প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ১০ লক্ষাধিক টাকা তছরুপের অভিযোগ!

প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিন জোয়ার্দ্দার

প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ১০ লক্ষাধিক টাকা তছরুপের অভিযোগ!

শেখ রুহুল আমিন • ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

ঝিনাইদহের ঐতিহ্যবাহী শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে গেল এক বছরে ১০ লক্ষাধিক টাকার তহবিল তছরুপ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।  

বিদ্যালয়ের বিভিন্ন রেজুলেশনে টাকা উত্তোলনের স্বাক্ষরবিহীন নোট শিট, অনিয়ম আর জাল-জালিয়াতির ৩৫ পৃষ্ঠার বেশি হিসাব-নথি ফাঁস হয়ে গেছে। এসব নিয়ে শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। নিয়মের প্রতিবাদে শিক্ষকরা ক্লাস বর্জনও করেছেন।

এরইমধ্যে  বিদ্যালয়ের অনিয়মের লিখিত ফিরিস্তি দেয়া হয়েছে শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রশাসক, শিক্ষা বোর্ড ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদকে)।  

স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদ্য বিদায়ী সভাপতি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, তার স্বাক্ষর ছাড়াই রেজুলেশন, চেকসহ সমস্ত তহবিল ও হিসেবে নানা জালিয়াতি করা হয়েছে। আর বিদ্যালয়টির বর্তমান এডহক কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তদন্ত কমিটি গঠনসহ বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।  
 
শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. ফজলুর রহমানের লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, রেজুলেশন ও নোট শিটে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সহি-স্বাক্ষর ছাড়াই টাকা উত্তোলন করে চলছেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিন জোয়ার্দ্দার।

 

news24bd.tv

কমিটির অনুমোদন ছাড়া অর্থ ব্যয় আবার কখনো সাধারণ তহবিল ব্যতিত বিদ্যালয়ের নামে কৌশলে নতুন একাউন্ট করে চেকে একক স্বাক্ষরেই চলছে অর্থ উত্তোলন। কখনো বা বিল-ভাউচার জালিয়াতি, ফর্ম ফিলআপ-রেজিস্ট্রেশনে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, নীতিমালার বাইরে হ্যান্ডক্যাশ উত্তোলন, নির্ধারিত নোটবই কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা, বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানের নামে চাঁদা তুলে আত্মসাৎ, ৫০% হারে বেতন উত্তোলন- এমন হাজারো অভিযোগ রয়েছে ঝিনাইদহের ঐতিহ্যবাহী শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে।  

এছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহারসহ শিক্ষক-কর্মচারীর অশোভন আচরণেরও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। বিদ্যালয়ের বেতন-সেশন ফি হঠাৎ দ্বিগুণ বৃদ্ধি নিয়েও অভিভাবক মহলে উঠেছে প্রশ্ন।  

বিভিন্ন সময়ে প্রধান শিক্ষিকা ছুটিতে থাকাকালে নিয়ম অনুযায়ী সহকারী প্রধান শিক্ষকের ওপর দায়িত্ব বর্তায়। কিন্তু চাকরি বিধি লঙ্ঘন করে দিলারা ইয়াসমিন জুনিয়র শিক্ষকদের এই দায়িত্ব দেন।  

দিলারা ইয়াসমিনের দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারে বিদ্যালয়ে সবাই অতিষ্ঠ ও তার ওপর ক্ষুব্ধ।

জানা যায়, গেল ১১ মাসে ৪জন শিক্ষককে অন্যায়ভাবে শোকজ নোটিশ দিয়েছেন দিলারা। এছাড়া তার অনুগত না হলেই শিক্ষকদের নানাভাবে হুমকি প্রদান করেন তিনি। তার মতের বাইরে গেলে কোনো শিক্ষক-কর্মচারীকে তিনি মানবিক কারণেও ছুটি মঞ্জুর করেন না বলে নালিশ করেছেন অনেকে।

সম্প্রতি শৈলকুপা উপজেলার মাসিক আইন-শৃংখলা মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আলোচনার মূল বিষয় ছিল প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিনের অর্থ আত্মসাৎ ও লাগামহীন দুর্নীতি। এই মিটিংয়ে বিষয়টি জানার পর ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান শিকদার মোশাররফ হোসেন সোনা।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের জুলাই মাসে  প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই এমন অনিয়ম করে আসছেন দিলারা। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর স্কুলের ভরাডুবি হয়েছে বলে মনে করেন ম্যানেজিং কমিটির সদ্য বিদায়ী সভাপতি কাজী আশরাফুল আজম।  

তবে দিলারা ইয়াসমিন তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তার ভাষ্য, রেজুলেশন আর ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই স্কুল পরিচালনা হচ্ছে। তাকে পদ থেকে সরানোর জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন দিলারা।

এ বিষয়ে শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের বর্তমান এডহক কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. উসমান গনি জানান, তদন্ত কমিটি গঠনসহ বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি সব কিছু খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন এবং এ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি মিটিংও করেছেন।


রুহুল/অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর