ফেনীতে টাকা না দেয়ায় বন্দুকযুদ্ধে হত্যার অভিযোগ

ফেনীতে টাকা না দেয়ায় বন্দুকযুদ্ধে হত্যার অভিযোগ

ফেনী প্রতিনিধি

ফেনীতে বন্দুকযুদ্ধে ২ যুবক নিহত হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করলেও স্বজনরা বলছেন, বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে তাদের। তাদের দাবি, টাকা চেয়ে না পেয়ে তাদেরকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, মাদকের টাকায় তাদের পরিবার চলতো বলে এমন মনগড়া কথা বলছেন স্বজনরা। মাদক চোরাচালানের সময় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ওই দুইজন নিহত হয়েছেন।

এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। নিহতদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি এলজি, তিনটি কার্তুজ ও ২০০ বোতল ফেন্সিডিলসহ ৭০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ভোরে ফেনীর ফুলগাজীর আনন্দপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী জামমুরা এলাকায় ভারত থেকে মাদক পাচার হচ্ছে এমন গোপন সংবাদের পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান চালায়।

এসময় মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এক পর্যায়ে অপররা পালিয়ে গেলেও শাহ মিরান শামীম (২৫) ও মজনু মিয়া মনির (২৩) গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে ফেনী  সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।  

তবে স্বজনদের দাবি, ওই দুজনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে পুলিশ টাকা দাবি করে, পরে রাতে তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়। পুলিশ ঘটনাটিকে বন্দুকযুদ্ধ বললেও শামীমের পরিবার অভিযোগ করে বলছে, ফুলগাজী থানা পুলিশ বুধবার দুপুরে তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে মনিরকে রাতে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছে তার পরিবার। একপর্যায়ে রাতে খবর দিয়ে উভয়ের স্বজনদের কাছে টাকা দাবি করে পুলিশ। পরে টাকা না দিলে বন্ধুকযুদ্ধ নাটক সাজিয়ে তাদের হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ দুই পরিবারের।

শামীমের মা আনোয়ারা বেগম বলেন, বুধবার দুপুরে বাড়ির পাশের জমিতে গরুর জন্য ঘাস কাটছিল তার ছেলে। বেলা ২টার দিকে ফুলগাজী থানার এসআই শফিক এসে সেখান থেকে শামীমকে নিয়ে যায়। পরে পুলিশ আমাদের কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে না পারায় রাতে ওকে গুলি করে হত্যা করেছে।

একই ধরনের অভিযোগ করেছেন মজনু মিয়া মনিরের বোন রেজিনা বেগম। তিনি বলেন, গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে এসে একদল লোক বুধবার রাতে ফেনী শহরের বড় মসজিদ এলাকায় মনিরের বোনের বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তার পরিবারের কাছে দেড় লাখ টাকা দাবি করা হয়।

তিনি আরও বলেন, রাতে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গেলে আমাদের তাড়িয়ে দেয়। টাকা দিতে না পারায় ভোররাতে পুলিশ মনিরকে গুলি করে মেরেছে।

রেজিনা বলছেন, তার ভাই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। তার চাচা বিএনপির রাজনীতি করেন। পুলিশ ‘ষড়যন্ত্র’করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। দফায় দফায় তারা পুলিশকে মোটা অংকের টাকাও দিয়েছেন।

তবে ফুলগাজী থানার ওসি হুমায়ুন কবীর এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পুলিশ কাউকে বাড়ি থেকে তুলে আনেনি। টাকা চাওয়ার কোনো ঘটনাও ঘটেনি। মাদকের টাকায় তাদের পরিবার চলতো বলে স্বজনরা এসব মনগড়া অভিযোগ করেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, চোরাকারবারিরা মাদকের চালান নিয়ে ভারত সীমান্ত দিয়ে দক্ষিণ আনন্দপুর গ্রামে প্রবেশ করেছে খবর পেয়ে পুলিশ রাতে সেখানে অভিযানে যায়। জামুয়া রাস্তার মাথায় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি করে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে উপজেলার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী শামীম ও মনির গুলিবিদ্ধ হয়। তাদের ফেনী জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওসি হুমায়ুন বলছেন, এই অভিযানে পুলিশের আট সদস্য আহত হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি এলজি, তিন রাউন্ড কার্তুজ, ৭০০ ইয়াবা ও দুই শতাধিক বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে।

ফেনীতে কথিত বন্দুকযুদ্ধে গত ৯ দিনে ছয়জন নিহত হয়েছে।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/কেআই)

সম্পর্কিত খবর