‘ওরা আমার আরিয়ানকে মেরে ফেলেছে’

‘ওরা আমার আরিয়ানকে মেরে ফেলেছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর গ্রিনরোডস্থ সেন্ট্রাল হাসপাতালের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। চিকিৎসা সেবা পেতে গিয়ে প্রাণ হারানো ওই শিশুটির নাম আরিয়ান। বয়স মাত্র দেড় বছর (১৯ মাস)।

আরিয়ানের পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসায় অবহেলা ও অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রয়োগে তাদের সন্তানের মৃত্যু হয়েছে।

ঘটনার পর হাসপাতালে কর্মকর্তাদের ওপর চড়াও হয় ও ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ স্বজনরা।

জানা গেছে, আরিয়ানের বাবার নাম সাহাদাত হোসেন। তাদের বাড়ি নোয়াখালী। রাজধানীর ধানমন্ডি থানাধীন হাতিরপুলে স্বপরিবারে বসবাস করেন।

পেশায় ব্যবসায়ী সাহাদাতের একমাত্র সন্তান ছিল আরিয়ান।


নিহত শিশুর চাচা শহীদ এলাহী জানান, গত বুধবার (১১ জুলাই) থেকে জ্বর ছিল আরিয়ানের। জ্বর না কমায় পরদিন (১২ জুলাই) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশু বিশেষজ্ঞ সুজিত কুমার রায়ের অধীনে পেডিয়াট্রিক ইউনিটের শিশু ওয়ার্ডে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়।

আরিয়ানের রক্ত পরীক্ষা করে দেখা যায়, প্লাটিলেটের উপস্থিতি ৭৬ হাজার। চিকিৎসা চলাকালীন সেটি দাঁড়ায় ১ লাখ ২২ হাজার। শনিবার (১৪ জুলাই) সকাল থেকে শিশু আরিয়ানের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। দুপুরে অবস্থা আরও খারাপ হয়। ওই সময় চিকিৎসকদের ডাকাডাকি করলে কেউ সাড়া দেননি বলে জানান শহীদ এলাহি। বিকেলের দিকে মারা যায় আরিয়ান।

নিহতের চাচা বলেন, রাতে আরিয়ানকে ২৫০ মিলিগ্রামের সাপোজিটার দেয়া হয়। এরপর থেকে অস্বস্তি শুরু হয় আরিয়ানের। চোখ-মুখ কালো বর্ণ ধারণ করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলে তার ডেঙ্গু হয়েছে। কিন্তু ডেঙ্গুর জন্য যে ধরনের চিকিৎসা দরকার ছিল তা তাকে দেয়া হয়নি। অবস্থার অবনতির বিষয়টি বারবার জানানোর পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দেয়নি। বরং মারা যাওয়ার পর আরিয়ানকে এনআইসিইউ বিভাগে নেয়া হয়।

আরিয়ানের বাবা সাহাদাত হোসেন বলেন, এখন আমি কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। আমার আরিয়ানকে জীবিত এনে মৃত অবস্থায় বাসায় নিয়ে যাচ্ছি। ওরা (চিকিৎসা) আমার আরিয়ানকে মেরে ফেলেছে।

আরিয়ানের আকস্মিক মৃত্যুর সংবাদে পরিবারের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। হাসপাতাল ও ধানমন্ডি থানার সামনে আহাজারি করেন আরিয়ানের স্বজনরা। ঘটনার পর হাসপাতালের পঞ্চম তলার ৬০৯ নং ডাক্তারদের বসার কক্ষের গ্লাস ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ স্বজনরা। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুটি গেট আটকে দেয়। খবর পেয়ে ধানমন্ডি থানা পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

ধানমন্ডির থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। পরে আরিয়ানের পরিবার মরদেহ নিয়ে চলে যায়। তারা অভিযোগ দিলে মামলা হবে।

এদিকে, কর্তব্যে অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার অভিযোগ অস্বীকার করেছে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালটির উপ-পরিচালক (এডমিন) ডাক্তার মোজাহের হোসেন বলেন, ‌আরিয়ানের মৃত্যু কর্তব্য অবহেলা কিংবা ভুল চিকিৎসায় হয়নি। ডাক্তাররা দেখেছে, অবস্থার অবনতি হওয়ায় এনআইসিইউতে নেয়া হয়েছে। সেখানেই রোববার (১৫ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টায় মারা যায় আরিয়ান।

তিনি আরও বলেন, আরিয়ানের ডেঙ্গু জ্বর হয়েছিল। ক্লাসিকেল ডেঙ্গুর চিকিৎসায় যে ব্যবস্থা নেয়া দরকার, চিকিৎসকরা তা নিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাকে বাঁচানো যায়নি।

অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর