‘মার্কিন মোড়লিপনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান’

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ।

‘মার্কিন মোড়লিপনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান’

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

মার্কিন স্বৈরাচারী ও মোড়লিপনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ। তিনি বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাছে লেখা চিঠিতে ওই আহ্বান জানান।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার চিঠিতে পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকার বেরিয়ে যাওয়া, মার্কিন স্বেচ্ছাচারী নীতি মেনে নিতে অন্য দেশের ওপর ওয়াশিংটনের অব্যাহত চাপ ও হুমকি, আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতির প্রতি অবজ্ঞা, জোরজবরদস্তি করা ও আইনের শাসনকে আমেরিকার তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, প্রতিটি দেশের উচিত মার্কিন এ স্বেচ্ছাচারী আচরণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাম্ভিকতা, বলদর্পিত ও স্বেচ্ছাচারী আচরণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, পরমাণু সমঝোতাসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক চুক্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো থেকে শুরু করে বিশ্বের সব দেশকে ভয়-ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওয়াশিংটনের আনুগত্য করতে বাধ্য করার চেষ্টা করছেন ট্রাম্প।

এ থেকে বোঝা যায় গায়ের জোরে সারা বিশ্বের ওপর মোড়লিপনার চেষ্টা করছেন তিনি। তার এ আচরণ নিঃসন্দেহে সারা বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বড় ধরণের হুমকি।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকার বেরিয়ে যাওয়া, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া, নিজের অবৈধ স্বার্থ হাসিলের জন্য জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি ও তার অপব্যবহার করা, ফিলিস্তিনিদের অধিকার উপেক্ষা করে তেলআবিব থেকে বায়তুল মোকাদ্দাসে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর করা এসবই আমেরিকার স্বৈরাচারী ও মোড়লিপনাসূলভ আচরণের দৃষ্টান্ত। আমেরিকার এসব আচরণ কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত এবং এভাবে বিশ্বের প্রতিটি দেশকে টার্গেটে পরিণত করেছে।

এ অবস্থায় বিশ্বের দেশগুলোর এখন আর এটা বুঝতে বাকি নেই যে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় আমেরিকার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প পথ নেই। যাতে বিশ্বের জনগণ এটা না ভাবে যে আমেরিকা জাতিসংঘের নীতিমালা লঙ্ঘন করলেও সরকারগুলো মার্কিন এ অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেছে। বিশেষ করে বিষয়টি ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য মর্যাদার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ইউরোপকে স্বাধীন নীতি গ্রহণ করে আমেরিকার একতরফা নীতির বিরুদ্ধে রুখ দাঁড়াতে হবে।

'ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট' নামক ওয়েব সাইটের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যা কিছু বলছেন তার প্রতি ইউরোপের অন্ধ সামরিক ও রাজনৈতিক সমর্থন দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। কারণ মার্কিন রাজনৈতিক চিন্তা সবসময় ইউরোপের স্বার্থের অনুকূলে নয়। "

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকার একতরফা বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের বিরুদ্ধে ইউরোপের অবস্থান এবং ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগ্রামীদের নিন্দা জানানোর জন্য নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে আমেরিকার একঘরে হয়ে পড়ার ঘটনা মার্কিন একাধিপত্য নীতির বিরুদ্ধে ভালো লক্ষণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তাই ইউরোপের উচিত এখনই আমেরিকার কবল থেকে নিজেদের মুক্ত করা যাতে যেকোনো অবস্থায় আমেরিকার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ থেকে মুক্ত থাকতে পারে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরন পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকার বেরিয়ে যাওয়া এবং বিশ্ব অঙ্গনে আমেরিকার একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সমালোচনার করে বলেছেন, "আমরা যদি অন্যকে আমাদের নিরাপত্তা ও কূটনীতির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ দেই এবং আমাদেরকে বিপদের মুখে ঠেলে দেয় তাহলে বুঝতে হবে আমাদের কোনো ক্ষমতা নেই। সুতরাং আমাদের দুর্বল হলে চলবে না এবং আত্মসমর্পণ করা যাবে না।


(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর