সাতক্ষীরায় ধর্ষণ ও পাচারের পৃথক মামলায় তিন জনের যাবজ্জীবন

সাতক্ষীরায় পৃথক মামলায় তিন জনের যাবজ্জীবনI প্রতীকী ছবি

সাতক্ষীরায় ধর্ষণ ও পাচারের পৃথক মামলায় তিন জনের যাবজ্জীবন

শাকিলা ইসলাম জুঁই, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় পাচার ও ধর্ষণের পৃথক তিনটি মামলায় তিনজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছেন আদালত। আজ ৪ জুলাই বুধবার দুপুরে সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক হোসনে আরা আক্তার মামলা তিনটির রায় ঘোষণা করেন।

সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার জগদীশকাটি গ্রামের কাশেম আলী গাইনের ছেলে গোলাম রসুল, একই উপজেলার মৌতলা গ্রামের কাজী গিয়াস উদ্দিনের ছেলে হাফিজুর রহমান ও তালা উপজেলার আটরই গ্রামের মোকাম মোড়লের ছেলে নুর ইসলাম।

আদালত ও মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব নারায়ণপুর গ্রামের আব্দুল করিম মল্লিকের কালিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে একটি হোটেল ছিল।

হঠাৎ একদিন উপজেলার জগদীশকাটি গ্রামের কাশেম আলী গাইনের ছেলে গোলাম রসুল ওই হোটেলে কাজ নেয়। কিন্তু ২০০৫ সালের ২৯ জুলাই গোলাম রসুল হোটেল মালিকের ছেলে শহীদুল ইসলাম (৪) কে নিয়ে পালিয়ে যায়। পরের দিন ফরিদপুর জেলা থেকে স্থানীয় লোকজন ওই শিশুসহ গোলাম রসুলকে আটক করে পুলিশে দেয়। এ ঘটনায় গোলাম রসুলের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ থানায় অপহরণের দায়ে আব্দুল করিম মল্লিক একটি মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ ও নথি পর্যালোচনা করে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত গোলাম রসুলকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও একলাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয়মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন। তবে, জামিন নিয়ে পলাতক থাকায় রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে অনুপস্থিত ছিল।  

এদিকে, পৃথক একটি ধর্ষণ মামলায় হাফিজুর রহমান নামে এক যুবককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয়মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।  

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৯ সালে কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা গ্রামের কাজী গিয়াস উদ্দিনের ছেলে হাফিজুর রহমান তার প্রতিবেশী শেখ মারুফ আহমেদের বাড়ির গৃহপরিচারিকাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। ওই বছর ১৩ মার্চ বিষয়টি হাফিজুর রহমানের বাবা-মাকে জানালে তারা ওই মেয়ের সাথে ছেলেকে বিয়ের আশ্বাস দেন। এই প্রশ্রয় পেয়ে হাফিজুর রহমান ওই মেয়েকে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করতে থাকে। এতে মেয়েটি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। পরে হাফিজুর রহমান তাকে বিয়ে না করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ১৩ সেপ্টেম্বর মেয়েটি বাদী হয়ে হাফিজুর রহমানের নামে ধর্ষণ মামলা দায়ের করে।  

এ মামলায় পাঁচজনের সাক্ষ্য গ্রহণ ও নথি পর্যালোচনা করে আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয়মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন।  

অপরদিকে, প্রতিবন্ধী এক নারীকে ধর্ষণের দায়ে নুর ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিনমাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি তালা উপজেলার আটরই গ্রামের মোকাম মোড়লের ছেলে নুর ইসলাম তার প্রতিবেশী এক প্রতিবন্ধী নারীর ঘরে ঢুকে ধর্ষণ করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েন। পরে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে পালিয়ে যান নুর ইসলাম। এ ঘটনায় ওই প্রতিবন্ধী নারীর ভাই নুর ইসলামসহ তার সহযোগী খায়রুল মোড়ল ও নাজমা বেগমের নামে মামলা দায়ের করেন।  

এ মামলায় সাতজনের সাক্ষ্য গ্রহণ ও নথি পর্যালোচনা করে আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিনমাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন। তবে, অপর দুই আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।  

সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট জহুরুল হায়দার বাবু বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তিনটি মামলার আসামিই পলাতক রয়েছে।  

সম্পর্কিত খবর