‘রাতে নারীদেরকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হতো’

‘রাতে নারীদেরকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হতো’

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

বিদেশে চাকরি নিয়ে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে গত এক মাস আগে সৌদি আরব গিয়েছিলেন মাজেদা বেগম। কিন্তু ভাগ্য বিড়ম্বিত এই হতভাগিনীর কপালে চাকরির পরিবর্তে জুটেছে নির্যাতন। মাজেদাকে সৌদি আরবে নিয়ে একটি চক্র আটকে রেখে মুক্তিপণের দাবিতে শারীরিক নির্যাতন চালাতো।

পরশু (২৪ মে) সৌদি আরব থেকে ফেরত আসেন মাজেদা বেগম।

তার বাড়ি টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বানিয়ারছিট গ্রামে।

নানা ভয়ে নিজের বাড়িতে না উঠে উপজেলার হলুদিয়াচালা গ্রামের ভগ্নিপতি আশ্রফ আলীর বাড়িতে উঠেছেন মাজেদা। শুক্রবার বিকালে ওই ভগ্নিপতির বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।

মাজেদা বেগম জানান, বৃহস্পতিবার সকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন তিনি।

ওইদিন দুপুরে টাঙ্গাইলের সখীপুরের হলুদিয়াচালা গ্রামের ভগ্নিপতির বাড়িতে পৌঁছান।

তিনি বলেন, ‘আমাকে সৌদির রিয়াদের একটি ঘরে আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতনসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালানো হতো। আমার সঙ্গে আরও ৪০ জন নারী ছিলেন। তাদের রাতে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হতো। অনেক সময় পর ওই রাতেই আবার ঘরে এনে মারধর করা হতো। সেখানে এক বেলা শুধু লবণ দিয়ে খাবার দিত। আমার সঙ্গে থাকা ওই নারীদের রক্ষারও দাবি করছি। ’

মাজেদা বেগমকে ‘ঢাকার নয়াপল্টনের বি.এ অ্যাসোসিয়েটস নামের একটি এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরবে পাঠায় টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বানিয়ারছিট গ্রামের স্থানীয় দালাল সাইফুল ইসলাম। সে একই এলাকার মহর আলীর ছেলে ও সাবেক ইউপি সদস্য।

মাজেদা বেগমের মেয়ে শম্পা আক্তার বলেন, ‘সৌদি পাঠানোর প্রায় ১৫ দিন পরও তার মা মাজেদা বেগমের কোনো খবর পাচ্ছিল না তারা। হঠাৎ একদিন বাড়িতে মাজেদা বেগম ফোন দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন- আমাকে দেশে ফেরত নিয়ে যাও। আমাকে রিয়াদ শহরের একটি ঘরে আটকে রেখে মারধর করছে ওরা। ’ তিনি সেসময় আরও জানিয়েছিলেন, বেশ কয়েকজন নারীকে সেখানে একসঙ্গে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে।

শম্পা আক্তারের ভাষ্য বলেন, ‘সাইফুল দালাল আমার মাকে সৌদি পাঠায়। সৌদি যাওয়া বাবদ ৬০ হাজার টাকা দেয়ার কথা ছিল। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সাইফুল দালালকে নগদ ৩৫ হাজার টাকা দেয়া হয়। বাকি টাকা বেতন থেকে কেটে নেওয়ার কথা ছিল। মাকে সৌদি নিয়ে সাইফুল দালালের লোকজন আটকে রাখে। মাকে দেশে ফেরত আনতে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকাও দাবি করেছিল দালাল সাইফুল।

মাজেদার মেয়ে আরো বলেন, ‘কয়েকদিন আগে সাইফুল তাদের বি.এ অ্যাসোসিয়েটস-এ তাদের নিয়ে যায়। সেখানেও ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। ’

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য কিসমত আলী জানান, মাজেদার পরিবারটি খুবই দরিদ্র। মাজেদার স্বামী দিনমজুর খাটতো। তবে এখন অসুস্থ। শুনেছি মাজেদা বেগমকে সৌদিতে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হচ্ছে।

তবে অভিযুক্ত স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম মুক্তিপণ হিসেবে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেও মাজেদার ওপর সৌদিতে নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, ‘ঢাকার নয়াপল্টনের বি.এ অ্যাসোসিয়েটসের মাধ্যমে মাজেদা বেগমকে সৌদি আরবে পাঠানো হয়েছে। জেনেছি সেখানে তাকে নির্যাতন চালানো হয়েছে। মাজেদা বেগম তার চেষ্টায় সৌদি থেকে দেশে ফেরত এসেছেন। ’

এ ব্যাপারে সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম তুহিন বলেন, ‘এ বিষয়ে নির্যাতিতা নারী অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ’

অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর