বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে যেসব সুফল মিলবে

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে যেসব সুফল মিলবে

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

সব ঠিকঠাক থাকলে রাতেই হবে বহুপ্রতীক্ষিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন। আকাশ জয় করতে পৃথিবী ত্যাগ করবে দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। আর এর মধ্য দিয়ে স্যাটেলাইটের অধিকারী বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটবে।  নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিকানার গর্বের পাশাপাশি এ দেশের মানুষের জন্য খুলে যাবে অসীম সম্ভাবনার দুয়ার।

  

চলুন জেনে নিই, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে মানুষ কী কী সুফল পাবে- 

বাংলাদেশ স্যাটেলাইট তৈরির দক্ষতা অর্জন করায় মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এখন থেকে দেশে বসেই যে কোনো প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে পারবে। এটি বাংলাদেশের জন্য এক বিশাল প্রাপ্তি।

 বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বিশেষভাবে কাজে লাগবে দুর্যোগ মুহূর্তে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখতে। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে মোবাইল নেটওয়ার্ক অনেক সময় অচল হয়ে পড়ে।

কিন্তু এখন থেকে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা চালু রাখা সম্ভব হবে।

⚝ সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলের মানুষের ইন্টারনেট ও ব্যাংকিং সেবা, টেলিমেডিসিন ও দূরনিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রসারেও ব্যবহার করা যাবে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট।

⚝ এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাণিজ্যিক দিক থেকেও অনেক লাভবান হওয়া সম্ভব। দেশে এখন ৩০টির মতো স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচারে আছে। এসব চ্যানেল সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে স্যাটেলাইট ভাড়া নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এ জন্য প্রতি মাসে একটি চ্যানেলের ভাড়া বাবদ গুণতে হয় তিন থেকে ছয় হাজার মার্কিন ডলার। সব মিলিয়ে স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বছরে চ্যানেলগুলোর খরচ হয় ২০ লাখ ডলার বা প্রায় ১৭ কোটি টাকা। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট চালু হলে চ্যানেল মালিকদের খরচ কমবে। সেই সঙ্গে দেশের টাকা দেশেই থেকে যাবে।

⚝ শুধু তা-ই নয়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ট্রান্সপন্ডার বা সক্ষমতা অন্য দেশের কাছে ভাড়া দিয়েও বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার সুযোগ থাকবে। এই স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ২০টি ভাড়া দেওয়ার জন্য রাখা হবে বলে সরকার থেকে বলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে এই স্যাটেলাইটের ট্রান্সপন্ডার বিক্রির জন্য সরকারের গঠন করা বঙ্গবন্ধু কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি (বিসিএসবি) লিমিটেড কাজ শুরু করেছে।

⚝ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের আরেকটি বিক্রয়যোগ্য পণ্য হবে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটে মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ২৬টি কেইউ-ব্যান্ড ও ১৪টি সি-ব্যান্ড। প্রতিটি ট্রান্সপন্ডার থেকে ৪০ মেগাহার্টজ হারে তরঙ্গ বরাদ্দ (ফ্রিকোয়েন্সি) সরবরাহ পাওয়া সম্ভব। এ হিসাবে ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মোট ফ্রিকোয়েন্সি ক্ষমতা হলো ১ হাজার ৬০০ মেগাহার্টজ। কিছু কারিগরি সীমাবদ্ধতার কারণে এই ১ হাজার পুরোটা ব্যবহার করা যাবে না। তবে কমপক্ষে ১ হাজার ৪০০ মেগাহার্টজ ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
===================

মোটা দাগে এ স্যাটেলাইট থেকে তিন ধরনের সুফল পেতে পারে দেশের মানুষ।

প্রথমত, এ স্যাটেলাইটের সক্ষমতা বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও সাশ্রয়- দুটিই করা যাবে।

দ্বিতীয়ত, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবার সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে।

তৃতীয়ত, দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলা ও ব্যবস্থাপনায় দারুণ কার্যকর ভূমিকা রাখবে এ স্যাটেলাইট। এ ছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজেও এ স্যাটেলাইটকে কাজে লাগানো সম্ভব।
==================

তবে এসব সম্ভাবনাকে ছাড়িয়ে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, সেটি হলো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি। বঙ্গবন্ধু-১ এর মাধ্যমে স্যাটেলাইট প্রযুক্তির অভিজাত দেশের ক্লাবে বাংলাদেশ প্রবেশ করবে।

অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর