্ষাদানকারী দুটি জিনিস ছিল, তন্মধ্যে হতে একটি চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেছে। সেটা হলো আমাদের মাঝে রাসূল (সা.)-এর উপস্থিতি। আর দ্বিতীয় জিনিস ইস্তেগফার যা এখনো আমাদের মাঝে রয়ে গেছে। যেদিন এটিও চলে যাবে (করার মতো কেউ থাকবে না) তখন আমাদের ধ্বংস অনিবার্য।  

হযরত হাসান (রহ.) বলেন, তোমরা ঘরে-দুয়ারে, দস্তরখানে, রাস্তা-ঘাটে, হাটে-বাজারে, সভা-সমাবেশে বেশি বেশি ইস্তেগফার করো। কারণ ইস্তেগফার কবুল হওয়ার সময় তোমাদের জানা নেই।

ইস্তেগফারের উপকারিতা :
ইস্তেগফারের উপকারিতা অনেক। কোরআন-হাদীসের আলোকে কিছু উপকারের কথা নিচে তুলে ধরা হলো।

এক. গোনাহখাতা মাফ হয়।  
কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে : তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। (সূরা নূহ-১০)

দুই. অনাবৃষ্টি দূর হবে।
ইরশাদ হচ্ছে : তিনি (আল্লাহ) আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। (নূহ-১১)

তিন. সন্তান ও সম্পদ লাভ হবে।
ইরশাদ হচ্ছে :  তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে উন্নতি দান করবেন। (নূহ-১২)

চার. সবুজ-শ্যামল পরিবেশ লাভ হবে।
ইরশাদ হচ্ছে : তোমাদের জন্য সৃষ্টি করবেন উদ্যান। (নূহ-১২)

পাঁচ. নদ-নদীর ব্যবস্থা হবে।  
ইরশাদ হচ্ছে : তোমাদের জন্য নদ-নদীর ব্যবস্থা করে দেবেন। (নূহ-১২)

ছয়. উপভোগ্য জীবন লাভ হবে।
ইরশাদ হচ্ছে : তোমরা তোমাদের রবের কাছে গোনাহের ক্ষমা প্রার্থনা করো। অতঃপর তাঁর অভিমুখী হও (ভবিষ্যতে গোনাহা না করার এবং আল্লাহর হুকুম-আহকাম পালন করার দৃঢ় সংকল্প করো)। তিনি তোমাদের নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত উত্তম জীবন উপভোগ করতে দেবেন। (সূরা হুদ-৩)

সাত. শক্তি-সামর্থ্য বাড়বে।
ইরশাদ হচ্ছে : তোমাদের শক্তির সাথে বাড়তি আরো শক্তি জোগাবেন। (হুদ-৫২)

আট. আল্লাহর আযাব থেকে নিরাপত্তা দান করবে।  
ইরশাদ হচ্ছে : তারা ইস্তেগফারে রত থাকাবস্থায় আল্লাহ তা’আলা তাদের শাস্তি দেবেন না। (আনফাল-৩৩)

নয়. সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের হবে।  
রাসূল (সা.) বলেন : যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তা’আলা তার সর্বপ্রকার সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুলে দেবেন।

দশ. উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুঃখ-চিন্তা দূর হবে।  
রাসূল (সা.) বলেন : সর্বপ্রকার উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুঃখ-চিন্তা লাঘব করে স্বস্তি ও আনন্দ দান করবেন।

এগারো. অকল্পনীয় রিযিকের ব্যবস্থা হবে।  
রাসূল (সা.) বলেন :তাকে কল্পনাতীত রিযিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। (আবু দাউদ)

বেশি বেশি উস্তেগফার করে সকলকেই এর উপকারিতা লাভের চেষ্টা করতে হবে।  

সূত্র: হযরত ফকীহুল মিল্লাত (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বিভিন্ন সময় ছাত্র-শিক্ষক ও সালেকীনদের উদ্দেশে যেসব তাকরীর দেন। গ্রন্থনা : মুফতী নূর মুহাম্মদ

সম্পর্কিত খবর