দাড়ি-গোঁফ লাগিয়ে ফুটবল মাঠে মেয়েরা

ফুটবল মাঠে নারী

দাড়ি-গোঁফ লাগিয়ে ফুটবল মাঠে মেয়েরা

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

আইনে মেয়েদের মাঠে গিয়ে খেলা দেখায় বাধা নেই। তবুও ঝামেলা করে নিরাপত্তা কর্মীরা। নারী দেখলেই পথ আটকায়। কখনো ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

কখনো আটক করা হয়। পরে বাবা-মাকে ডেকে 'মাঠে যাবে না' মর্মে মুচলেকা নিয়ে ছাড়া হয়। আর তাই ফুটবল ম্যাচ দেখতে অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করলেন ইরানের কয়েকজন নারী। মুখে নকল দাড়ি-গোঁফ, মাথায় পরচুলা লাগিয়ে পুরুষদের পোশাক পরে চলে যান খেলা দেখতে।
নিরাপত্তারক্ষীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ঠিকই খেলা দেখে ফিরে আসেন। পরে মাঠে বসে থাকা ওই মেয়েদের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।

সম্প্রতি প্রিয় দল পার্সপোলিসের পতাকা গায়ে জড়িয়ে পুরুষের ছদ্মবেশে খেলা দেখতে গিয়েছিলেন ওই নারীরা। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে গ্যালারিতে বসে আছেন তরুণ কয়েকজন ছেলে। তবে তারা ছেলে ছিল না। খুব মনোযোগ দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে না দেখলে বোঝা কঠিন যে তারা নারী। -খবর বিবিসি অনলাইনের।

তেহরানের আযাদি স্টেডিয়ামে গত শুক্রবার ঘটেছে ঘটনাটি। এই মেয়েদের একজন স্থানীয় একটি কাগজে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তিনি এ নিয়ে তিনবার এভাবে মাঠে ঢুকে খেলা দেখেছেন।

আরও পড়ুন: অনলাইনে ফোন অর্ডার করে পেলেন ইট

তিনি বলছিলেন, গুগুলে গিয়ে টিউটোরিয়াল দেখে মেকআপের নানা রকম কায়দা শিখেছি ছদ্মবেশ নেয়ার জন্য।

তিনি জানান, এর আগে একবার মাঠে খেলে দেখতে গেলে তাকে নিরাপত্তা কর্মীরা ঢুকতে দেয়নি।

তারপরে তিনি এমন বুদ্ধি বের করেছেন এবং অন্যদেরও উৎসাহিত করেছেন। কঠোর শরীয়া আইন দ্বারা পরিচালিত রাষ্ট্র ব্যবস্থার দেশ ইরানে নারীদের মাঠে গিয়ে খেলা দেখা আইনত নিষিদ্ধ না হলেও এক অর্থে স্বীকৃত নয়।

নারীদের মাঠে না ঢোকাই সেখানে স্বাভাবিক। মাঠে যাওয়ার পর ঢুকতে দেওয়া হয়নি এমন ঘটনাও রয়েছে। এমনকি মাঠে খেলা দেখতে যাওয়ার জন্য শাস্তির মুখেও পড়তে হয়েছে অনেক নারীকে। ২০১৪ সালে একজন ব্রিটিশ ইরানি অ্যাক্টিভিস্ট মাঠে ঢুকে পুরুষদের ভলিবল ম্যাচ দেখার চেষ্টা করলে তাকে আটক করা হয়।

আরও পড়ুন: বাড়ির-কাজ-সামলাতে-তিন-বউ!

২০১৮ সালে মাঠে ঢুকে খেলা দেখার চেষ্টা করার কারণে ৩৫ জন নারীকে আটক করা হয়।

তবে ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের আগে নারীরা মাঠে গিয়ে খেলা দেখতে পারতেন।

এই ফেব্রুয়ারিতে অবশ্য একবার নারীদের মাঠে ঢোকার অনুমতি মিলেছিল। তবে তাদের পুরুষদের থেকে আলাদা বসতে হয়েছিলো। ছদ্মবেশি ওই নারীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো আটক হওয়ার কোন ভয় তার মধ্যে ছিল কিনা?

এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন আমি চিন্তিত হবো? মাঠে গিয়ে আমি কোনো অপরাধ করিনি। আইনে নারীর মাঠে যাওয়াকে অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি।

তবে কয়েকজন নারীকে এর আগে তারা ধরেছে। মাঠে আর যাবে না বলে তাদের মুচলেকাও দিতে হয়েছে।

কিন্তু ঝুঁকি নিয়েও মাঠে যাওয়ার পর যে ছবি তারা প্রকাশ করেছেন শুরুতে তা নিজেদের মধ্যেই ছিল। পরে সেই ছবি ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই তাদের বাহবা দিয়েছেন।

আরও পড়ুন:কুপ্রস্তাবে আপত্তি! বউদির উপর কোনধরনের প্রতিশোধ নিলো দেবর ?

কিন্তু ধিক্কারও কম জোটেনি। কেনো তারা মাঠে গিয়ে মেয়েদের খেলা দেখছেন না, পুরুষদের ম্যাচ কেন? এমন প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। নিরাপত্তারক্ষীদের চোখ কীভাবে ফাঁকি দিলেন, সেই প্রশ্নের জবাবে আরেকজন বলেন, আমরা দুটি গেট দিয়ে দল করে যখন ঢুকেছি তখন কেউ টেরই পায়নি। তবে স্টেডিয়ামে বসার পর অবশ্য অনেকেই বুঝে গিয়েছিলেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হল তারা ম্যাচজুড়ে আমাদের দিকে কোনো মন্তব্য ছুড়ে দেননি। বরং কেউ কেউ এসে আমাদের সঙ্গে সেলফি তুলেছেন।

ইরানে যতদিন পর্যন্ত মেয়েদের মাঠে গিয়ে খেলা দেখা স্বীকৃত না হবে, ততদিন পর্যন্ত এই কাজ চালিয়ে যাবেন বলে ওই মেয়েরা জানান।

সম্পর্কিত খবর