পঞ্চগড়ে চা চাষিরা বিপাকে
পঞ্চগড়ে চা চাষিরা বিপাকে

পঞ্চগড়ে চা চাষিরা বিপাকে

অনলাইন ডেস্ক

পঞ্চগড়ের কারখানার ভেতরে দলবল নিয়ে কর্মচারীদের মারপিটের অভিযোগে সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান নুরুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। কারখানায় ঢুকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে চাষিদের কাছ থেকে কাঁচা চা পাতা কেনা বন্ধ রেখেছে পঞ্চগড়ের ২০টি চা কারখানা। এতে চাষিরা বিপাকে পড়েছেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, প্রধান আসামি নুরুজ্জামান নুরুর নির্দেশে গত সোমবার বিকেলে মামলার আসামি জাহিদুল ইসলাম ও সৈয়দ বশিরুল আলম সরকার নামে দুই যুবক চা চাষি পরিচয়ে নিম্নমানের কাঁচা চা পাতা বিক্রয়ের জন্য মরগেন টি ফ্যাক্টরিতে যায়।

তারা বহুদিন ধরে নিম্নমানের কাঁচা চা পাতা সরবরাহ করে আসছিল। ওই দিন মামলার বাদি কারখানার সুপার ভাইজার নাজমুল হুদা নিম্নমানের কাঁচা চা পাতা ক্রয় করতে অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে বাক বিতণ্ডার মধ্য দিয়ে একসময় কারখানার কয়েকজন কর্মচারীকে মারধর করা শুরু করে তারা। এসময় কারখানা কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দেয়।
পরে নুরুজ্জামান নুরু দলবল নিয়ে কারখানায় প্রবেশ করে। পুলিশের উপস্থিতিতে কারখানার কর্মচারীদের লাঠিসোঁটা এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতে থাকে। এ ঘটনায় মরগেন টি ফ্যাক্টরির বেশ কয়েকজন আহত হয়। তাদের সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাতে চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান নুরুকে প্রধান আসামি করে ১০ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয় ২০ থেকে ২৫ জনকে।

তবে নুরুজ্জামান নুরু এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দুই জন ক্ষুদ্র চা চাষিকে মরগেন টি ফ্যাক্টরির কর্মচারিরা আটকে রেখে মারধর করছিল। ওই চা চাষিদের কাছ থেকে চা পাতা কেনার সময় কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কাঁচা চা পাতার দাম না দেয়ায় প্রতিবাদ করেছিল তারা। পরে তারা আমাকে জানায়। আমি কারখানায় প্রবেশ করলে আমাকেও মারতে আসে।

মরগেন টি ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী নিয়াজ আলী চিসতি জানান, আর কত সহ্য করবো? এই চেয়ারম্যান ও তাদের লোকজন প্রায়ই চাঁদার জন্য কারখানায় আসে। তাদের সম্মান করি। অযৌক্তিকভাবে নিম্নমানের চা পাতা ক্রয় করতে বাধ্য করতে চায়। এতে আমার ফ্যাক্টরির বদনাম হবে। নিম্নমানের চা পাতা দিয়ে চা উৎপাদন করলে তৈরি চায়ের মান খারাপ হয়ে যায়। অকশন মার্কেটে দাম পাওয়া যায় না। তাই নিম্নমানের চা পাতা ক্রয় করি না। এ ঘটনায় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে লোকজন আমার কারখানায় আক্রমণ করে। তারা আমার কারখানা বন্ধ করে দেয়।

এদিকে মরগেন টি ফ্যাক্টরিতে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে পঞ্চগড়ে চা চাষিদের কাছ থেকে কাঁচা চা পাতা ক্রয় করা বন্ধ রেখেছে ২১টি চা কারখানা। এতে বিপাকে পড়েছেন পঞ্চগড়ের কয়েক হাজার ক্ষুদ্র চা চাষি। তারা বলছেন এসময় চা পাতা ক্রয় না করলে চা পাতা বড় হয়ে যাবে। তখন কেটে ফেলে দিতে হবে। লোকসান হবে।  তেঁতুলিয়া উপজেলার মাঝিপাড়া এলাকার চা চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি যে কারখানায় ঘটেছে সেই কারখানা চা পাতা ক্রয় করা বন্ধ রাখতে পারে। এ ঘটনার তদন্ত করে বিচার করা হোক। কিন্তু চা চাষিদের কাঁচা চা পাতা কেনা বন্ধ রাখা অযৌক্তিক। আমরা পথে বসে যাবো।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বটলিফ টি ফ্যাক্টরি অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পঞ্চগড় জেলার সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মিঞা জানান, নিম্নমানের কাঁচা চা পাতা ক্রয় করলে তৈরি চা পাতার দাম কমে যায়। সমতল অঞ্চলের চায়ের মান খারাপ হয়। তারপরও জোর করে কারখানায় ঢুকে চাষিরা নিম্নমানের কাঁচা চা পাতা সরবরাহের চেষ্টা করে। এ নিয়ে প্রায় সব কারখানায় গত কিছুদিন ধরে সংকট চলছে। মরগেন টি ফ্যাক্টরিতে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটেছে আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এ ঘটনার প্রতিবাদে আমরা কাঁচা চা পাতা ক্রয় করা বন্ধ রেখেছি। আমরা জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপিও দিয়েছি।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকতা ড. শামীম আল মামুন জানান, মরগেন টি ফ্যাক্টরির ঘটনাটি আইনি বিষয়। কাঁচা চা পাতা কেনা বন্ধ রাখলে ক্ষুদ্র চা চাষিরা বিপাকে পড়বে। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অতিদ্রুত বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম জানান, আমরা অতিদ্রুত সংকট সমাধানের চেষ্টা করছি।

news24bd.tv তৌহিদ

এই রকম আরও টপিক