টেঁপা পচা রোগে আক্রান্ত মরিচ, বিপাকে চাষীরা

টেঁপা পচা রোগে আক্রান্ত মরিচ, বিপাকে চাষীরা

সরকার হায়দার • পঞ্চগড় প্রতিনিধি

আবহাওয়ার পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে পঞ্চগড়ের ‌‘লাল সোনা’ খ্যাত মরিচের আবাদে টেঁপা পচা রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। এতে আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে মরিচের ফলন।  

বাজারে মরিচের চাহিদা ও মূল্য চড়া থাকলেও ফলন কম হওয়াতে খুব একটা লাভের মুখ দেখতে পারছেন না মরিচ চাষীরা। চাষীদের অভিযোগ, কৃষি বিভাগের কোনো সহায়তা মিলছে না  তাদের পরামর্শ ও সহায়তা পেলে লাভের পরিমাণ দ্বিগুণ হতো বলে জানান তারা।

 

বোদা উপজেলার হাবসি পাড়া গ্রামের  মরিচ চাষী দেলোয়ার হোসেন (৫৫) নিউজ টোয়েন্টিফোরকে জানান, বাজারে মরিচের দাম ভালো রয়েছে, মণ প্রতি চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা। কিন্তু টেঁপা পচা রোগ ছড়িয়ে পড়ার কারণে এবার খুব বেশি লাভ হবেনা । দাম স্থিতিশীল থাকলে লোকসানও হবেনা । কিন্তু ফলন কমে গেলে চাষীদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

এবার মরিচের ফলন খুব কম হয়েছে।

news24bd.tv

জেলার ৫ উপজেলার মধ্যে আটোয়ারী এবং বোদার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীরা প্রতিবছর হাজার হাজার টন মরিচ উৎপাদন করে থাকেন । দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে পঞ্চগড়ের এই শুকনো মরিচ। অন্যান্য ফসলের থেকে মরিচের উৎপাদন খরচ কম হওয়ার পাশাপাশি অল্প সময়ে বেশি লাভ করা যায়। তাই এ অঞ্চলের চাষীরা প্রতিবছর এই আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন।  

কিন্তু এ বছরের চিত্রটা মরিচ চাষীদের জন্য বিষাদের। চাষীরা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় আবাদে ছড়িয়ে পড়েছে টেঁপা পচা রোগ। ফলে গাছের চেহারা ভাল থাকলেও মরিচে পচন ধরছে। আবাদের অর্ধেক মরিচই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

এদিকে, ভারি বর্ষণ ও শিলাবৃষ্টির মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় পাকা মরিচ শুকাতে পারছেনা চাষীরা। বাধ্য হয়ে ঘরে স্তুপ করে রাখতে হচ্ছে তাদের। যার ফলে পঁচে যাচ্ছে পাকা মরিচ। আবার, বৃষ্টির কারণে ক্ষেতে পানি জমে যাওয়া ও তুলতে না পারার কারণে অনেক ক্ষেত্রে গাছেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মরিচ।  

news24bd.tv

চাষীরা জানিয়েছেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্থানীয় কার্যালয়ে জানানোর পরেও খোঁজ-খবর নিচ্ছেনা কেউই । এই দপ্তর থেকে দুর্যোগের মুহূর্তে কৃষকদের পরামর্শ দিলে দ্বিগুণ লাভ করা যেত বলে জানিয়েছেন তারা।

চাষীদের ভাষ্য, বিগত বছরে তারা এই মরিচ থেকে অনেক মুনাফা অর্জন করেছেন।  তাই এ বছর অনেকে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে মরিচের আবাদ করেছেন। অনেকে ধার-দেনাও করেছেন। কিন্তু চলতি বছর মরিচের পচন রোগের কারণে ফলনে বিপর্যয় ঘটেছে।  

আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের কৃষক কলিমউদ্দিন (৫০) বলেন, “আগের বার ১০ শতক জমিত মরিচের আবাদ করিছিনু। ভালো লাভ হইছিল। এইবার কিস্তির লোন নিয়া বিঘাখানেক কইছু। কিন্তুক টেঁপা পচা রোগে মরিচ পঁচে যাছে। কুনু অফিসার দেখিবা আসেনা হামাক। দামটা ঠিক রহিলে বাঁচি যাম। কমিলে মরিম বাহে। ”
 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের  উপ-পরিচালক শামছুল হক জানান, এ বছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ তুলনামুলক বেশি হওয়ায় মরিচে এ্যানথ্রাক্সনোস (পচন) রোগের কিছুটা প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এবং মাঠ পর্যায়ের উপ- সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষনিকভাবে কৃষকদের পাশে রয়েছে।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, পঞ্চগড় জেলায় চলতি বছর ৯৫০০হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের বাঁশগাইয়া, বিন্দু জাতের মরিচের চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দেশের সর্বোত্তরের এই জেলা থেকে প্রায় ৬শ মেট্রিক টন মরিচ উৎপাদন সম্ভব হবে।  

হায়দার/অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর