প্রচারনায় নানা অভিযোগ মেয়র প্রার্থীদের

প্রতীকী ছবি

খুলনা সিটি নির্বাচন

প্রচারনায় নানা অভিযোগ মেয়র প্রার্থীদের

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

খুলনা সিটি নির্বাচনের প্রচারনায় একদিকে যেমন উন্নয়নের আশ্বাস দিচ্ছেন প্রার্থীরা, অপরদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ব্যর্থতার চিত্র ও নানা অভিযোগ ভোটারদের সামনে তুলে ধরছেন। আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক শনিবার নগরীর ২৬নং ওয়ার্ডে গনসংযোগকালে বলেন, বর্তমান বিএনপির সিটি মেয়রের সিদ্ধান্তহীনতায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে বিদেশি কয়েকটি সংস্থা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যোগ্য নগর পিতার অভাবে বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে খুলনার উন্নয়ন কর্মকান্ড।

এর জবাবে সিটি মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান শনিবার সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ভোটারদের কাছে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছেন।

নির্বাচনের মাঠে তিনি তার আমলে ৭০০ কোটি টাকা রেখে যাওয়ার যে প্রচারণা চালাচ্ছেন তা’ সঠিক নয়। দায়িত্বশীল নেতাদের কাছ থেকে নগরবাসী দায়িত্বশীল আচরণ আশা করেন।

আর বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, সিটি নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে শাসক দলের প্রার্থী ও দলীয় নেতাকর্মীরা বেপরোয়া আচরন করছে। ভোটাররা ব্যালটের মাধ্যমে এই দুঃশাসন ও লুটপাটের জবাব দিতে চায়।

গতকাল তিনি নগরীর ৩০নং ওয়ার্ডে রূপসা পাইকারি মাছ বাজার, ফেরীঘাট, রূপসা স্ট্যান্ড রোড, শ্মশান রোড ও সংলগ্ন জনবসতি এলাকায় ভোটারদের সাথে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন। তিনি ভোটারদের হাতে ধানের শীষের লিফলেট তুলে দেন এবং নির্বাচনে ভয়ভীতি উপেক্ষা করে ভোট দেয়ার আহবান জানান।
 
নগরীর বিভিন্নস্থানে প্রচারনাকালে সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার ২৮ বছর পরেও খুলনার অনেক এলাকা এখনো উন্নয়ন বঞ্চিত দাবি করে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, জলাবদ্ধতা, মাদক ও মশা খুলনা সিটির অন্যতম প্রধান সমস্যা। ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়লাভের আমি উক্ত সমস্যাগুলো দূরীকরণে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। কিন্তু পরের বার নির্বাচিত না হওয়ায় সব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়নি। এবছর মেয়র নির্বাচিত হলে উক্ত সমস্যা সমাধান করাই হবে আমার মূল লক্ষ্য।

তিনি বলেন, খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিক। উন্নয়নের জন্য তিনি আমাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছেন। সুতরাং খুলনাকে আধুনিক, পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে হবে।

গণসংযোগকালে মেয়র প্রার্থীর সাথে উপস্থিত ছিলেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ হায়দার আলী, জাসদ খুলনা মহানগর সভাপতি রফিকুল ইসলাম খোকন, বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র ও বিসিবি পরিচালক শেখ সোহেল, নগর আওয়ামী লীগ নেতা মুন্সি মাহবুব আলম সোহাগ, জাহাঙ্গীর হোসেন, সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস, তসলিম আহমেদ আশা, কাউন্সিলর প্রার্থী শেখ আব্দুল আজিজ, শেখ রুহুল আমিন, শেখ মো: রবিউল ইসলাম, যুবলীগ নেতা কাজী ফয়েজ মাহমুদ, এস এম হাফিজুর রহমান, শওকত হোসেন, রেজাউল করিম রেজা প্রমুখ।

এদিকে সিটি নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিএনপি মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেছেন, সিটি নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পুলিশ ও ডিবি দিয়ে বিএনপির কর্মীদের গ্রেপ্তার হয়রানি করা হচ্ছে। কিন্ত জনগন আওয়ামী লীগকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায়না। তারা পরিবর্তন চায়। তারা ভোটে ব্যালটের মাধ্যমে এই সরকারের দুঃশাসন ও লুটপাটের জবাব দিতে চায়।

গনসংযোগকালে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী বজলার রহমান, মোল্লা আবুল কাশেম, সিরাজুল ইসলাম, বাগেরহাট জামায়াতের নায়েবে আমীর এ্যাড. আব্দুল ওয়াদুদ, বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দিন সেন্টু, জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি এ্যাড. শাহ আলম, বিএনপি নেতা কাউন্সিলর প্রার্থী আমানউল্লাহ আমান, এহতেশামুল হক শাওন, হাসানুর রশিদ মিরাজ, মীর কবির হোসেন, তৌহিদুল ইসলাম খোকন, আব্দুর রহমান, জাহান আলী, রিয়াজুর রহমান, সাইমুন ইসলাম রাজ্জাক, গোলাম কিবরিয়া, নুরুল ইসলাম লিটন, মেজবাউল আক্তার পিন্টু, আলম হাওলাদার, মোঃ রবিউল ইসলাম রবি, সেলিম খান বড় মিয়া, সগির হোসেন, খালেক গাজী, আসাদুর রহমান সানা, গনি মোড়ল, খোকন গাজী, আলী হোসেন, শহিদুল ইসলাম, আব্দুল গফুর, মারুফ হোসেন, মুজিবর মোল্লা, আবুল কালাম, আবুল হোসেন প্রমুখ।

সিটি করপোরেশনের সংবাদ সম্মেলনঃ খুলনা সিটি কর্পোরেশনে বর্তমান মেয়র মনিরুজ্জামান মনি শনিবার সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ২০১৩ সালে পদত্যাগের সময় কেসিসির ক্যাশভল্টে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ব্যাংকে ৯৫ কোটি ৬২ লাখ ৩৭ হাজার ৮৪৫ টাকা ৭৩ পয়সা স্থিতি ছিল। কিন্তু নির্বাচনের মাঠে তিনি ৭০০ কোটি টাকা রেখে যাওয়ার যে প্রচারণা চালাচ্ছেন তা সঠিক নয়।

সিটি করপোরেশন মিলনায়নে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দায়িত্বশীল নেতাদের কাছ থেকে নগরবাসী দায়িত্বশীল আচরণ আশা করেন। কিন্তু সাবেক মেয়র খালেক অসত্য তথ্য দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করছেন, যা উচিৎ নয়। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনী প্রচারণাকালে মেয়রপ্রার্থীরা নগরবাসীদের উদ্দেশে অনেকরকম প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। নির্বাচিত হওয়ার পর এসব বাস্তবায়ন হলে বিভাগীয় শহর খুলনার নাগরিক সুবিধা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং এর অর্থনৈতিক, সামাজিক, অবকাঠামোগত গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে।

 

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/কেআই)

সম্পর্কিত খবর