যে মসজিদে নামাজ পড়লে ওমরাহর সওয়াব

মসজিদে কুবা

যে মসজিদে নামাজ পড়লে ওমরাহর সওয়াব

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

ইসলামের ইতিহাসে প্রথম নির্মিত মসজিদ ‘মসজিদে কুবা’। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় আগমনের পর এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়। যার ভিত্তি ছিল তাকওয়া বা আল্লাহভীতির ওপর। এখানকার লোকেরা পবিত্রতার ব্যাপারে বেশ সচেতন ছিলেন।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ এই মসজিদ ও তার মুসল্লিদের প্রশংসা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে মসজিদ প্রথম দিন থেকে তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত সেখানে অবস্থান করা আপনার জন্য অধিক সংগত। সেখানে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা পবিত্রতা পছন্দ করে। আর আল্লাহ পবিত্র ব্যক্তিদের ভালোবাসেন।

’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১০৮)

কুবা মূলত একটি প্রাচীন কূপের নাম। কূপের নামানুসারে পরবর্তী সময়ে এলাকার নামকরণ হয়। মহানবী (সা.) মদিনায় আগমনের পর কুবা নামক স্থানে অবতরণ করেন। তিনি আবু আইয়ুব আনসারি (রা.)-এর ঘরে অবস্থান করেন। তখন এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়। মদিনার উত্তর প্রান্তে অবস্থিত এই মসজিদের নির্মাণকাজে স্বয়ং বিশ্বনবী (সা.) অংশগ্রহণ করেন। মসজিদ নির্মাণে প্রথম পাথরটি তিনিই রাখেন। নির্মাণকাজ শেষ হলে তিনি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করেন এবং কুবাবাসীর প্রশংসা করেন। নবনির্মিত মসজিদে প্রথম নামাজ তিনিই আদায় করেন।

মসজিদ-ই-নববীর পাশে স্থায়ী আবাস গড়লেও মহানবী (সা.) প্রতি সপ্তাহের শনিবার মসজিদে কুবায় আসতেন।

আবদুল্লাহ ইবনে দিনার (রহ.) থেকে বর্ণিত, ইবনে ওমর (রা.) প্রতি শনিবার কুবায় আসতেন। তিনি বলতেন, আমি রাসুলু্ল্লাহ (সা.)-কে প্রতি শনিবার এখানে আসতে দেখেছি। (মুসলিম, হাদিস : ৩২৮৬)

কুবা মসজিদে গিয়ে কমপক্ষে দুই রাকাত নামাজ পড়ার বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) পদব্রজে অথবা বাহনে চড়ে কুবা মসজিদে আসতেন। অতঃপর তিনি সেখানে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। (মুসলিম, হাদিস : ৩২৮১)

সাহল ইবনু হুনাইফ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি নিজের ঘরে পবিত্রতা অর্জন করল, অতঃপর কুবা মসজিদে এসে নামাজ পড়ল, তার জন্য একটি ওমরাহর সমান সওয়াব রয়েছে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪১২)

এই মসজিদটি নির্মিত হওয়ার পর কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর উসমান বিন আফফান (রা.), ওমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.), উসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ ও তাঁর ছেলে প্রথম আবদুল মাজিদ প্রমুখ শাসকরা মসজিদে কুবার সংস্কারকাজ করেন। বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ আলে সৌদের সময় সর্বশেষ সম্প্রসারণ করা হয়। ১৪০৫ হিজরিতে শুরু হওয়া সংস্কারকাজ শেষ হয় ১৪০৭ হিজরিতে। যাতে মসজিদের আয়তন দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৫০০ বর্গমিটার। মসজিদে কুবায় বর্তমানে ২০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে। তবে নবীজি (সা.) এর যুগে নির্মিত মসজিদের অংশে নামাজ পড়তে চাইলে মেহরাবের কাছাকাছি পড়াই ভালো।