নোয়াখালীর ভাষা শিখছেন বুবলি (ভিডিও)
নিউজ টোয়েন্টিফোর ঈদ আড্ডা

নোয়াখালীর ভাষা শিখছেন বুবলি (ভিডিও)

পৈত্রিক নিবাস নোয়াখালী হলেও নোয়াখালীর ভাষাটাও রপ্ত করা হয়নি বুবলির
নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক:

শবনব বুবলি। নিউজ প্রেজেন্টার থেকে ঢালিউড নায়িকা। এক বছরে চারটি সফল ছবি উপহার দিয়েছেন। পৈত্রিক নিবাস নোয়াখালী হলেও বুবলির জন্ম, বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই।

তাই নোয়াখালীর ভাষাটাও রপ্ত করা হয়নি তার। তবে এখন নোয়াখালীর ভাষা শিখছেন বুবলি। কিন্তু কেন? কথায় বলে, 'পড়েছ মোগলের হাতে, খানা খেতে হবে একসাথে'। ঠিক তেমনি বাধ্য হয়েই 'স্পোকেন নোয়াখালী' কোর্স করা শুরু করেছেন তিনি।
আর সেই বাধ্য হওয়াটা মূলত আগামী ছবির জন্য। সেখানে নোয়াখালীর মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করতে হবে শবনম বুবলিকে। ইতোমধ্যে অনেকটাই রপ্ত করে ফেলেছেন তিনি। আর তার একটা নমুনাও দেখিয়ে দিয়েছেন নিউজ টোয়েন্টিফোরের ঈদ আড্ডায়।

এদিন উপস্থাপিকা বাধন অভিনেত্রী বুবলিকে নোয়াখালীর ভাষায় সংবাদ পাঠ করে শোনাতে বললে বুবলি প্রথমে কিছুটা ইতস্থত করেন। পরে সাবলীলভাবেই তিনি নোয়াখালীর ভাষায় সংবাদ পাঠ করে শোনান। তাও কোন স্ক্রিপ্ট ছাড়া।  

বুবলির সেই খবর পাঠটা ছিল ঠিক এমন- ''আসসালামু আলাইকুম। আন্নেগো ব্যাকটিরে নিউজ টোয়েন্টিফোরের ঈদ আড্ডায় আমন্ত্রন জানাইয়ের। আঁই বুবলি আন্নেগো লগে আছি। আঁর দুগা মুভি- অহঙ্কার আর রংবাজ এই ঈদে রিলিজ অইছে। আন্নেরা ফ্লিজ, হলে যাই আঁর দুগা মুভি দেইকবেন। থ্যাংকিউ। ''

এদিন ঈদ আড্ডায় এসে বুবলি ভাগাভাগি করেন তার ছবিতে আসার গোড়ার কথা, নানা প্রতিবন্ধকতা, নিজের চিন্তা-চেতনা, ভবিষ্যৎ ভাবনার কথা। জানান সংবাদ পাঠিকা থেকে চলচ্চিত্রের নায়িকা হতে গিয়ে তাকে কতটা বেগ পেতে হয়েছে।  

বাধনের সাবলীল উপস্থাপনা আর সদাহাস্য বুবলির আলাপচারিতায় এদিন জমে ওঠে ঈদ আড্ডা।

সংবাদ পাঠিকা থেকে চলচ্চিত্রের নায়িকা; শুরুটা কীভাবে ছিল? কোন সমস্যা হয়নি? উপস্থাপিকার এমন প্রশ্নের জবাবে বুবলির প্রথম কথা ছিল, 'খুব ভয়ঙ্কর সেই অভিজ্ঞতাটা। '

এরপর বুবলি বলতে থাকেন অনেক না জানা কথা। বুবলির বলেন, তখন আমার একটা রানিং প্রফেশন ছিল। একটা নিউজ চ্যানেলে প্রেজেন্টার ছিলাম। এমবিএ করছি। পড়াশুনার চাপ ছিল। চ্যানেলে তো অনেকেই অনেক সময় আসে। আমি বিভিন্ন সময় অভিনয়ের এমন অফার পেয়েছি। কখনোই সাড়া দেইনি। আসলে কোন প্লানিংই ছিল না। আমার পরিবারেও কেউ অভিনয়ে নেই। একদিন হঠাৎ একটা ফোন কল পাই। শাকিব খান নিজেই কন্টাক্ট করেন। রনি ভাইও কন্টাক্ট করেন। উনারা হয়ত নিউজ দেখছিলেন বা আড্ডা দিচ্ছিলেন। তিন চার বার কল আসলেও অপরিচিত নম্বর দেখে ধরিনি। পরে মেসেজ পাঠান। আমি কিছুটা অবাক হই। এরপর ফোন রিসিভ করি। দু'জনের সঙ্গেই কথা হয়। উনারা আমাকে বলেন যে, একটা নতুন মুভির প্লানিং করছেন। ছবির নাম 'প্রিয়া রে'। এর গল্পটাই ডিমান্ড করছে নতুন একটা মেয়ে। উনারা আমার নিউজ দেখেছেন। বলেন, আমি আগ্রহী হলে অভিনয় করতে পারি।

আমি সিদ্ধান্ত দিতে পারিনি।  আমার তো পরিবারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার আছে। তার উপরে একটা পেশা ছেড়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা পেশায় যাওয়া....। আমি জানি আমার পরিবার কখনোই রাজি হবে না।  

দু'দিন পরে আবার ফোন আসে। রনি ভাই ছবির গল্পটা বলেন। আমি বাসায় বলেছি কিনা জানতে চান। আমি উনাকে বলি এখনো বাসায় কথা বলতে পারিনি। তখন আবার শাকিব খান একটা ছবির শ্যুটিংয়ে দেশের বাইরে।

একদিন ভয়ে ভয়ে দুপুরের দিকে আম্মুকে বললাম। আম্মু বললেন- এটা কখনোই সম্ভব না। তিনি নানা কথা বললেন। আব্বুও রাজি হবেন না তাও বললেন। এর যৌক্তিকতাও আছে। কয়েক বছর আগে সিনেমায় একটা খারাপ ট্রেন্ড চালু হয়েছিল। সেই থেকে সবার মনে একটা ধারণা জন্মেছিল যে, এই জগৎটা ভালো না। কিন্তু, এখন অনেক ভালো ছবি হচ্ছে। ওই খারাপ ট্রেন্ডটা আর নেই। আমি আম্মুকে ম্যানেজ করতে বললাম। আম্মু বাপিকে বললো। বাপিও না বললেন। বোনরা আরও বেশি শাসন করে আমাকে। তারা যখন শুনলো তখন আপুরা, দুলাভাইরা আমার সঙ্গে আট মাস কথা বলেননি। অনেকেই হয়ত মনে করবেন এটা বলার জন্য বলছি। কিন্তু এটাই সত্যি। আমি জানি আমি কি মোকাবেলা করেছি।  

রনি ভাই আবার ফোন করে বাসায় আসতে চাইলেন। উনারা বাসায় এসে আম্মু-আব্বুকে বোঝালেন। তখন আম্মু-আব্বু একটু স্বাভাবিক হলেন। কিন্তু আপুরা, দুলাভাইরা কোনমতেই রাজি হলেন না। আপু-দুলাভাইরা পরিচালক, প্রযোজক সবার নামে মামলা করতে চেয়েছিলেন। উনারা যাতে আমাকে ছবিতে না নেয় সেজন্যই এটা চেয়েছিলেন তারা। অন্যরকম একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। অনেক ঝামেলার পর অবশেষে অভিনয়ে পা রাখি।  

ঈদের দিনে সময় কাটানো প্রসঙ্গে বুবলি বলেন,  ঈদ তো আনন্দের। তবে মুভি রিলিজের বিষয় থাকলে আনন্দের সঙ্গে টেনশনও থাকে। এমনিতে বাবা-মা, ভাই-বোনের সঙ্গেই ঈদ শুরু হয়। যেহেতু আমি বোনদের মধ্যে সবার ছোট, আম্মু রান্না ঘরে যেতে দিতে চায় না। বড় আপুরাও বলে আমরা করছি, তুমি খাও। ইদানিং আপুরা বলে আর কত মেয়েকে আদরের দুলালী করে রাখবে? কিছু তো করতে হবে। রান্না-বান্না। আমি একটা দুইটা রেসিপি করি।

কেমন হয় রান্না? সঞ্চালকের এমন প্রশ্নে একটু দ্বিধায়ই বোধহয় পড়ে যান বুবলি। নিজের রান্নার প্রশংসা নিজেই করবেন? তবে সামলে নেন বুদ্ধিমত্ত্বার সঙ্গে উত্তর দিয়ে।

বলেন, 'সেটা তো খেয়ে দেখতে হবে। সবাই তো ভালোই বলে। আর আমি স্পাইসিটা একটু বেশি পছন্দ করি। '

গত কোরবানির ঈদে বুবলির জোড়া সিনেমা মুক্তি পায়। এবার কোরবানির ঈদেও মুক্তি পেয়েছে দু'টি ছবি। ঈদে হলে ছবি দেখতে যাওয়া হয় কিনা এমন প্রশ্নে বুবলি বলেন, গত বছর গিয়েছিলাম আমার ছোট ভাইকে নিয়ে, বোরখা পরে। দর্শকদের সঙ্গে নিজের মুভি দেখার আনন্দটাই আলাদা।

এভাবে চলতে থাকে কথপোকথন। পুরো ঈদ আড্ডা দেখুন ভিডিওতে-

সম্পর্কিত খবর