পাহাড়ে এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় ২৪ঘন্টার ব্যবদানে ৬ খুনের ঘটনায় উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। আতঙ্কে উদ্বেগ- উৎকন্ঠায় স্থানীয়রা। রাঙামাটির নানিয়ারচ উপজেলার চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি শক্তিমান চাকমা ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (গণতান্ত্রিকের) আহ্বায়ক তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মাসহ সংগঠনটির আরও ৪ নেতাকর্মী খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবারও বড় ধরণের সহিংসতার আশঙ্কাও করছে পাহাড়ের মানুষ।
রাঙামাটিতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিতে মাইক্রোবাস চালক সজীব হাওলাদার খুনিদের গ্রেপ্তার এবং জনসংহতি সমিতি, ইউপিডিএফসহ পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠনগুলোর রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে আগামী সোমবার ও মঙ্গলবার তিন পার্বত্য জেলায় ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছে পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য নাগরিক পরিষদ। এ কর্মসূচির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম।
পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাদাৎ ফরাজি সাকিব এক বিবৃতিতে জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক দল জনসংহতি সমিতি, ইউপিডিএফসহ আঞ্চলিক দলগুলোর সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কাছে পাহাড়ের মানুষের জীবন আজ জিম্মি। তাই এদের সন্ত্রাসী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এই হরতাল পার্বত্য তিন জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে পালিত হবে।
শনিবার সকাল থেকে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করেছে যৌথবাহিনীর দল। নানিয়ারচর উপজেলার পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন সড়কে যৌথবাহিনীর টহল জোড়দার করা হয়েছে। এলাকায় এলাকায় অতিরিক্তি পুলিশও মোতায়ন রয়েছে। একের পর এক হত্যাকান্ডের ঘটনায় পর নানিয়ারচর এলাকাবাসীর মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কুতুকছড়ি, ঘিরাছড়ি ইউনিয়ন ও নানিয়ারচরের হাট-বাজারে আসেনি পাহাড়ি-বাঙালীর কোন ব্যবসায়ীরা। তাই মিলেনি সাপ্তাহিক হাট-বাজার। রাঙামাটি-নানিয়ারচর-খাগড়াছড়ি সড়কে কোন যানবাহনও চলাচল করেনি। উপজেলার কিছু কিছু দোকান পাঠ খুলা থাকলেও মানুষের সরগমন ছিল কম।
হত্যান্ডের ঘটনার পর রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার বেতছরির ঘটনাস্থল পরিদর্মন করেছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি ড. এসএম মনিরুজ্জামান বিপিএম, পিপিএম। এসময় তিনি বলেন, পাহাড় থেকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত যৌথবাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকবে। তাই আতঙ্ককীত হওয়ার কোন কারণ নেই।
এসময় তার সফর সঙ্গি হিসেবে ছিলেন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশন্স এন্ড ক্রাইম) এস এম রোকন উদ্দিন, অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আবুল ফয়েজ, রাঙামাটি জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর কবির ও খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ সুপার মো.আলি আহমেদ খাঁন।
অন্যদিকে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা হত্যার দুইদিনেরও থানায় কোন অভিযোগপত্র দাখিল করেনি তার পরিবার। এছাড়া এখনো পর্যন্ত ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (গণতান্ত্রিকের) সভাপতি তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মাসহ সংগঠনটির আরও ৪ নেতাকর্মী খুনেরও কোন মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন নানিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল লতিফ। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা নিহতদের পরিবারের সাথে কথা বলেছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা না হলে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে। এছাড়া এলাকার নিরাপত্তায় পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবির টহল জোড়দার করা হয়েছে।
রাঙামাটির নানিয়ারচরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) আহ্বায়ক তপন জ্যোতি চাকমাসহ পাঁচজনের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
(নিউজ টোয়েন্টিফোর/কেআই)
