ইউরোপে আশ্রয়প্রার্থী শীর্ষ ৬ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ

ইইউর প্রতিবেদন

ইউরোপে আশ্রয়প্রার্থী শীর্ষ ৬ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক

ইউরোপের দেশগুলোতে আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদনের হার আগের বছরের তুলনায় ২০২১ সালে ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। গত বছর অন্তত ৬ লাখ ৪৮ হাজার ব্যক্তি ইউরোপের দেশগুলোতে আবেদন করেছেন। শীর্ষ ছয় আবেদনকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৩৮৫ পৃষ্ঠার আশ্রয়প্রার্থীবিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।

ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আশ্রয়প্রার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইইউএএ) এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ইইউএএ ২০২১ সালের পরিস্থিতির পাশাপাশি ২০২২ সালের প্রথম দিকের পরিস্থিতি, বিশেষ করে ইউক্রেনে রুশ হামলার প্রভাবে সৃষ্ট পরিস্থিতি তুলে ধরেছে। ইউরোপে গত ৩০ বছরের মধ্যে প্রথম স্থলযুদ্ধের প্রভাব বিশ্বের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ঝুঁকিতে পড়া মানুষের সুরক্ষার বিষয়টি জোরালো হয়েছে।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানের মূল বক্তা এবং ইইউএএর নির্বাহী পরিচালক নিনা গ্রেগোরি বলেন, ২০১৫–২০১৬ সালে সিরিয়া যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট শরণার্থী সংকটের পর গত বছর প্রতি মাসে সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষ ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। মূলত তিনটি কারণে আবেদনপ্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—অভিবাসীদের ওপর বেলারুশ সরকারের নিপীড়ন, আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতায় ফেরা এবং ইউক্রেন যুদ্ধ।

নিনার মতে, আন্তর্জাতিক কয়েকটি ঘটনার প্রেক্ষাপটে এত বিপুলসংখ্যক মানুষ ২০২১ সালে ইউরোপের দেশগুলোতে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। এর ফলে আবেদনকারীদের সংখ্যা করোনা সংক্রমণের আগের পর্যায়ে ফিরে গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত আবেদনকারীর হার মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের দিকে সংখ্যাটি বাড়তে থাকে। বিশেষ করে আফগানিস্তান ও সিরিয়ার মানুষের আবেদনের হার বেড়ে যাওয়ায় এই সংখ্যা হঠাৎ করে বৃদ্ধি পায়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আশ্রয়প্রার্থীর আবদনের তালিকার শীর্ষ রয়েছে সিরিয়া। সে দেশ থেকে ১ লাখ ১৭ হাজার মানুষ আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। সিরিয়া ছাড়া শীর্ষ ছয় দেশের তালিকায় রয়েছে—আফগানিস্তান (১ লাখ ২ হাজার), ইরাক (৩০ হাজার), পাকিস্তান ও তুরস্ক (২৫ হাজার করে) এবং বাংলাদেশ (২০ হাজার)।

ইইউর বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে ৬ লাখ ৪৮ হাজার আশ্রয়প্রার্থীর আবেদনের মধ্যে ৫ লাখ ৩৫ হাজার আবেদন প্রাথমিকভাবে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এঁদের মধ্যে ১ লাখ ১৮ হাজারকে শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। সম্পূরক সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে ৬৪ হাজার আবেদনকারীকে। আশ্রয় চেয়ে সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে ফ্রান্সে (১ লাখ ৯১ হাজার), স্পেনে (৬৫ হাজার) ও ইতালিতে (৫৩ হাজার)।

আবেদনকারীদের ৭০ শতাংশই পুরুষ। ৬ লাখ ৪৮ হাজার আবেদনকারীর অর্ধেকের বয়স ১৮ থেকে ৩৪ বছর। মোট আবেদনকারীদের ২৯ শতাংশের বয়স ১৯ বছরের কম। সঙ্গীহীন কিশোরের মধ্যে দুই–তৃতীয়াংশের বয়স ১৬ থেকে ১৭ বছর।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল—এই পাঁচ বছরে ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন প্রতিবছর ১১ হাজারের বেশি। করোনা সংক্রমণের শুরুর বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে সংখ্যাটি ছিল ১১ হাজার ৫৭০ জন। এ ছাড়া ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত চার বছরে আবেদনের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৫ হাজার, ১৮ হাজার ৮৬৫, ১৩ হাজার ৭৪০, ১৫ হাজার ৮৪৫ এবং ১১ হাজার ৫৭০ জন। আর ২০২১ সালে ২০ হাজার ১১০ আবেদন পড়েছে।

সঙ্গীহীন কিশোর–কিশোরীদের আবেদনকারী শীর্ষ তিন দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম আছে। গত বছর আফগানিস্তান, সিরিয়া ও বাংলাদেশ থেকে আবেদনকারীর সংখ্যা যথাক্রমে ১২ হাজার ৫৭৫, ৩ হাজার ৮৬০ ও ১ হাজার ৩৪০ জন।

ইউরোপের দেশগুলোতে আশ্রয়ের আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, এমন শীর্ষ পাঁচ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। সিরিয়া, পাকিস্তান, কলম্বিয়া, নাইজেরিয়া ও বাংলাদেশের সংখ্যা যথাক্রমে ২৩ হাজার ৯৮৫, ২০ হাজার ৮৭৫, ২০ হাজার ৪৫০, ১৬ হাজার ৯১০ ও ১৫ হাজার ৯৩৫ জন।

news24bd.tv/desk