ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে নিউইয়র্কে বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী।

ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে নিউইয়র্কে বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে

ঘুষ দিয়ে মামলা উঠিয়ে নেওয়ার চাপ সৃষ্টির অভিযোগে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী (৪৬) গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। একদিন জেলে থাকার পর ২১ জুন বৃহস্পতিবার রাতে জামিনে মুক্তি পান তিনি। ২ জুলাই তাকে কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে হাজির হতে বলা হয়েছে। রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে মামলার বিচারকার্যে বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগ এবং সাক্ষীকে ঘুষ দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ঈদের দিন নিউইয়র্ক সিটির উডসাইডে রুহুল আমিনের বাসা সংলগ্ন এক বাড়িতে দাওয়াত খেতে এসেছিলেন জহুরুল ইসলাম মিঠু। মিঠুর বাড়ি বিক্রমপুরে। তিনি উবার চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। খাওয়া শেষে ওই বাড়ির সামনে পার্ক করা ট্যাক্সিতে উঠেন।

ট্যাক্সি রাস্তায় বের করার সময় পেছনে এক মহিলাকে দেখতে পান বিটু। বিটু সতর্ক না থাকলে বড় ধরনের একটি দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিল বলে উল্লেখ করেন ওই মহিলার উদ্দেশ্যে। মহিলার নাম নাজমা ইসলাম। সঙ্গে স্বামী শফিক শাকিলও ছিলেন। এক পর্যায়ে মামুলি এই বাক-বিতণ্ডা মারপিটে পরিণত হয়। নাজমা ইসলাম রক্তাক্ত হন বলে প্রতক্ষদর্শীরা উল্লেখ করেন। এ অবস্থায় টহল পুলিশ এসে বিটুকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ ও এ্যাম্বুলেন্সের  শব্দ পেয়ে বাসা থেকে বের হন রুহুল আমিন।

কারণ, শফিক শাকিল এবং নামজা দম্পতি তার বাসাতেই আসছিলেন ঈদ-শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্যে। রুহুল আমিন ইয়েলো ট্যাক্সি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন এবং তার দিনের শিফটের পার্টনার হচ্ছেন নোয়াখালীর সন্তান শফিক শাকিল। মামুলি বিষয়ে মারপিটে লিপ্ত হবার সংবাদে রুহুল আমিন বিচলিতবোধ করেন।

বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ১১টায় জেল থেকে জামিনে মুক্তির পর টেলিফোনে এ সংবাদদাতাকে রুহুল আমিন আরো বলেন, ‘যেহেতু উভয় পক্ষই আমার পরিচিত, তাই প্রস্তাব দিয়েছিলাম কোর্টের ঝামেলায় না গিয়ে আপস-মিমাংসার। মামলা উঠিয়ে নেওয়ার শর্তে নাজমা ইসলাম মোটা অর্থ দাবি করলে বিটু ২০ হাজার ডলার দিতে সম্মত হন। সে অনুযায়ী একটি চেক দেওয়া হয় আমার সামনে। ওই সমঝোতার শর্ত অনুযায়ী ২০ জুন কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে হাজির হন উভয় পক্ষ। কিন্তু নাজমা ইসলাম মাননীয় আদালতকে অবহিত করেন, আমি নাকি তাকে চাপ দিয়েছি মামলা উঠিয়ে নিতে। বিনিময়ে নগদ অর্থও দিয়েছি ঘুষ হিসেবে। এরপরই মাননীয় আদালতের নির্দেশে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ’

রুহুল আমিন সিদ্দিকী উল্লেখ করেন, ‘নিবাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে সকল বাংলাদেশির কল্যাণে আমাকে কাজ করতে হয়। সে আলোকেই আদালতের ঝামেলায় না গিয়ে ওই মামলা নিষ্পত্তির চেষ্টা করেছিলাম। ’ ‘উল্টো বিপদে পড়লাম’-বলেন রুহুল।

ক্রিমিনাল কোর্টের এটর্নীরা এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘মামলা নিষ্পত্তির একটি রীতি আছে। সেটি অনুসরণ না করায় বিপদ ডেকে এসেছেন রুহুল আমিন। এ থেকে রেহাই পাওয়া মুষ্কিল হয়ে পড়বে। ’

ঘটনাটি কম্যুনিটিতে বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এ অবস্থায় কেউই আর মামলা-মোকদ্দমা নিষ্পত্তির সহজ পথে পা বাড়াবেন বলে মনে হয় না। তবে রুহুল আমিন মর্মাহত এবং বলেন, ‘মানুষের মঙ্গল করতে গিয়ে এমন পরিস্থিতির শিকার হব কল্পনাও করিনি। ’

সম্পর্কিত খবর