জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ইমরান খান

সংগৃহীত ছবি

জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ইমরান খান

অনলাইন ডেস্ক

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। আজাদি লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণার পর তার রাজনৈতিক কর্মসূচি মানেই হলো জনগণের সুনামি। যেখানে যাচ্ছেন, সেখানেই সমাদর পাচ্ছেন। স্মরণাতীতকালে দেশটিতে এতটা জনপ্রিয় নেতার আবির্ভাব হয়নি।

ইমরানের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে পাকিস্তানের রাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠেছে, উত্তপ্ত এ রাজনৈতিক সমীকরণের মধ্যে অনেককিছু ঘটে যেতে পারে। তবে এ মুহূর্তে পরোক্ষভাবে হলেও সমগ্র পাকিস্তানের রাজনীতির স্টিয়ারিং এখন পিটিআইয়ের এই কর্ণধারের হাতেই।

ইমরান খানের প্রতি পাকিস্তানিদের এমন আগ্রহের কিছু কারণ তার অতীত। তিনি বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারদের একজন।

ইমরানের হাত ধরেই পাকিস্তান ক্রিকেট দলের হয়ে সর্বপ্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয় করে। ১৯৯২ সালের ওই জয় তার জীবনের মোড় পরিবর্তন করে দেয়। তিনি তখন পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের হৃদয়কে জয় করে নিয়েছিলেন। রমণীমোহন বা লেডিকিলার হিসেবে তা খ্যাতি ছিল। কেউ ভাবেনি যে তিনি রাজনীতিতে আসবেন। এ রাজনীতিতে আসার নেপথ্য কারণ ছিল দাতব্য ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণ নিয়ে প্রশাসনের সাথে সংঘাত।

ওই সময় সরকারি দুর্নীতির কারণে তিনি সমস্যায় পড়েন। এরপর তিনি দুর্নীতিবিরোধী স্লোগান দিয়ে ১৯৯৬ সালের এপ্রিলে প্রতিষ্ঠা করেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। প্রথমদিকে তিনি রাজনীতিতে ব্যর্থ হলেও পরের দিকে সফলতা পান। এরপর ধীরে ধীরে তিনি সমগ্র পাকিস্তানে জনপ্রিয়তা পান। এরই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানের বিদ্যমান পরিবারতন্ত্র, উগ্রবাদ, দুর্নীতি, মার্কিনবিরোধী চেতনা তার ক্ষমতায় আরোহণের ক্ষেত্রে নিয়ামক ভূমিকা রেখেছেন।

২০১৩ সালে পাকিস্তানের ১০তম নির্বাচনে তার দল দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এরপর ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই পাকিস্তানের ১১তম জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে পিটিআই আসন সংখ্যার বিচারে সর্ববৃহৎ দলে পরিণত হয়। ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন ইমরান খান।

দীর্ঘ সেনাশাসন ও পরিবারতন্ত্রের মধ্যে জনগণ ইমরানের মধ্যে পাকিস্তানের মুক্তি আশা করেছিল। তিনি কিছুটা দুর্নীতিমুক্তভাবে প্রশাসন চালানোর পরও তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে তেমন সুবিধা করতে পারেননি। কারণ ওই সময়টা ছিল করোনাকাল এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে তখন প্রচণ্ড মন্দা ছিল।

ওই সময় পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকটের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, দেশটিতে ব্যবসা ও শিল্প খাত বিচলিত অবস্থায় ছিল। রুপির মূল্য হ্রাস, রিজার্ভ কমে যাওয়া, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ রাজস্ব ঘাটতির কারণে দেশটির অর্থনীতি তখন সংকটাপন্ন। এছাড়া ইউক্রেন- রাশিয়া যুদ্ধের কারণে পাকিস্তান তখন খাদ্য সংকটের মধ্যে পড়েছে। কারণ, পাকিস্তানের গমের চাহিদার ৩৯ শতাংশই আসে ইউক্রেন থেকে। এর বাইরে ৫-৬ শতাংশ আসে রাশিয়া থেকে। এছাড়া পাম ওয়েলের মূল্য বাড়ার কারণে দেশটির খাদ্য নিরাপত্তা তখন হুমকির মধ্যে পড়েছিল। এমন সময়ে বিরোধীপক্ষ অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যম ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এ সময় শাহবাজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী হন।

ইমরান পদত্যাগ করলেও তার জনপ্রিয়তা তখন বেড়ে যায়। কারণ, ওই সময়ে বিদেশি ষড়যন্ত্রের একটি নীলনকশা প্রকাশ করেন তিনি। মূলত, ওই কূটনীতিক চিঠি প্রকাশ করে তিনি তার হৃত জনপ্রিয়তা আবার ফেরত পান। ওই চিঠির বক্তব্যের সূত্র ধরে মার্কিন ষড়যন্ত্র প্রকাশিত হয়। এরপর পাকিস্তানি জনগণের কাছে তিনি আগের চেয়েও বেশি জনপ্রিয় হয়ে যান। এরপরই তিনি ইসলামাবাদ অভিমুখে লংমার্চের ডাক দেন।

সামগ্রিক ঘটনা প্রবাহের মাধ্যমে এটা বোঝা যাচ্ছে যে অতি দ্রুত পাকিস্তানে একটি সাধারণ নির্বাচন আসন্ন। অন্যথায় বিপদে পড়বে শাহবাজ শরিফের সরকার। কারণ, তিনি একটি দুর্বল জোট সরকারকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আর এ সরকার নিজেদের মত-পার্থক্যের কারণেই বেশিদিন টিকতে পারবে না।  

সূত্র : ডন, জিও নিউজ, আল-জাজিরা

news24bd.tv/আলী