যে গ্রামে জমজের ছড়াছড়ি, কিন্তু কেন?

যে গ্রামে জমজের ছড়াছড়ি, কিন্তু কেন?

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

কোডিনহি, ভারতের কেরালা রাজ্যের প্রত্যন্ত একটি গ্রাম। কিন্তু বর্তমানে এই গ্রাম বিশ্বজোড়া পরিচিতি পেয়েছে 'জমজদের গ্রাম' হিসেবে। বিজ্ঞানীরাও স্তম্ভিত এখানকার জমজদের ক্রমবর্ধমান জন্মহার দেখে!

গ্রামের রাস্তাঘাটে, খেলার মাঠে, স্কুলে বা অফিসে সর্বত্র জোড়ায় জোড়ায় মুখ দেখতে পাবেন। এমন অলৌকিকতায় চমকে যেতে বাধ্য।

স্থানীয় এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, তার স্কুলেই ১৭ জোড়া জমজ আসে প্রতিদিন। আবার খেলার মাঠে যমজ খেলোয়াড়দের নিয়েও দর্শকরা মাঝে মাঝে বিভ্রান্তিতে পড়েন। ব্যাপারগুলো যেমন মজার তেমনই আশ্চর্যের। কোচি বন্দরের মাত্র ১৫০ কিলোমিটার দূরত্বে এই গ্রামে ঢুকে এমনই দেখবেন।

ভাবছেন, সত্যিই কি তাই?  

news24bd.tv

সার্কাস বা পেশাদার থিয়েটার নয়, আসলে মালাপ্পুরম জেলার কোডিনহি গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারেই রয়েছে জমজ ভাই-বোন। গ্রামে ঢোকার আগেই সাইনবোর্ডে দেখতে পাবেন, 'ঈশ্বরের একান্ত আপন জমজদের গ্রাম -কোডিনহি। '

এখানে হাজারটি জন্মের মধ্যে ৪২টি জন্মই জমজদের। ২০০৮ এর পরিসংখ্যানে তাকালে দেখা যাবে, এই গ্রামে জন্ম নিয়েছিল ২৬৪ জমজ শিশু, সংখ্যাটা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫০ তে। সারা বিশ্বে জমজ সন্তান প্রসবের যে হার, কেরালার এই গ্রামে সে হার প্রায় ছয় গুণ বেশি। গ্রামের ৮৫ শতাংশ মানুষ মুসলিম হলেও হিন্দুদের মধ্যেও জমজ সন্তান জন্মের হার একই রকম।

news24bd.tv

জমজের জন্মের এই আশ্চর্য ঘটনা বিশ্বে কেবল কোডিনহিতে নয়, আরও দু'টি গ্রামেও ঘটে। নাইজেরিয়ার ইগবো ওরা এবং ব্রাজিলের ক্যানডিডো গডোই নামের গ্রামে। এই দু'টি গ্রামের জমজ সন্তান জন্মের ব্যাখা অবশ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু এই ইন্টারনেটের যুগে এসেও বিজ্ঞানীরা সঠিকভাবে কোডিনহির ব্যাখা দিতে পারছেন না।

গ্রামটিতে জমজ শিশু জন্মের এই ধারা শুরু হয়েছিল ৬০-৭০ বছর আগে। জমজের সংখ্যা এরপর ক্রমেই বাড়ছে।  

দেখা গেছে, বিয়ের পর কোনও নারী এই গ্রামে এলে তিনিও জমজ সন্তান প্রসব করছেন।

স্থানীয় চিকিৎসক শ্রীবিজু জানিয়েছেন, পাশ্চাত্যের মতো এ গ্রামে সন্তান জন্মের জন্য কোনো কৃত্রিম পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় না। সাধারণত কম বয়সী নারীরাই প্রথমবারের মাতৃত্বে এমন জমজ সন্তানের অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন। আর গ্রামবাসীরা তো জমজ জন্মের এই ব্যাপারটিকে ‘ঐশ্বরিক আশীর্বাদ’ বলে ধরে নিয়েছেন।

news24bd.tv

গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক জমজরা এখনও বেঁচে আছেন। কুনহি এবং পাথুটি নামের সত্তরোর্ধ্ব এই দুই বোনের দাবি, সবটাই ঈশ্বরের আশীর্বাদ। বিজ্ঞান কিছুই করে উঠতে পারবে না। তারা তো জমজ পেরিয়ে এখন ট্রিপ্লেট (তিনটি বাচ্চার একসঙ্গে জন্ম) আর কোয়াড্রপ্লেট মানে চারটে বাচ্চাও জন্মাতে দেখছেন।

তবে বিজ্ঞানীরা হাল ছেড়ে দেননি। জমজ জন্মের নেপথ্যে জেনেটিক, অর্থাৎ জিনগত নাকি আবহাওয়ার কারণ দায়ী, তার পরীক্ষা চলছে। বিভিন্ন দেশ থেকে বিজ্ঞানীরা ভারতের এই কোডিনহি গ্রামে এসে জমজদের বিভিন্ন জৈবিক নমুনা সংগ্রহ করে চলেছেন।  

২০০৬ সালে এই জমজদের সুরক্ষার জন্য সমিতিও গড়ে উঠেছে। দুঃস্থ জমজদের পরিবারকে সাহায্যের জন্য এই সমিতি গড়ে তোলা হয়েছে। ভারতে এমন সমিতি আর নেই। আপাতত সারা বিশ্বের গণমাধ্যমের চোখের মনি এই গ্রামে। দেখা যাক, আরও কত জমজের জন্ম হয় এই গ্রামে!

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর