বিএনপি ছাড়া আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না : সাবেক সিইসি নূরুল হুদা

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির ছায়া সংসদ

বিএনপি ছাড়া আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না : সাবেক সিইসি নূরুল হুদা

নির্বাচন একটি স্পর্শকাতর ও চ্যালেঞ্জিং বিষয়। রাজনৈতিক দল ও প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সার্বিক সহযোগিতা ব্যতীত শুধু নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। বন্দুক ও লাঠি ব্যবহার করে নির্বাচন করা যায় না। বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর কোথাও নির্বাচনে বন্দুক ও লাঠির ব্যবহার হয় না।

নির্বাচনকালে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করা ঠিক নয়। নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতায় সম্পদ নষ্ট ও মানুষ খুন কাম্য নয়। নির্বাচনকে অবশ্যই প্রতিযোগিতামূলক হতে হবে। রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। তাই বিএনপিকে বাদ দিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা হলে সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং।  
শনিবার (৪ জুন) এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

কে এম নূরুল হুদা আরো বলেন, স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য জেলা প্রশাসকদের পরিবর্তে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনকালে আমার ওপর কোন অদৃশ্য শক্তির চাপ ছিলো না। তবে বেশ কিছু কেন্দ্রে শতভাগ ভোট প্রদান ছিলো অস্বস্থিকর। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। ইভিএম ব্যবহার করে কারচুপি করা যায় না। তবে ইভিএম মেশিনকে আরো আধুনিক করা যেতে পারে। বাংলাদেশে আগামী ২০ বছর নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা উচিত। ভোট প্রদান কক্ষে সিসিটিভি থাকলে ইভিএম এর প্রতি মানুষের আস্থা আরো বাড়বে।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বন্দুকের নলে কিংবা অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতার পালাবদল সমর্থনযোগ্য নয়। তাই গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা থাকা অপরিহার্য। অপ্রিয় বাস্তবতা হচ্ছে নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি বাংলাদেশে জনগণের আস্থা কমেছে। জনগণ ভোট প্রদানে আগ্রহ হারাচ্ছে। বাংলাদেশে শতভাগের অধিক ভোট পেয়ে নির্বাচিত হওয়ার উদাহরণ রয়েছে। মৃত ব্যক্তিদেরও ভোট প্রদানের ঘটনা ঘটেছে। এ ধরণের ঘটনায় নির্বাচন বাতিল করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনারের থাকলেও কমিশন তা করেনি। এজন্য বর্তমান কমিশনকে আরো বেশি সাহসী  ভূমিকা পালন করতে হবে। নির্বাচনের জন্য তত্তাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সুখকর না হলেও তত্তাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন অধিকতর গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথ তৈরি করা উচিত।  
গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ ১০ দফা সুপারিশ করেন। এগুলো হলো : 
১. আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সহ তার শরিকদের মধ্যে আালোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের রূপরেখা ও রোডম্যাপ তৈরী করা।
২. নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন নির্মোহ পেশাজীবী ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিদের সাথে সংলাপে যে সকল প্রস্তাব এসেছে সেগুলো প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা।  
৩. বিগত নির্বাচন কমিশনগুলির চ্যালেঞ্জের বিভিন্ন দিকগুলো চিহ্নত করে বর্তমান কমিশনকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।  
৪. সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ না থাকলে বর্তমান কমিশনকে পদত্যাগ করার মানসিকতা থাকতে হবে।  
৫. রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে ইভিএমের ব্যবহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া।  
৬. নির্বাচনের পূর্বে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিরোধ দূর করতে ইসিকে সরকারের সাথে আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। ৭) অকারণে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বিজয়ী হওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি না হয় সেদিকে ইসিকে দৃষ্টি দেয়া।  
৮. যেসব আইনের দ্বারা নির্বাচনকালীন সময়ে গণমাধ্যম সংবাদ পরিবেশনে বাঁধা সম্মুখীন হতে পারে সে আইন বাতিল করা।  
৯. নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধী মতের রাজনৈতিক দল গুলোতে উন্নয়ন ব্যাহত হয় এমন কর্মসূচী পরিহার করা।  
১০. জেলা প্রশাসকদের বদলে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব দেয়া।

প্রতিযোগিতায় কুমিল্লা ইউনিভার্সিটিকে পরাজিত করে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ছায়া সংসদের বিষয় ছিল-বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন সম্ভব। ছায়া সংসদে মক স্পিকার হিসেবে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক তানিয়া রহমান ও সাংবাদিক একরামুল হক সায়েম। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়।

news24bd.tv/desk