‘ধর্মের নামে বর্বরতা চালাচ্ছে আইএস’
নিউইয়র্কের মেধাবি বাঙালি যুবকের বোধোদয়

‘ধর্মের নামে বর্বরতা চালাচ্ছে আইএস’

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

এক বছর বয়সে মা-বাবার সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা এক মেধাবি যুবকের বোধোদয় ঘটলো সিরিয়ায় আইএস (ইসলামিক স্টেট) লিডারের অসভ্য এবং বর্বরোচিত আচরণে।

তরুণটির ধারণা ছিল, আইএস কাজ করছে সত্যিকারের ইসলামিক সমাজ প্রতিষ্ঠায়। সেখানে থাকবে না কোন অন্যায়-অবিচার, অন্যের অকল্যাণ চিন্তা। সকলের সম-অধিকার নিশ্চিত হবে ইসলামিক ধ্যান-ধারণায়।

কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তার সবকিছু ভন্ডুল হয়ে যায়। যে স্বপ্ন নিয়ে সে নিউইয়র্ক ছেড়ে সিরিয়ায় গিয়েছিল তা ধুলিসাত হয়ে যায়। মা-বাবা-ভাই-বোন ছাড়ার মানসিক অবস্থায়ও পরিবর্তন আসে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত ‘আইএস’ থেকে পালানোর পথ খুঁজতে থাকে সে।
এক পর্যায়ে যুবকটি যোগাযোগ সৃষ্টিতে সক্ষম হন মার্কিন গোয়েন্দার সঙ্গে। আইএস’র যাবতীয় তথ্য জানান গোয়েন্দাদের। এমনি অবস্থায় তিনি সিরিয়া থেকে পালিয়ে তুরস্কে যান। সেখানে মার্কিন গোয়েন্দার কাছে আত্মসমর্পণ করেন এবং আরো কিছু তথ্য নিশ্চিত করেন। আত্মসমর্পণের পর ২১ মাস ডিটেনশন সেন্টারে ছিলেন। সে সময় আইএস’র অপকর্মের ফিরিস্তি এবং ওদের ভবিষ্যত পরিকল্পনার তথ্যও অবহিত করেন। গোয়েন্দাদের পরামর্শ অনুযায়ী গোপন স্থান থেকেই তিনি একটি টিভিতে সাক্ষাতকার দেন এবং আইএস’র ভণ্ডামির খপ্পড়ে কেউ যাতে পা না বাড়ায় সে আহবান জানান। এমনকি অনলাইনেও একই মেসেজ বিতরণ করেন। ডিটেনশন সেন্টারে থেকেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নেয়ার কাজ সম্পন্ন করেছেন।

ব্রুকলীনে মা-বাবার সঙ্গে অবস্থানকারী এই যুবক নিউইয়র্ক সিটির সেরা হাইস্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে গ্র্যাজুয়েশনের পর কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সে অবস্থায় ২০১৪ সালে তার এক বোন মারা যান। সে বোরকা পড়তো। বোনের মৃত্যুর কদিন পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে একটি মুভি দেখেন সহপাঠিদের সঙ্গে। সেখানে পাতলা ফিনফিনে বোরকা পরিহিতা এক নারীকে দেখা যায় নগ্নভাবে। যুবকটি বিস্ময়ে হতবাক হন, তার বোনের কথা স্মৃতিতে ভাসে। ভেতরে ভেতরে আপসেট হন মুসলিম নারীদের এভাবে চিত্রিত করায়। এরপরই যুবকটি বিমর্ষ হয়ে পড়েন এবং নিজেকে সবকিছু থেকে গুটিয়ে নেন। ক্লাসে যাওয়া বাদ দেন। ইন্টারনেটে ইসলাম নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে থাকেন। ইসলাম ধর্ম নিয়ে কানেকশন থাকলেই সেখানে মনোযোগী হন। এমনি অবস্থায় এফবিআই পরিচালিত একটি ওয়েবসাইটে জড়িয়ে পড়েন যেখানে ইসলামিক চরমপন্থিদের মতামত ছিল। এটি অনুধাবনের পরই গ্রেপ্তার এড়াতে একই বছর যুবকটি পালিয়ে সিরিয়ায় যান। সেখানে কথিত ইসলামিক সোসাইটির নেতাদের খুঁজতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি সন্ধান পান আইএস ক্যাম্পের।

নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলীনে অবস্থিত ফেডারেল কোর্টে জ্যাক বি ওয়াইনস্টাইনের এজলাসে এই যুবককে ১০ বছরের প্রবেশন (কর্তৃপক্ষের নজরদারি) দেওয়া হয়। বিধি অনুযায়ী তার সর্বোচ্চ ২৫ বছরের কারাদণ্ড হওয়ার কথা। তার পরিবর্তে এই লঘু শাস্তি দেওয়া হয়। ৫ জুলাই বৃহস্পতিবার প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রথম দুবছর তাকে অতিবাহিত করতে হবে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে নির্দিষ্ট একটি এলাকায়। সে সময়ে যদি সে বেধে দেওয়া নিয়ম লংঘন না করে তাহলে কিছুটা শিথিল হবে নজরদারি। তবে তার দেহে থাকবে মনিটরিংয়ের চীপস। ইন্টারনেট কার্যক্রম মনিটরিং করা হবে বিশেষভাবে।

মাননীয় জজ রায় প্রদানের সময় আইএস সম্পর্কে তার বোধোদয়ের উপরোক্ত তথ্য উপস্থাপন করেন ওই যুবকের উদ্ধৃতি দিয়ে।

জজ ওয়াইনস্টাইন বলেন, সন্ত্রাসীদের ক্যাম্পে যাওয়ার পর অনুধাবনে সক্ষম হয় যে সে বড় একটি ভুল করেছে। ‘আমি চেয়েছিলাম ভালো কিছুর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে। কিন্তু যা দেখেছি তা সম্পূর্ণ উল্টো। সবকিছুই শয়তানের কাজ। শয়তানেরা যা করতে অভ্যস্ত সে সবই করছিল ওরা। ’ ২৫ বছর বয়েসী এই যুবক গোয়েন্দাদের কাছে ধরা দেওয়ার পর সন্ত্রাসীদের কাছে থেকে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। এই পথে আর কেউ যাতে পা না বাড়ায় সে জন্যেও নানাভাবে সহায়তা করেছে এফবিআইকে।

মাননীয় জজ উল্লেখ করেন, কুপথ থেকে ফিরে আসার পর সে সততার সঙ্গে মার্কিন কর্তৃপক্ষকে সহায়তা দিয়েছে এবং দিচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে সে তার কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্য করছে বলেই অনুমতি হয়েছে এবং এ কারণেই তাকে লঘু শাস্তি দেওয়া হলো। এর আগে সে আইএসকে নানাভাবে সহযোগিতার দোষ স্বীকার করে।

শুধু তাই নয়, সিরিয়ায় গিয়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্যেও অনুতাপ প্রকাশ করেছে। মাননীয় জজ বলেন, ২৭ জুন আমি তার সঙ্গে একান্তে কথা বলেছি। সে আন্তরিক অর্থেই অনুতপ্ত এবং এতদিন যেসব তথ্য সে গোয়েন্দাদের দিয়েছে তাতে কোনো ভুল ছিল না। যে কারণে সে ওই সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কে জড়িয়ে পড়েছিল তাও অবলিলায় জানিয়েছে। বোনের মৃত্যু এবং মুসলিম নারীদের মর্যাদাহানীর মুভি দেখে সে আবেগ-তাড়িত হয়ে পড়েছিল। প্রতিশোধ-পরায়নতা পেয়ে বসেছিল তাকে।

যুবকটি বলেছে, ‘আমি এই সমাজে বড় হয়েছি। এখানকার পরিবেশে লেখাপড়া করছি। আমি ভালো মানুষের মধ্যেই থাকতে চাই। ’

সম্পর্কিত খবর