ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, ৫৭৫ নারী গ্রেপ্তার

ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত নারীরা।

ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, ৫৭৫ নারী গ্রেপ্তার

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে

মা-বাবার কাছে থেকে শিশুদের বিচ্ছিন্ন করা এবং অভিবাসীদের গ্রেপ্তার ও বহিষ্কার অভিযান বন্ধের দাবিতে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে আইন অমান্য আন্দোলনে অংশ নেয় হাজারে নারী। এ সময় ৫৭৫ জন নারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পুলিশের দাবি, আইন অমান্য করে রাস্তায় বিক্ষোভ করায় চলাচলে বিঘ্ন ঘটে সেই সঙ্গে অনুমতি না নিয়ে সমাবেশ করার জন্যে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।

সমাবেশ থেকে ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট তথা আইস বিলুপ্তির দাবি করা হয়।

ট্রাম্প প্রশাসনের আজ্ঞাবাহি হিসেবে এই সংস্থা মাঠে নেমেছে অবৈধভাবে বসবাসরতদের গ্রেপ্তারের জন্যে।  বিক্ষোভকারিরা অবিলম্বে সীমান্তে গ্রেপ্তার হওয়া বিদেশীদের প্যারলে মুক্তি প্রদানের দাবি জানিয়েছে।

এছাড়া, বেআইনীভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকালে গ্রেপ্তারদের সঙ্গে থাকা শিশু সন্তান কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এসব শিশুকে অবিলম্বে মা-বাবার কাছে ফেরৎ দেওয়ারও দাবিও করেছেন সকলে।

ক্যাপিটল হিলের সিনেট বিল্ডিংয়ের সামনে থেকে গ্রেপ্তার হওয়া সকলেই শ্বেতাঙ্গ এবং আমেরিকান। তবে তারা স্প্যানিশ ভাষায় স্লোগান দিয়েছেন। কারণ, গ্রেপ্তারদের ৯৮ শতাংশই হলেন স্প্যানিশ। এর মধ্যে কংগ্রেসওম্যান (ওয়াশিংটন-ডেমক্র্যাট) প্রমিলা জয়পাল এবং খ্যাতনামা অভিনেত্রী সুজান সারান্ডনও রয়েছেন।

ক্যাপিটল পুলিশ জানায়, হার্ট সিনেট অফিস বিল্ডিং এর আশপাশে ব্যাপক সমাগম ঘটে এবং গগনবিদারি স্লোগানে পুরো এলাকা প্রকম্পিত করা হয়। ফলে স্বাভাবিক কর্মজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছিল।

পুলিশ আরো জানায়, বারবার অনুরোধ সত্বেও নারীরা ওই স্থান ত্যাগ করেনি। অধিকন্তু তারা আইন অমান্য করে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।

২৮ জুন বৃহস্পতিবার অপরাহ্ন ৩টা থেকে শুরু হয় এ কর্মসূচি। স্লোগান উঠে, ‘আইস বিলুপ্ত করা’, ‘ইমিগ্র্যান্টদের ধর-পাকড় বন্ধ কর। ’ এ সময় ওই ভবনে থাকা ইউএস সিনেটর ক্রিস্টিন জিলিব্র্যান্ড (নিউইয়র্ক) এবং ট্যামি ডাকুয়ার্থ (ইলিনয়)সহ অনেকে হাত নেড়ে বিক্ষোভকারিদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন।  

সিনেট বিল্ডিং থেকে বিক্ষোভকারিদের সরিয়ে দিতে ঘন্টাখানেক সময় লেগেছে বলে পুলিশ গণমাধ্যকে অবহিত করে। ‘উইমেন্স মার্চ’ এবং ‘ক্যাসা দ্য ম্যারিল্যান্ড’ সহ বেশ কটি মানবাধিকার সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগে এই বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

কর্মসূচিতে নেতৃত্ব প্রদানকারিদের অন্যতম ‘সেন্টার ফর পপুলার ডেমক্র্যাসি’র নির্বাহী পরিচালক এ্যানা মারিয়া আরছিলা বলেন, আইসের বিলুপ্তি জরুরী হয়ে পড়েছে। এটি এখন সময়ের দাবি। কারণ, এই সংস্থার আচরণে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান লংঘিত হচ্ছে প্রতি পদে। এর অসভ্য আচরণে যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক গুণাবলী ভূলুন্ঠিত হচ্ছে। অভিবাসীদের রক্ত-ঘামে গড়ে উঠা আমেরিকায় এমন বর্বরতা সহ্য করা যায় না। এজন্যে আমরা রাজপথে নেমে আইন অমান্য কর্মসূচি নিতে বাধ্য হয়েছি।

হোয়াইট হাউজের সন্নিকটে ফ্রিডম প্লাজায় জড়ো হবার পর স্লোগানসহ মিছিল নিয়ে বিচার বিভাগীয় সদরদপ্তর হয়ে ক্যাপিটল হিলের সিনেট বিল্ডিংয়ের সামনে আসেন নারীরা।

প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, রিপাবলিকান শাসিত প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পের কঠোর ইমিগ্রেশন নীতির পরিপূরক একটি বিল আবারো নাকচ হয়ে গেছে। অধিকাংশ রিপাবলিকান কংগ্রেসমানই ডেমক্র্যাটদের সাথে যোগ দিয়ে ওই ধরনের বিলের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। এর আগে ফেডারেল জজ নির্দেশ জারি করেছেন কেড়ে নেওয়া শিশু সন্তানদের অবিলম্বে মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যে। একইসময়ে জনরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প প্রশাসনও ইউ টার্ন করেছেন। তবে বাস্তবে এর কোসো প্রতিফলন ঘটেনি বলে রাজপথ ক্রমে উত্তপ্ত হয়েছে। বেশ কয়েকটি সিটিতে একই ধরনের বিক্ষোভ থেকে অভিবাসন নীতি উদার করার দাবি জানানো হয়েছে।


(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর