আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবর

সংগৃহীত ছবি

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবর

অনলাইন ডেস্ক

বহুল প্রতীক্ষিত কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২৫ জুন) সকাল পৌনে ১২টায় মাওয়া পয়েন্টে টোল পরিশোধের পর ১২টায় উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন তিনি। শুরু থেকেই দেশের গণমাধ্যম সেতুর খবর নিয়ে সজাগ থেকেছে। এখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতেও উঠে আসছে বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রতীক হয়ে ওঠা পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবর।

২৫ জুন, ২০২২ পদ্মা সেতুর উদ্বোধন, এই খবরটি ফলাও করে প্রচার করেছে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন ও নির্মাণে প্রধান সহযোগী দেশ চীনের বিভিন্ন গণমাধ্যম। সম্প্রতি বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার বরাত দিয়ে সিনহুয়া নেট এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটা সবচেয়ে বড় এবং চ্যালেঞ্জিং অবকাঠামো প্রকল্প।

ভবিষত্যের ট্রান্স এশিয়া রেলপথ নেটওয়ার্কের জন্য পদ্মা সেতু গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে চীনের জনপ্রিয় গণমাধ্যম পিপলস ডেইলির অনলাইন সংস্করণও। ওই প্রতিবেদনে পদ্মা সেতুর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডেপুটি হেড জো লিন বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণবাংলার মানুষ স্বল্প সময়ে রাজধানী ঢাকায় যেতে পারবে। পদ্মার স্রোত, বালির আলগা মাটিসহ পদ্মা সেতুতে কাজ করার সময়কার নানা চ্যালেঞ্জের কথাও বলেছেন তিনি।

আর শেষ পর্যন্ত সেতুর উদ্বোধনের খবরে উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন এই চাইনিজ প্রকৌশলী। সেত এলাকার স্থানীয় জনগণকে বন্ধুবৎসল সহজ সরল পরোপকারী হিসেবে চিত্রিত করেছেন জো লিন।

এ ছাড়া পদ্মা সেতুর টোল, সেতুর নানা দিকসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রচার করেছে চীনের জনপ্রিয় গণমাধ্যম চায়না ডেইলি, চায়না রেডিও ইন্টারন্যাশনাল, সিনহুয়া নিউজ এজেন্সিসহ অন্যান্য মিডিয়া। বাংলাদেশের সিংহ ভাগ সীমান্তবর্তী প্রতিবেশী দেশ ভারতেও কম আলোচনা হয়নি এই সেতু নিয়ে।

সেতু পরিদর্শন করে ভারতে ফিরে গিয়ে নিজ গণমাধ্যমে লিখেছেন দ্য প্রিন্টের সিনিয়র কনসাল্টিং এডিটর। লিখেছেন ‘পদ্মা সেতু বাংলাদেশের স্থির সংকল্পের পরিচায়ক এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দর্শনের ভার বহন করছে এটি। ’ প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতার ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে 'বিচক্ষণ' শেখ হাসিনা খুব ভালোভাবেই জানেন, উচ্চাকাঙ্ক্ষী বাংলাদেশিরা যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি চায়, তা এনজিও দিতে পারবে না।

তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশকে নতুন করে সাজানোর যে দৃঢ় ইচ্ছা দেখিয়েছেন শেখ হাসিনা, সেটিই তাকে পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে সাহায্য করতে পারে।

জ্যোতি মালহোত্রা জানিয়েছেন, এটি শুধু পদ্মার ওপর নয়, গোটা গঙ্গা অববাহিকায় তৈরি দীর্ঘতম সেতু।

বিবেকের তাড়নায় এককালের শত্রুরাও প্রশংসা করে থাকেন। কোনও বিবেকবান মানুষ বোধয় তা না করে পারেন না। যেমনটি পারেননি পাকিস্তানের পাঞ্জাবের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশ্লেষক মালিকা-ই-আবিদা খাত্তাক।

পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকা ‘ডেইলি টাইমস’ ও ‘উইকলি ফ্রাইডে টাইমস’-এ প্রকাশিত তার নিবন্ধে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। নিবন্ধটির নামই ছিল ‘বাংলাদেশে পদ্মা সেতুর গল্প : একটি সেতুর চেয়ে বড়’। অর্থাৎ পদ্মা সেতুকে তিনি সেতুর চেয়েও বড় কিছু হিসাবেই দেখেছেন।

ওই নিবন্ধে মালিকা বলেন, পদ্মা সেতুর মতো অবকাঠামো নির্মাণ করে বাংলাদেশের উন্নয়নের মূর্ত প্রতীক শেখ হাসিনা বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এবং আস্থা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ আনলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন- ‘আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করব।

পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা লিড শিরোনাম করেছে, ‘পদ্মা সেতু: জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়! পদ্মা সেতু উদ্বোধনে হাসিনার কণ্ঠে সুকান্ত’। এমনকি তাদের ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।

ভারতের আরেক গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের বাংলা সংস্করণও লাইভ আপডেট জানিয়েছে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের। স্মারক নোট প্রকাশ থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর টোল পরিশোধের খবর ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে তাদের প্রতিবেদনে।

সংবাদ প্রতিদিন লিখেছে, শত বাধা পেরিয়ে তৈরি স্বপ্নের পদ্মা সেতু, বাংলাদেশকে অভিনন্দন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের। ইটিভি ভারতের শিরোনামে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পদ্মা সেতু: ঢাকা-কলকাতা আরও কাছাকাছি, বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনে শেখ হাসিনা।

এবিপি আনন্দ তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, সড়কপথে এপার বাংলা থেকে ওপার বাংলায় পৌঁছানোর দূরত্ব কমাবে পদ্মা সেতু। প্রতিবেদনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নপূরণের কথা উল্লেখ করেছে ভারতের টাইমস গ্রুপের বাংলা সংবাদমাধ্যম এই সময় তাদের শিরোনামে লিখেছে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণ, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করলেন শেখ হাসিনা’। সেতুটি নির্মাণে কত খরচ হয়েছে তা নিয়ে আরেকটি প্রতিবেদন করেছে তারা।

কলকাতার জাতীয় দৈনিক আজকালের শিরোনাম, বাংলাদেশ আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের বুকে: শেখ হাসিনা। ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআই লিখেছে, বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের স্বপ্ন সত্য হলো: পদ্মা সেতু উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’। দ্য ইকোনমিক টাইমস এবং টাইমস অব ইন্ডিয়াও একই খবর প্রকাশ করেছে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, প্রবল পদ্মা পেরিয়ে স্বপ্নের সেতুর অপেক্ষায় বাংলাদেশ।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক দৈনিক দ্য স্ট্রেইট টাইমস শুক্রবার পদ্মা সেতু নিয়ে বিশদ এক প্রতিবেদন করেছে। তাদের শিরোনাম, ‘বিদেশি ঋণের ফাঁদ, আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এড়িয়েছে বাংলাদেশের নতুন সেতু। ’ ‘আমি কেবল অনুরোধ জানাব— এই লড়াই যেন শান্তিপূর্ণ হয়। ’ এভাবেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছে বাংলার পদ্মা সেতু।  

news24bd.tv/আলী