আ’ লীগে নবীন-প্রবীণের লড়াই, আসন উদ্ধারই বড় চ্যালেঞ্জ বিএনপির
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নেত্রকোনা-২

আ’ লীগে নবীন-প্রবীণের লড়াই, আসন উদ্ধারই বড় চ্যালেঞ্জ বিএনপির

সোহান আহমেদ কাকন • নেত্রকোনা প্রতিনিধি

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বচনকে সামনে রেখে নেত্রকোনার প্রতিটি আসনেই বইছে ভোটের হাওয়া। সর্বত্রই আলোচনা চলছে কে হচ্ছেন আগামী দিনের জনপ্রতিনিধি। মোড়ে মোড়ে শোভা পাচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবি সম্বলিত প্রাথীদের ব্যানার-ফেস্টুন। বিশেষ করে রমজান মাস ও আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে প্রার্থীদের কর্মতৎপরতা বেড়েছে কয়েকগুণ।

প্রতিটি ইউনিয়নে ব্যক্তিগত ইফতার মাহফিলের আয়োজন করছেন দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

সংসদীয় আসন ১৫৮, নেত্রকোনা -২ (সদর-বারহাট্টা) আসনটি জেলার রাজনীতির মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলার ৫টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণও এটি। এই আসনটি দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে।

বর্তমানে এই আসনে মোট ভোটার রয়েছেন ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৩শ ৮৩ জন।  

১৯৯৬ সাল থেকেই আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে। ২০০১ সালেও নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৭ হাজার ১শ ৯৪ ভোট বেশি পেয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুল মমিন বিজয়ী হন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে ৮৪ হাজার ৫শ ৪ ভোট বেশি পেয়ে আশরাফ আলী খান খসরু নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালে প্রায় ৪০ হাজার ভোট বেশি পেয়ে নৌকার প্রার্থী, সাবেক জাতীয় ফুটবলার আরিফ খান জয় বিজয়ী হয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এতেই বোঝা যায়, ১৯৯৬ সাল থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে এই আসনে যেই নির্বাচন করেছেন, সেই বিজয়ী হচ্ছেন।  

তবে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই হারানো এই আসনটি ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠবে বিএনপি- এমনটাই ধারণা তৃণমূল কর্মীদের।  

এ আসনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে ফের মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়। সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা ও দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করায় মাঠ পর্যায়ে বেশ জনপ্রিয়তা ও আস্থা অর্জন করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী খান খসরু। এবারও মনোনয়ন চাইবেন তিনি।  

এ ছাড়াও মনোনয়ন চাইবেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান খান এবং সহ সভাপতি কর্ণেল নূর খান। নবীনদের মধ্যে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইবেন সদ্য পূর্ণাঙ্গতা পাওয়া জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুর রহমান ভিপি লিটন। তিনি ইতোমধ্যে বিভিন্ন ইউনিয়নে সভা-সমাবেশ, মসজিদ-মন্দিরে আর্থিক অনুদান ও রমজান মাসজুড়ে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে আসছেন। অনেক নেতা-কর্মীর মুখে এখন তার নাম।  

মনোনয়নের দৌঁড়ে রয়েছেন চিত্রনায়ক রানা হামিদ, সাবেক কাস্টমস অফিসার মুক্তিযোদ্ধা আবু আক্কাস,  সাবেক যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কৃষিবিদ সারোয়ার মোর্শেদ জাষ্টিজ, সুভ্রত সরকার চন্দনসহ অরো কয়েকজন। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণাকে কেন্দ্র করে ইফতার মাহফিলে এরই মধ্যে প্রার্থীদের তর্ক-বিতর্কের পাশাপাশি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে বলে শোনা যাচ্ছে।

এদিকে, গুরত্বপূর্ণ এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে জোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি আশরাফ উদ্দিন খান। এছাড়াও দলের নেতা-কর্মীদের সার্বিক সহযোগিতা ও দলমত নির্বিশেষে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করায় কিছুটা জনপ্রিয়তা রয়েছে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার আনোয়ারুল হকের। এবার মনোনয়ন চাইবেন তিনিও।  

আসনটি থেকে বিএনপির একমাত্র নারী নেত্রী হিসেবে মনোনয়ন চাইবেন সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ও জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী অ্যাডভোকেট ড. আরিফা জেসমিন নাহিন। তিনি দলীয় মনোনয়নের আশায় দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলে কাজ করে যাচ্ছেন। সেই সাথে কেন্দ্র ঘোষিত বিভিন্ন আন্দোলনে বিএনপির অংশগ্রহণ না থাকলেও  ড. আরিফা জেসমিন নাহিন কর্মসূচি পালনে জোর চেষ্টা চালিয়েছেন। যে কারণে বেশ কয়েকবার রাজপথ থেকে গ্রেপ্তারও হয়েছেন তিনি। মূলত তাকে নিয়েই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বিএনপির অন্যান্য প্রার্থীরা।  

এছাড়া নেতা-কর্মীদের পাশে নিয়ে দীর্ঘ সময় দলের জন্য কাজ করায় বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে সাবেক বারহাট্টা উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান খান রিজভীর নামও শোনা যাচ্ছে বেশ। শেষ পর্যন্ত তার কপালেও জুটতে পারে বিএনপির মনোনয়ন- এমন ধারণা বিএনপির সাবেক নেতাদের।  

এদের বাইরে কেন্দ্রীয় নেতা খোরশেদ আলম,আব্দুল বারী ড্যানি, জেলা বিএনপির সাংঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান দুদুসহ আরো অনেকেই দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন।

একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী খান খসরু জানান, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে বিগত সময়ে অবৈধ পথে টাকা উপার্জন করে অনেকেই টাকার পাহাড় গড়েছেন। তাই কালো টাকা সাদা করার জন্যই অনেকে মনোনয়ন প্রাপ্তির লড়াইয়ে নেমেছেন। কোনো রাজাকার বা আলবদর ক্যাটাগরির কেউ যেন মনোনয়ন না পায় সেদিকে সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। ’

তিনি আরো বলেন, ‘র্দীঘদিন ধরেই জেলার ৫টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়ে আসছেন। তবে আগামী নির্বাচন তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। তাই স্বাধীনতার পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের মুক্ত চেতনায় বিশ্বাসী এবং তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করে যোগ্য প্রার্থীতা বাছাই করলেই আগামীতেও আসনগুলো ধরে রাখা সম্ভব হবে। ’

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দলীয় কার্যক্রম চালাতে চরম বেগ পোহাতে হচ্ছে। কয়েক দফা বিএনপি অফিস ভাঙচুর, বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়ি-ঘর, ব্যক্তিগত চেম্বারসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা। ’

এছাড়াও নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে। আগামীতে নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে মনোনয়ন কাকে দিবে না দিবে- সেটা বড় কথা নয়, আসন উদ্ধারই হবে বিএনপির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই আগামী নির্বাচনের আগেই দলকে সাংগঠনিকভাবে গুছিয়ে তুলতে হবে। তৃণমূলে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের মনোনয়ন দিয়েই সামনের নির্বাচনে আসনগুলো আবারো বিএনপির দখলে আনা হবে। ’


কাকন/অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর