৭০ বছর খাবার খান না, তবুও জীবিত!

প্রহ্লাদ জানী। -সংগৃহীত ছবি

৭০ বছর খাবার খান না, তবুও জীবিত!

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

তিনি পাওহারি বাবা। অর্থাৎ, পবন-আহারি, যিনি পবন বা হাওয়া খেয়েই বেঁচে থাকেন! ৭০ বছর নাকি কোন খাবার না খেয়েই এই পৃথিবীতে টিকে আছেন! ভারতের গুজরাটের এই বাবাকে নিয়ে আলোচনা এখন সর্বত্র। যে কোন সমস্যার সমাধান নাকি তার কাছে কোন ব্যাপারই নয়। দেশ-বিদেশে অসংখ্য ভক্ত রয়েছে তার।

যদিও যুক্তিবাদীরা এই পবনহারির বাতাস খেয়ে বেঁচে থাকার বিষয়টি মানতে একেবারেই নারাজ।

গুজরাটের মেহসানায় চারোদ বা চারাদা গ্রামের বাসিন্দা এই যোগীর আসল নাম প্রহ্লাদ জানী। পরেন লাল কাপড়। কপালে লাল টিপ।

এক মুখ দাড়িগোঁফ। জাঙ্ক জুয়েলারিও পরেন তিনি। তার দাবি, সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি কিছু না খেয়েই রয়েছেন। ১৮ বছরের বয়সেই তিনি ঠিক করে নিয়েছিলেন, জীবনটা অন্য রকমভাবে কাটাবেন। তখনই শুরু হয় যোগাসন ও বায়ুসাধনা। এরপর ভাত, রুটি, ফল, সবজি, মাছ, মাংস- সব বাদ দিয়ে বাতাস খাওয়া শুরু করেন। প্রহ্লাদ জানীর দাবি, বাতাস খেয়ে তিনি বেশ সুস্থ ও সক্ষম আছেন। ভালো আছেন।

আগেও হইচই হয়েছে এই বাবাকে ঘিরে। এপিজে আবদুল কালাম রাষ্ট্রপতি পদে থাকাকালীন ২০১০ সালে দেশের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা (ডিআরডিও) ও কেন্দ্রীয় সরকারি গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরা টানা ১৫ দিন ধরে নজরদারি চালিয়েছিলেন প্রহ্লাদের ওপর।

এমআরআই, আল্ট্রাসোনোগ্রাফি, এক্স-রে অনেক কিছু করা হয়েছে। সূর্যের আলোয় টানা বসিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে তার শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন। তার শরীর থেকে রক্ত নিয়ে মাপা হয়েছে লেপটিনের পরিমাণ। কারণ এই মাস্টার হরমোন লেপটিনই নিয়ন্ত্রণ করে দেহের ওজন। দেখার চেষ্টা হয়েছিল, এই লেপটিনের কোনও রকম পরিবতর্ন হচ্ছে কি না প্রহ্লাদের শরীরে। যাকে বলে ‘এক্সট্রিম অ্যাডপটেশন’। কিন্তু সব মিলিয়ে রহস্যভেদ হয়নি।

কিন্তু এটা কি আদৌ সম্ভব? শুধু হাওয়া খেয়ে বেঁচে থাকা! যুক্তরাষ্ট্রের হেনরিফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পারিজাত সেন বলেন, এটা একেবারে ভাঁওতাবাজি। বাঁচতে গেলে সামান্য কিছু হলেও খেতে হবে। শরীরের সিস্টেম কিছুদিন পরই আর সাপোর্ট করবে না। এই পাওহারি বাবা স্রেফ গল্প।

অন্য দিকে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজের শারীরতত্ত্ব (অ্যানাটমি) বিভাগের স্পেশালিস্ট চিরঞ্জিৎ সামন্তর কথায়, এই ধরনের ঘটনার কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবে ফরেনসিক মেডিসিনে সাসপেনডেড অ্যানিমেশন বলে একটা শব্দ রয়েছে। কোনও মানুষের মৌল বিপাক ক্রিয়া অর্থাৎ বিএমআরএর হার খুব কমিয়ে রেখে একেবারে আলো-বাতাসহীন কোনও জায়গায় থাকলে তিনি বেঁচে থাকতে পারেন কি না এ নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু ৭০ বছর ধরে না খেয়ে বেঁচে থাকা? অসম্ভব!

প্রহ্লাদ জানীর প্রসঙ্গে শ্রীরামপুরের ওয়ালশ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বিয়াস সামন্ত বলেন, যোগী বাবা একেবারেই কিছু খান না তা হতেই পারে না। এসব একেবারে ভুল। বেঁচে থাকতে গেলে তো এনার্জি সোর্স চাই।

তার কথায়, 'সাসপেনডেড অ্যানিমেশনেও অসম্ভব এটি। দীর্ঘ দিন না খেয়ে থাকলে ত্বক, ফুসফুস, অগ্ন্যাশয় সর্বত্র প্রভাব পড়বে। ডিহাইড্রেশন হবে। চলাফেরার ক্ষমতা তো থাকবেই না। '

তবে, যতই বিতর্ক থাক বাবার আশ্রমে বিশিষ্টজনেরা কিন্তু প্রায়ই আসেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও পাওহারি বাবার আশ্রমে গেছেন আশীর্বাদ নিতে। অনেক রাজনীতিবিদ বা প্রভাবশালী ব্যক্তির দেখা মেলে ওই আশ্রমে গেলে।

হরেক জটিল সমস্যার নাকি সমাধান করে দেন পাওহারি বাবা! এর জন্য কোনো টাকা-পয়সাও নেন না। ৮৮ বছর বয়সে সারা বিশ্বের যুক্তিবাদী মানুষকে তুর্কি নাচন নাচাচ্ছেন এই প্রহ্লাদ জানী। বলছেন, ভালবাসা আর মা অম্বার কাছে প্রার্থনা; বেঁচে থাকতে গেলে নাকি মানুষের আর কিছুরই প্রয়োজন নেই!

এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায়ও আলোচনা-সমালোচনায় আছেন এই পাওহারি বাবা। কেউ কেউ পাওহারি বাবাকে মাসখানেক আটক রেখে পর্যবেক্ষণ করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে সেটা যে অসম্ভব তাও অজানা নয়। কারণ, কোন অপরাধে পাওহারিকে আটক করা হবে। আর আটক অবস্থায় যদি তার কোন ক্ষতি হয়, দায়ভার কে নেবে?

সম্পর্কিত খবর