মহাকাশে বাংলাদেশ

মহাকাশে বাংলাদেশ

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

আজ রাতেই স্যাটেলাইট অধিকারী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটছে বাংলাদেশের

বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) রাত ২টা থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ প্রস্তুতিসহ সার্বিক বিষয় সরাসরি সম্প্রচার করবে

========================
স্বপ্ন যাত্রার ক্ষণগণনা শুরু। মহাকাশযুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। সব ঠিকঠাক থাকলে রাতেই হবে বহুপ্রতীক্ষিত আরেকটা স্বপ্ন বাস্তবায়ন। আকাশ জয় করতে পৃথিবী ত্যাগ করবে দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণের মাধ্যমে স্যাটেলাইটের অধিকারী বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিকানার গর্বের পাশাপাশি এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সামনে মহাকাশবিজ্ঞানের অসীম সম্ভাবনার দ্বার খুলবে। কারণ, একটি দেশ যখন স্যাটেলাইট তৈরির দক্ষতা অর্জন করে, তখন তাদের পক্ষে যে কোনো প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা সম্ভব। বাংলাদেশের জন্য এটি এক বিশাল প্রাপ্তি।

যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ অনুসন্ধান ও প্রযুক্তি কোম্পানি ‘স্পেসএক্স’-এর ফ্যালকন-৯ রকেট ফ্লোরিডার কেপ কেনাভেরালের লঞ্চ প্যাড থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে নিয়ে উড়াল দেবে। ‘স্পেসএক্স’ জানিয়েছে, ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের সময় বিকাল ৪টা ১২ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬টা ২২ মিনিটের মধ্যে যে কোনো সময় উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হবে। বাংলাদেশে এ সময়টি হচ্ছে আজ রাত ২টা ১২ মিনিট থেকে কাল ভোর ৪টা ২২ মিনিট।

স্পেসএক্স এবারই প্রথম উপগ্রহ উৎক্ষেপণে তাদের ফ্যালকন-৯ রকেটের ব্লক-৫ সংস্করণ ব্যবহার করতে যাচ্ছে। গেল ৪ মে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারে নতুন এ রকেটের স্ট্যাটিক ফায়ার টেস্ট সম্পন্ন হয়। তিন হাজার ৫০০ কেজি ওজনের জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ফ্যালকন-৯ কক্ষপথের দিকে ছুটবে কেনেডি স্পেস সেন্টারের ঐতিহাসিক লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯-এ থেকে। এ লঞ্চ কমপ্লেক্স থেকেই ১৯৬৯ সালে চন্দ্রাভিযানে রওনা হয়েছিল অ্যাপোলো-১১।

এর আগে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ উপলক্ষে সোমবার (৭ মে) ফ্লোরিডা গেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম (সাবেক টেলিকম প্রতিমন্ত্রী), তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ।

উৎক্ষেপণস্থল ফ্লোরিডায় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়সহ সব মিলিয়ে সরকারের ৪২ সদস্যর একটি প্রতিনিধিদল উপস্থিত থাকবে। এ ছাড়া সাংবাদিকসহ যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকে সেখানে থাকবেন। তাদের মধ্যে ৪০ জন উৎক্ষেপণস্থল থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে প্রথম গ্যালারি থেকে এ ঐতিহাসিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করবেন। সাড়ে ৩ কিলোমিটার দূরে দ্বিতীয় গ্যালারিতে থাকতে পারবেন আরো প্রায় ২০০ জন। এরপর ৫ কিলোমিটার দূরে অন্য একটি উন্মুক্ত স্থান থেকেও এ উৎক্ষেপণ দৃশ্য প্রত্যক্ষ করা যাবে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে এটি দেখার ব্যবস্থা থাকছে। বিটিভি রাত ২টা থেকে উৎক্ষেপণ প্রস্তুতিসহ সার্বিক বিষয় সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করবে।

স্পেসএক্সের উৎক্ষেপণ যান বা রকেট ফ্যালকন-৯ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে মহাকাশে ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত অরবিট প্লটে স্থাপন করবে। ফ্রান্সের কান টুলুজ ফ্যাসিলিটিতে নির্মিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ইতোমধ্যে ফ্রান্স থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় কার্গো বিমানে করে উৎক্ষেপণস্থল ফ্লোরিডার অরল্যান্ডের ক্যাপ ক্যানাভেরালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিশ্বের অন্যতম খ্যাতনামা স্যাটেলাইট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থেলেস এলেনিয়া স্পেস বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটি নির্মাণ করেছে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার জন্য গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরে প্রাথমিক এবং রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রে দ্বিতীয় গ্রাউন্ড স্টেশনের নির্মাণকাজও চূড়ান্ত হয়েছে। মহাকাশে উৎক্ষেপণের পর এটি পরিচালনা, সফল ব্যবহার ও বাণিজ্যিক কার্যত্রম সম্পাদনের জন্য ইতোমধ্যে সরকারি মালিকানাধীন বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। নতুন এ কোম্পানিতে কারিগরি লোকবল নিয়োগ এবং তাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি দেশে ব্যবহারের জন্য এবং ২০টি ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব। এ ছাড়া নিজস্ব স্যাটেলাইট থাকায় বৈশ্বিক টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে পরনির্ভরশীলতার অবসান হবে। টেলিমেডিসিন, ই-লার্নিং, ই-গবেষণা, ভিডিও কনফারেন্স, প্রতিরক্ষা ও দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় জরুরি যোগাযোগের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট।
========================

অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর