মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই এই বাজেটের অন্যতম লক্ষ্য 

অধ্যাপক ড. মো. সেলিম উদ্দিন

মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই এই বাজেটের অন্যতম লক্ষ্য 

অধ্যাপক ড. মো. সেলিম উদ্দিন, এফসিএ, এফসিএমএ

২০২২-২০২৩ এর প্রস্তাবিত বাজেট এমন এক সময়ে ঘোষিত হল যখন বিশ্বব্যপী মহামারী কোভিড-১৯ এর কারণে ক্ষতিগ্রস্থ অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হতে না হতে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ববাজারকে লন্ডভন্ড বা অস্থির করে তুলেছে। যুদ্ধের এই ভয়াবহ অস্থিরতা বিশ্বের অনেক দেশেই বহি:খাত বিশেষ করে আমদানী, রপ্তানী ও প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর প্রতিঘাতে অনেক দেশেই মুদ্রাস্ফীতি আকাশচুম্বী এবং অসহনীয় অবস্থায় পৌঁছে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যুদ্ধের বিরূপ প্রভাবের কারণে মুদ্রাস্ফীতি উর্ধ্বমূখী রূপ ধারণ করেছে।

এ প্রেক্ষাপটে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অন্য সময়ের চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশের বহি:খাত বিশেষ করে আমদানী, রপ্তানী ও প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রভাবের কারণে মুদ্রাস্ফীতি চোখ রাঙিয়ে বসে আছে এবং আমদানী ব্যয় মেটাতে ডলারের সহজ লভ্যতাও দুরূহ হয়ে পড়েছে। যুদ্ধের শুরু থেকে সরকার মুদ্রাস্ফীতি নিরসনে এবং ডলার প্রাপ্যতা বৃদ্ধির জন্য অনেক ব্যবস্থাপত্র, কৌশল এবং কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। তবুও জনগণ প্রস্তাবিত বাজেটে এ ব্যাপারে অর্থাৎ যুদ্ধের ভয়াবহতায় বেসামাল বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা কিভাবে রক্ষিত হবে তার সুদুরপ্রসারী প্রস্তাবিত কার্যক্রম প্রত্যাশা করেন।

এই প্রত্যাশাকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৭.৫ শতাংশ জিডিপি প্রবদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে মুদ্রাস্ফীতিকে ৫.৬ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধের মাধ্যমে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং চলমান উন্নয়নকে অক্ষুন্ন রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে 'কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবহিকতায় পরিবর্তন' আখ্যা দিয়ে বাজেট ঘোষণা করেছেন।

প্রস্তাবিত বাজেটের মোট আকার প্রায় ৬,৭৮,০৬৪ কোটি টাকা যেটি চলতি বছরের মূল বাজেট ৬,০৩,৬৮১ কোটি টাকা থেকে ৭৪,৩৮৩ কোটি (বা ১২ শতাংশ) বেশী। প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপির মাত্র ১৫.২ শতাংশ অথচ চলতি বাজেট জিডিপির ১৭.৫ শতাংশ। বাজেট জিডিপির কমপক্ষে ২০ শতাংশ হওয়া চাই এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২২-২৩ এ বাজেটের আকার ধরা হয়েছিল প্রায় ৭ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা। অনেকে প্রাতিষ্ঠানিক দূর্বলতাকে বাজেটে জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবে প্রস্তাবিত বাজেট যেহেতু বিশ্ব অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাকে সামনে রেখে প্রণীত হয়েছে সেহেতু এটি স্বাভাবিক অর্থবছর হিসেবে মনে করেন না।

চলতি বছরের তুলনায় ৪৪০০০ কোটি টাকা বা ১১.৩ ভাগ বৃদ্ধি করে প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২২-২৩ এ মোট আয় ৪,৩৩০০০ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে যা জিডিপির ৯.৭ ভাগ, যেখানে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত কর ৩,৭০,০০০ কোটি টাকা যা ২০২১-২২ এ ছিল ৩,৩০,০০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে ২,৪৫,০৬৪ কোটি টাকার ঘাটতি দেখিয়ে মোট উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন ব্যয় যথাক্রমে ২,৫৯,৬১৭ কোটি টাকা এবং ৩,৭৩,২৪২ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।  

উল্লেখ্য, মোট বাজেটে অনুন্নয়ন ব্যয়ের অংশ ৫৫ ভাগ যেটি জিডিপির মাত্র ৮.৪ ভাগ। অন্যদিকে উন্নয়ন ব্যয় মোট বাজেটের ৪৫ ভাগ এবং জিডিপির ৫.৪ ভাগ। মোট বাজেট, আয়, উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন ব্যয়সহ অধিকাংশ বাজেটিয় সূচক জিডিপির তুলনায় বিগত কয়েক বছরেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি পরিলক্ষিত হয়নি। ঘাটতি অর্থায়নে অভ্যন্তরীণ উৎস হতে ৬০ শতাংশ  যেখানে ১,০৬,৩৩৪ কেটি টাকা ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে হিসাব করে মোট ১,৪৬,৩৩৫ কোটি টাকা এবং বহি: উৎস হতে ৪০ শতাংশ যেখানে ৯৮,৭২৯ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।  
উল্লেখ্য, ২০২১-২২ সংশোধিত বাজেট বহি:উৎস হতে ৮০,২১২ কোটি এবং অভ্যন্তরীণ উৎস হতে ১,২৪,২৮৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে ব্যাংক ঋণ ৮৭,২৮৭ কোটি টাকার অর্থায়ন পুণ:প্রাক্কলন করা হয়েছে। ঘাটতি অর্থায়ন বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, বহি: উৎস হতে অর্থায়ন টার্গেট অনুযায়ী না হওয়ায় এবং রাজস্ব আদায় ঘাটতির কারণে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বাজেটের টার্গেট অতিরিক্ত ঋণ নিয়ে ঘাটতি অর্থায়নের ব্যবস্থা করতে হয়, তাই বাজেট ২০২২-২৩ এ ঘাটতি অর্থায়ন ২,৪৫,০৬৪ কোটি টাকা একটি বিরাট চ্যালেঞ্জিং। কেননা অভ্যন্তরীণ উৎস বিশেষ করে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বাজেটে অতিরিক্ত ঋণ নিলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাপ্রাপ্তসহ তারল্য সংকট এবং মুদ্রাস্ফিতিতে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। সুতরাং রাজস্ব আহরণ এবং বৈদেশিক উৎস হতে প্রাক্কলিত অর্থ যথাসময়ে সংগৃহিত না হলে বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হবে। এজন্য রাজস্ব আহরণে এবং ঘাটতি অর্থায়নে বিশেষ করে বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থায়ণে সাফল্য দেখাতে না পারলে প্রস্তাবিত বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন কঠিন হবে।  

তাই প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন কলা-কৌশলসহ প্রশাসনিক ব্যবস্থা অতীতের যে কোন সময় থেকে বেশি নিতে হবে। মোট বাজেট ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, সামাজিক অবকাঠামো খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ১,৮৩,৪২৫ কোটি টাকা যা বরাদ্দের ২৭.১ শতাংশ, ভৌত অবকাঠামো খাতে ২,০০,৮৬০ কোটি টাকা (মোট ব্যয়ের ২৯.৬০ শতাংশ), সাধারণ সেবা খাতে ১,৫৩,২০৮ কোটি টাকা (মোট ব্যয়ের ২২.৬ ভাগ), সুদ পরিশোধ ৮০,৩৭৫ কোটি টাকা বা ১১.৯ ভাগ এবং সরকারি বেসরকারি অংশীদ্বারিত্ব, আর্থিক সহায়তা, ভর্তুকি এবং বিনিয়োগসহ মোট ৫৩,১৫৫ কোটি টাকা যা বরাদ্দের ৭.৮ ভাগ এবং উক্ত বরাদ্দগুলো যথাক্রমে সংশোধিত বাজেট ২০২১-২২ চলতি অর্থ বছরের যথাক্রমে ১,৬৪,১৪৩ কোটি টাকা (২৭.৭ শতাংশ), ১,৭৫,৬২৭ কোটি (২৯.৬ শতাংশ), ১,৩৪,৬১৫ কোটি (২২.৭ শতাংশ), ৭১,২৪৪ কোটি (১২ শতাংশ) এবং ৪২,৯৪৬ কোটি টাকা (৭.২ শতাংশ) পুণ:প্রাক্কলন করা হয়েছে।  

এখানে উল্লেখ্য, সামাজিক অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি পেলেও শতাংশে বৃদ্ধি হয়নি কিন্তু। ভৌত অবকাঠামোতে বরাদ্দ বাড়লেও মোট বরাদ্দের শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে সাধারণ সেবায় বরাদ্দ বৃদ্ধি পেলেও শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। পিপিপি ছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানে অর্থ সহায়তা ও সাবিসিডিতে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ প্রতিষ্ঠানগুলোর অদক্ষতার স্বাক্ষর বহন করছে। প্রত্যেক খাতে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ ছাড়াও অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোকে গতিশীল ও প্রাণবন্ত করার জন্য বিভিন্ন রাজস্ব কৌশল প্রয়োগ করে কর হ্রাস, নগদ সহায়তা, আমদানি শুল্ক ও সম্পূরক শুল্কসহ নানাবিধ ব্যবস্থা বাজেটে প্রস্তাব করা হয়েছে।  

কৃষিখাত সংশ্লিষ্ট কাঁচামালের শুল্ক কমানো, কাঁচামাল ও কৃষি যন্ত্রপাতি রেয়াতি হারে আমদানির জন্য নতুনভাবে অন্তর্ভূক্তি করা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে হুইল চেয়ার এবং হেয়ারিং এইডে আমদানি শুল্ক, ভ্যাট ও অগ্রীম কর হ্রাস করা হয়েছে। শিল্প, তথা উৎপাদন খাতকে উৎসাহিত এবং রক্ষা কবচের লক্ষ্যে ১২ ধরণের বিভিন্ন পণ্য, রাসায়নিক ও শিল্পের অবকাঠামো তৈরীতে শুল্ক হ্রাস এবং ৩১ ধরণের বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে, যাতে দেশীয় উৎপাদনকারীরা উপকৃত হবে। প্রায় ২৬ টি পণ্যের ওপর সহায়ক শুল্ক আরোপিত হয়েছে। তাছাড়া ৩ ধরণের পণ্যে ভ্যাট সম্প্রসারণ ও ৮ ধরণের বিভিন্ন ছোট ছোট যন্ত্রপাতিতে শুল্ক আরোপ করায় শিল্পায়ণে ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।

আইসিটি খাতকে উৎসাহ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশে উত্তরোত্তর উৎকর্ষের উদ্দেশ্যে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবকে স্বার্থক করে তোলার লক্ষ্যে অনেক পণ্য সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি রেয়াতি হারে আমদানীসহ কিছু কিছু পণ্যে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। আমদানী ব্যয়কে নিয়ন্ত্রণ তথা বৈদেশিক মুদ্রা বিশেষ করে ডলার সাশ্রয়ের জন্য ৩৩টি বিভিন্ন শ্রেণির পণ্যে ১০ শতাংশ থেকে ২৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। অটোমোবাইল এবং জিপ গাড়িতে সিসি বেধে ১১ ধরণের গাড়িতে সর্বনিম্ন ৪৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে সর্বোচ্চ ১০০০ শতাংশ পর্যন্ত সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। গাড়ির শুল্ক বৃদ্ধি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়সহ পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

বাজেটে উপস্থাপিত শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট ও রেয়াতি হারে আমদানির সুযোগ বিশ্লেষণ করলে এটা প্রতীয়মান হয় যে, সরকার বহি:খাতকে সুষ্ঠু, সঠিক এবং গতিশীল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় এবং বিলাসী পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করছে, রপ্তানীমূখী শিল্পসমূহ ও অরপ্তানী উৎপাদন খাতকে উৎসাহ এবং সুরক্ষা দেয়ার প্রয়াস গ্রহণ করা হয়েছে।  

শুল্ক যৌক্তিকরণ অবশ্যই করণীয় কিন্তু সব বিলাসী দ্রব্য আমদানি নিষিদ্ধ হওয়া দরকার। সব আমদানি ও রপ্তানী পণ্য যথাযথ শুল্কায়ণ ছাড়াও সব বন্দর, শুল্ক স্টেশনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্ক্যানিংয়ের ব্যবস্থা থাকা অতি জরুরি। প্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থায় কর্পোরেট কর ছাড়সহ বিভিন্ন কর রেয়াত, কর ছাড় বিনিয়োগ ও ব্যবসা বান্ধব হলেও একক ব্যক্তির ক্ষেত্রে অকরধার্যসীমা ৩,০০,০০০ টাকা এখনও বহাল যা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কর প্রদানের অনিহার সৃষ্টি করবে যা অসাম্যের বহি:প্রকাশও বটে।

প্রস্তাবিত বাজেটের মূল বার্তা হলো, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, কোভিড পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, সমসাময়িক বিশ্ব বাজারের অস্থিরতা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক সূচকের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানসহ বৈশ্বিক অর্থনীতিকে বিশ্লেষণপূর্বক দেশের সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধিকে কমিয়ে উত্তরোত্তর যোগান বাড়ানোকে অন্যতম কৌশল হিসাবে নেয়া হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতিকে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ভর্তূকি, প্রণোদনা, শিল্প, স্বাস্থ্য, কৃষি, আইসিটি খাতগুলাতে বরাদ্দ ছাড়াও কিছু সংস্কার কাজের প্রস্তাব করা হয়েছে।  

নিম্ন আয়ের লোকেদের জন্য ৫,০০০ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা, সিএমএসএমইকে সহায়তার অঙ্গীকার, সামাজিক নিরাপত্তার সম্প্রসারণ, দরিদ্র জনগণের মধ্যে বিনামূল্যে ও কম মূল্যে খাদ্য সহায়তার প্রতিশ্রুতি, ১৫ টাকা কেজিতে চাল বিক্রি, খাদ্য নিরাপত্তায় গুদামের ধারণ ক্ষমতার সম্প্রসারণ, কৃষিতে ১৬,০০০ কোটি টাকার সাবসিডি, কৃষিখাতের পণ্য রপ্তানীতে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা অব্যাহত রাখা, ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ বিলে রেয়াত, কৃষি ঋণের পর্যাপ্ততা, রেমিটেন্সের ২.৫ শতাংশ নগদ সহায়তা আরো এক বৎসর অব্যাহত, রপ্তানী বৈচিত্রকরণের প্রস্তাব, 'আমার গ্রাম আমার শহর' কার্যক্রমের আওতায় পাইলট প্রকল্প গ্রহণ, বিনা সুদে ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প, গরীব, অসহায় ও বয়স্ক ভাতার উপকারীর সংখ্যা ২০.৮ লাখ থেকে ২০.৬৫ লাখে বাড়ানো এবং সর্বোপরি সামাজিক নিরাপত্তায় মোট বাজেটের ১৬.৭৫ শতাংশ প্রায় ১,১৩,৫৭৬ কোটি টাকার মোট বরাদ্দ-সকল কার্যক্রম গুলো মুদ্রাস্ফীতির গ্রাস থেকে নিম্ন আয়ের লোকজনকে রক্ষা করবে এবং জীবন মানে স্বাচ্ছন্দ আনবে বাজেট পর্যালোচনা এবং বিশ্লেষণ করে এ কথা নির্ধিদ্বায় বলা যায়, কোভিডে ক্ষতিগ্রস্থ অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের বিগত দুই বছরের বাজেটের কলাকৌশল অব্যাহত রাখা, বর্তমান যুদ্ধ সংকটকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতায় বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং এই সরকারের গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার সব কৌশল ও কার্যক্রম এই বাজেটে নেয়া হয়েছে।  

বাজেট ঘোষণার মাধ্যমে দায়িত্ব কখনও শেষ হয়ে যায় না। আনুপাতিক হারে এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাজেট প্রত্যেক মাসে বাস্তবায়ন হওয়া উচিত। অন্তত: প্রথম ছয় মাসে বাজেটের ৪০ শতাংশ বাস্তবায়ন না হলে কখনও বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। বাজেট অবাস্তবায়িত থেকে গেলে জনগণের সার্বিক কল্যাণ ব্যাহত হয় এবং রাজস্ব আয়, ব্যয় ও ঘাটতি অর্থসংস্থানে ভারসাম্য পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়না। সুতরাং বাজেটে মূল সাফল্য নির্ভর করে কাজের গতিশীলতা, দক্ষতা, ও মিতব্যয়িতার সাথে বাজেট বাস্তবায়নের ওপর।  

প্রস্তাবিত বাজেট যেহেতু অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থীতিশীলতা ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতার প্রেক্ষিতে ঘোষিত হয়েছে তাই এই বাজেট বাস্তবায়নে যথা সম্ভব ব্যয় হ্রাস, ব্যয় নিয়ন্ত্রণ, ব্যয় পরিহার, ব্যয় সংকোচন, অপচয় ও দূর্নীতি ইত্যাদি বিষয়গুলোকে গভীর পর্যবেক্ষণ করে এবং কার্যক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সফলতা আসবে। উল্লেখিত ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও অপচয় কমানোর কৌশলগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নে অধিক সুফল বয়ে আনবে। অর্থনৈতিক সুবিধার আলোকে এবং কার্য সমাপ্তির মাত্রার ভিত্তিতে গৃহীত প্রায় ১৮০০ প্রকল্পকে বিভক্ত করে অধিক অর্থনৈতিক ও জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলো এবং যেসব প্রকল্প ৮০ শতাংশ ও তার অধিক অংশ সম্পন্ন হয়েছে, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া উচিত। এতে বিনিয়োগকৃত অর্থ হতে তাড়াতাড়ি সুবিধা আসতে থাকবে এবং জনগণ উপকৃত হবে। তাতে আর্থ সামাজিক উন্নয়নও ত্বরান্বিত হবে। মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন মডেল উদাহরণ হিসাবে সব প্রকল্প বাস্তবায়নে অনুপ্রেরণা হিসাবে দেখতে হবে।

লেখক : অধ্যাপক, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।  
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন ও নির্বাহী কমিটি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।

(মন্তব্য লেখকের নিজস্ব)