চট্টগ্রামের বৃহত্তম মাদক আখড়া গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন

চট্টগ্রামের বৃহত্তম মাদক আখড়া গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

চট্টগ্রাম নগরীর সবচেয়ে বড় মাদকের আখড়া বরিশাল কলোনির বিভিন্ন অস্থায়ী ঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন। এ সময় প্রায় শতাধিক মাদক বিক্রি ও সেবনের স্পট ধ্বংস করা হয়েছে। ১৯৮০ সালে রেলওয়ের জায়গায় গড়ে ওঠা মাদকের আখড়াটিতে এই প্রথমবার বড় ধরনের উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলো।

আজ (২৩ মে) সকাল ১১ টা থেকে নগরীর আইসফ্যাক্টরি রোডে বরিশাল কলোনিতে এই অভিযান শুরু হয়।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মোস্তাইন হোসেনের নেতৃত্বে অভিযানে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম, কোতয়ালী ও সদরঘাট থানা পুলিশ, কমিউনিটি পুলিশ, রেল কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ছিলেন।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো.আব্দুর রউফ বলেন, বরিশাল কলোনি এবং মালি কলোনিতে বানানো ছোট ছোট খুপড়ি ঘরে বসে মাদকের আসর। সমাজ কল্যাণ সংঘ নামে একটি ক্লাব ব্যবহৃত হয় মাদকের আসর হিসেবে। এই ধরনের ছোট-বড় মিলিয়ে কমপক্ষে ১শ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

এখন থেকে এখানে পুলিশের কঠোর নজরদারি এবং পাহারা থাকবে।

রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দকৃত বাসার সঙ্গে বরাদ্দপ্রাপ্তরা অস্থায়ী ঘর তুলে সেগুলো ভাড়া দিয়েছেন। মূলত এসব ঘরই ব্যবহৃত হচ্ছে মাদকের আসর হিসেবে। অভিযানের সময় শাবল দিয়ে ঘরের দরজা ভেঙ্গে ফেলা হয়। পাকা দেওয়ালও ভেঙ্গে ফেলা হয়।

অভিযানে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ভূসম্পদ বিভাগের কানুনগো আব্দুস সালাম উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, রেলওয়ের কোন কোন কর্মকর্তা বরাদ্দপ্রাপ্ত আছেন এবং কারা অবৈধভাবে আছেন, এটার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। খুব শিগগিরি এই তালিকা পুলিশকে দেওয়া হবে।

সদরঘাট থানার ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, আমার থানা থেকে চিঠি দিয়ে রেলের কাছে তালিকা চাওয়া হয়েছে। এটা পেলে কারা অবৈধভাবে বসবাস করে মাদকের ব্যবসা করছে সেটা নির্ধারণ করা সহজ হবে। এখন আমরা রেলের নির্মিত ঘর ছাড়া বাকি সব গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ঝোপঝাড়ও কেটে ফেলা হয়েছে।

কোতয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন জানান, ১৭ মে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে বরিশাল কলোনিতে হাবিব ও মোশাররফ মারা গেছে। এরপর আরকে গ্রুপ মাদকের আখড়ার নিয়ন্ত্রণ নিতে এলেও সদরঘাট থানা পুলিশ তিনজনকে আটকের পর সেই চেষ্টা ভন্ডুল হয়েছে। এরপর গত কয়েকদিন এখানে মাদক বিক্রি ও সেবন বন্ধ ছিল। আমরা স্থায়ীভাবে এটা বন্ধ করতে বিভিন্ন স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছি।

পুলিশের দেয়া তথ্যমতে, বরিশাল কলোনির নিয়ন্ত্রক মাদক সম্রাট ফারুক ওরফে বাইট্যা ফারুক ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর সেই মাদক আখড়ার অদূরে আইস ফ্যাক্টরি রোডে র‌্যাবের সঙ্গে ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হয়। ফারুকের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন ইউসুফ। তার সঙ্গে ছিলেন সালামত। খসরু ছিলেন ফারুকের ম্যানেজার। খসরুর ভাই শুক্কুরও ছিলেন এই সিন্ডিকেটে। মূলত তারাই ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বরিশাল কলোনির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক ছিলেন। ফারুক মারা যাবার পর তার ভাই শুক্কুরের সন্দেহ হয়, ইউসুফ এবং সালামত মিলেই ফারুককে র‌্যাবের হাতে ধরিয়ে দেয়। এই সন্দেহ থেকে তাদের সিন্ডিকেটে ভাঙ্গন ধরে। শুক্কুর তাদের গ্রামের বাড়ি পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের নন্দেরখীল গ্রামে চলে যান। ম্যানেজার খসরু টাকাপয়সা নিয়ে পালিয়ে যায়। বরিশাল কলোনির নিয়ন্ত্রণ চলে আসে ইউসুফ ও সালামতের কাছে।

সর্বশেষ র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়া হাবিব এবং মোশাররফ ছিলেন ইউসুফ-সালামত সিন্ডিকেটের সঙ্গে। বন্দুকযুদ্ধের ঘটনার পর এই সিন্ডিকেটের সবাই পালিয়ে যান। বন্দুকযুদ্ধের ঘটনার রাত পার হওয়ার পরেই শুক্কুরের লোকজন বরিশাল কলোনিতে এসে নিয়ন্ত্রণ নেয়।

পুলিশ জানায়, বরিশাল কলোনির ভেতরে মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রনে ছোট ছোট স্পট আছে যেগুলোকে তাদের ভাষায় ‘গিরা’ বলা হয়।

বরিশাল কলোনির ভেতরে মালি কলোনিতে ৮ নম্বর ব্লকে টিটির গিরা নামে একটি স্পট আছে যেটি মাদক ব্যবসায়ীদের অফিস কক্ষ হিসেবে ব্যবহার হয়। স্টেশন কলোনিতে একটি স্পট আছে যেটি নাজমার গিরা নামে পরিচিত।

এছাড়া স্বপন বড়ুয়ার গিরা, ডান্ডির গিরা, হালিম সাহেবের গিরা নামে আরও কয়েকটি স্পট আছে। অভিযানে ২০০ পুলিশ সদস্য অংশ নেন।

অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর