কুয়াকাটা ও সুন্দরবনে পর্যটনের নতুন দুয়ার খুললো

সংগৃহীত ছবি

কুয়াকাটা ও সুন্দরবনে পর্যটনের নতুন দুয়ার খুললো

অনলাইন ডেস্ক

স্বপ্নে পদ্মা সেতু চালু হয়েছে গত ২৫ জুন। পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে পুরো দক্ষিণাঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হয়েছে। দূরত্ব ঘুচছে স্থান ও স্থানাঙ্কের। ঢাকা থেকে এখন সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটার দূরত্ব পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টার।

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটন এই সেতুর বদৌলতে নতুন রূপে জেগে উঠবে বলে আশা করছে অনেকেরই।

সেতুর কারনে দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা ও বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে পর্যটনের নতুন দুয়ার খুললো। কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে যারা ভিড় জমায় তাদের সংখ্যা অনেক বাড়বে। এই সৈকত নিয়ে পর্যটকদের আলাদা আগ্রহ থাকলেও এতদিন ভালো যোগাযোগব্যবস্থা না থাকায় আশানুরূপ পর্যটক যেত না সেখানে।

পদ্মা সেতু পর্যটকদের সেই সুবর্ণ সুযোগটি করে দিল।

কুয়াকাটার পশ্চিমে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় সুন্দরবন যেমন রয়েছে, তেমনি পূর্ব দিকে রয়েছে ভোলার চর কুকরিমুকরি, ঢাল চর, চর নিজাম ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান। কুয়াকাটার গা ঘেঁষে রয়েছে ফাতরার চর, লাল কাঁকড়ার চর, শুঁটকিপল্লি, লালদিয়ার চর, চর বিজয়, ফকিরহাট, সোনার চর, ক্র্যাব আইল্যান্ড। একেক জায়গার প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য ভিন্ন।

পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শুধু কুয়াকাটা, সুন্দরবন নয়, শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল বরগুনার তালতলী উপজেলার টেংরাগিরি, শুভসন্ধ্যা, পাথরঘাটার হরিণঘাটা বন, সমুদ্রসৈকত, বরিশালের দুর্গাসাগর দিঘি, সাতলার শাপলাবিল, ভাসমান পেয়ারা বাজার, ভোলার চর কুকরিমুকরি, মনপুরা হবে পর্যটকদের নতুন গন্তব্য।

কুয়াকাটা হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরিফ বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর কুয়াকাটা রাজধানীর কাছাকাছি চলে আসবে। খুলনার পর্যটকেরাও এখানে আসবেন। সারা বছর কুয়াকাটায় পর্যটকদের আনাগোনা থাকবে।

পদ্মা সেতুর দ্বার উন্মোচনের পরে এখন ধীরে ধীরে দেশের পর্যটন মানচিত্র পাল্টে যাবে এই ধারণা পর্যটন খাতের বিনিয়োগকারীদেরও। তারা ধারণা করছেন, সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার হবে কুয়াকাটা। রাজধানী থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ৩৯৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার কিন্তু পদ্মা সেতু হয়ে রাজধানী থেকে কুয়াকাটা যেতে এখন মত্র পাড়ি দিতে হবে  ২৯৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার দূরত্ব। আবার কেউ চাইলে মাত্র ১০৮ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বরিশাল নগর থেকে  এখানে আসতে পারে। দূরুত্ব কমায় ছুটির দিনেও অনেকে ঘুরতে আসবেন কুয়াকাটায়।

কুয়াকাটা থেকে অল্প সময়ে (মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টা) সুন্দরবনের আকর্ষণীয় স্থান—কচিখালী, কটকা সৈকত, জামতলা সমুদ্রসৈকত, সুন্দরবনসংলগ্ন সাগরে জেগে ওঠা দ্বীপ পক্ষীর চর, ডিমের চরে যাওয়াটা এখন সহজ হবে। সকালে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা হরিণের সান্নিধ্যে কাটিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসা যাবে।

নতুন উদ্যোগে পর্যটন ব্যবসায়ীরা
পদ্মা সেতু চালুর পর নতুন উদ্যোগ নিয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। পর্যটকদের ভীড় সামলাতে এবং তাদের অবকাশ যাপনের কথা চিন্তা করে নতুন সুযোগ সুবিধা যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। এদিকে সেতু চালুর পর কুয়াকাটায় পর্যটক বাড়ছে। কুয়াকাটা থেকে সুন্দরবন খুব কাছে হওয়ায় আশপাশের আরও সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থানে ছুটছে । সবোর্চ্চ ২০ হাজার পর্যটক থাকার রেকর্ড রয়েছে এ সমুদ্রসৈকতে। বিপরীতে কুয়াকাটার সব হোটেল-মোটেল মিলে এখন প্রায় সাত হাজার পর্যটকের আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের বাড়তি ভীড় সামলাতে শিগগিরই আবাসনসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছেন, ট্যুর অপারেটর ও পর্যটনের উদ্যোক্তারা।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, অনেক বড় বড় কোম্পানি কুয়াকাটায় ইতিমধ্যে জমিতে বিনিয়োগ করেছে। সেতু চালুর পর অনেকে কাজও শুরু করেছে। অল্প দিনের মধ্যে বেশ কয়েকটি পাঁচ তারকা মানের হোটেলের নির্মাণকাজ শুরু হচ্ছে।
পাগমার্ক ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলার্সের স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর পর্যটক বেড়েছে। এদের চাপ সঠিকভাবে সামলানো না গেলে বিপর্যয় তৈরি হবে। এ জন্য সরকার ও বন বিভাগকে সমন্বিত ও কার্যকর কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে এখনই।
মোংলার জেআরএস ট্যুরসের স্বত্বাধিকারী মো. ইমাদুল হাওলাদার গণমাধ্যমকে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হয়েছে। এখন ঢাকা থেকে সরাসরি মোংলায় আসতে সময় লাগবে ৪–৫ ঘণ্টা। মানুষ মোংলা হয়ে সুন্দরবন ভ্রমণে আগ্রহী হবে।
news24bd.tv/arif