ফের ডিম পেড়েছে খান জাহান আলী মাজার দীঘির কুমির

ফের ডিম পেড়েছে খান জাহান আলী মাজার দীঘির কুমির

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

বাগেরহাটে খান জাহান আলী মাজার শরীফের দীঘির মিঠা পানির মা কুমির আবারও ডিম পেড়েছে। গত দুই দিনে ৬০ থেকে ৭০টি ডিম পাড়ে কুমিরটি।  

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রোদের মধ্যে দীঘির পাড়ে মা কুমিরটি মাটি আঁকড়ে আছে। সেখানে গর্ত খুঁড়ে ডিম ঢেকে রেখেছে ওই মাদি কুমিরটি।

ডিম পাড়ার পর এখন বাচ্চা ফুটানোর জন্য ‘তা’ দিচ্ছে। আগ্রহী মানুষ কাছে গেলেই তেড়ে আসছে কুমিরটি। সেখানে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে মাজারের খাদেমরা। অনেকে কুমিরের ডিম দেখতে ভিড় করছেন সেখানে।
মা কুমিরটি ডিম মাটির ধুলো দিয়ে ঢেকে রেখে বাচ্চা ফুটাবার জন্য ‘তা’ দিতে থাকায় ডিমের সঠিক সংখ্যার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

খান জাহান আলীর মাজারের প্রধান খাদেম শের আলী ফকির জানান, মা কুমিরটি দীঘির উত্তর পাড়ে গর্ত খুঁড়ে আনুমানিক ৬০ থেকে ৭০টি ডিম পেড়েছে। ওই ডিম ধুলোমাটি দিয়ে ঢেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য এখন ‘তা’ দিচ্ছে। মাঝেমধ্যে খুব অল্প সময়ের জন্য কুমিরটি দীঘিতে নেমে আবার ফিরে আসছে ডিমে তা দিতে। আগামী আগস্ট মাস পর্যন্ত কুমিরটি ডিমে তা দেবার পর বাচ্চা জন্মাবে এমন প্রত্যাশা মাজারের প্রধান খাদেমের।

মাজারের প্রধান খাদেম আরো জানান, দীঘিতে কালাপাড় ও ধলাপাড় নামে দুটি কুমির লালন-পালন করতেন। ওই জুটির কোনো বংশধর এখন আর বেঁচে নেই। এখন ভারত সরকারের দেওয়া মিঠা পানির কুমির দীঘির শেষ সম্বল। কয়েক বছর ধরে এই দীঘির মাদি কুমিরটি ডিম পাড়লেও তাতে বাচ্চা ফুটছে না। কুমিরের বংশবৃদ্ধি না হলে দীঘিটি তার সাড়ে ৬শ বছরের ঐতিহ্য হারাবে। তাই দীঘিতে কুমিরের বংশবৃদ্ধি ও সংরক্ষণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।

বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাইফুজ্জামান খান জানান, দীঘিতে বর্তমানে একটি পুরুষ ও একটি মাদি কুমির রয়েছে। কয়েক বছর ধরে প্রাকৃতিক-কৃত্রিম উভয়ভাবে চেষ্টা করেও ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো যায়নি। মা কুমিরটিকে চিকিৎসাও দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শও নেওয়া হয়েছে। পুরুষ কুমিরটির শুক্রাণু মা কুমিরটির ডিম্বাণুতে যথাযথভাবে প্রতিস্থাপন না হবার ফলে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটছেনা। তা ছাড়া শতভাগ সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় পুরুষ কুমিরটির শুক্রাণুর সক্ষমতা কমে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস জানান, কুমির খান জাহানের দীঘির ঐতিহ্য। কুমিরের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য কয়েক বছর ধরে নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। কী কারণে বাচ্চা ফুটছে না তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে দীঘির ঐতিহ্য ধরে রাখতে কুমিরের বংশবৃদ্ধির জন্য সরকারের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তাই খান জাহান আলীর দীঘি থেকে দু’টি কুমির সুন্দরবনের করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সুন্দরবনের করমজল থেকে কুমির এনে দীঘিতে সংরক্ষণের জন্য বন বিভাগের সাথে আলোচনা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, খান জাহান আলীর আমল থেকে প্রায় সাড়ে ৬শ বছর ধরে মাজারের দীঘিতে ‘কালাপাড়’ ও ‘ধলাপাড়’ নামের মিঠা পানির কুমির বংশ পরাম্পর (মার্স ক্রোকোডাইল) বসবাস করে আসছে। তবে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার আমলের কুমিরের শেষ বংশধরটি মারা যায়। বর্তমানে দীঘিতে কালাপাড় ও ধলাপাড়ের কোনো বংশধর নেই। ২০০৫ সালে ভারতের মাদ্রাজ ক্রোকোডাইল ফার্ম থেকে পাওয়া ৪০টি মিঠা পানির কুমিরছানার মধ্যে ছয়টি কুমির খান জাহানের দীঘিতে ছাড়া হয়েছে।

অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর
 

সম্পর্কিত খবর