জানি না সেই পা কার ছিল

লাশ বের করে আনছেন আলী আকবর (বাঁ থেকে প্রথম)

জানি না সেই পা কার ছিল

অনলাইন ডেস্ক

গত শনিবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর এলাকায় বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। এতে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ড়িয়েছ ৪২ জনে। আহত হন ১৮২ জন। সে দিনের অভিজ্ঞতার কথা জানালেন আলী আকবর।

তিনি পেশায় একজন খুদে ব্যবসায়ী। যুক্ত আছেন গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠনের সঙ্গে। তাঁর নেতৃত্বে একদল তরুণ বিএম কনটেইনার ডিপো থেকে ২৬ জনের লাশ বের করে এনেছে।  

আলী আকবর জানান, যখন বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই, তখনই বুঝি বড় বিপদ নেমেছে সীতাকুণ্ডের শীতলপুরে।

শীতলপুর তখন শীতল নেই। আগ্নেয়গিরিতেই যেন রূপ নিয়েছিল। বুঝতে অসুবিধা হয়নি বিস্ফোরণে আহত মানুষ বেঁচে থাকার আকুতি জানাবে।

বাঁচার জন্য একটু হাত এগিয়ে দেবে, কেউ বা একটু পানি চাইবে জীবনের শেষ তৃষ্ণা মেটাতে। এসব ভাবতে ভাবতেই ফোন করি সীতাকুণ্ড উপজেলা গাউছিয়া কমিটির সেক্রেটারি আলী ছিদ্দিকীকে। আমি আগে থেকেই উদ্ধার কার্যক্রমের দলনেতা হিসেবে কাজ করি। করোনাকালে এই দায়িত্ব নিয়েছিলাম স্বেচ্ছায়। যখন করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তির মরদেহ দাফনে অনেকেই ভয় পাচ্ছিলেন, তখন আমরা দলবদ্ধভাবে কাজটি করেছিলাম।

সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে দল নিয়ে যাওয়ার অনুমতি চাই কমিটির নেতার কাছে। তিনিও সায় দিলেন।

এরপর ঘটনাস্থলে যাই ৫০ জনকে নিয়ে। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের কারণে বিস্ফোরণ হয়েছে সেটা আমরা শুরুতে জানতাম না। গিয়ে দেখি ভেতরে অসংখ্য মরদেহ পোড়া অবস্থায় আছে। আগুন ও ধোঁয়ার কারণে কাছে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তার পরও একটির পর একটি মরদেহ উদ্ধার করে বের করে আনি। বাইরে এনে অ্যামু্বল্যান্সে তুলে দিই। মরদেহগুলো পৌঁছে দেওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে।

শনিবার রাত থেকে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৬টি মরদেহ উদ্ধার করেছি আমরা। একজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছি। ডিপোর যে অংশে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে, সেখানে লাশ খুঁজছি আমরা। একদিকে বিকট শব্দ, অন্যদিকে চলছিল লাশের সন্ধান। লাশ খুঁজতে খুঁজতে এক পর্যায়ে শুধু একটি পা পেলাম। সেটি টেনে বের করে আনলাম। দেখে আশপাশের অনেকে কান্নাজুড়ে দিল। আজও জানতে পারিনি সেই পা কার ছিল?

news24bd.tv/রিমু