‘হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থেকেই সীতাকুণ্ডের ডিপোতে বিস্ফোরণ’

সংগৃহীত ছবি

‘হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থেকেই সীতাকুণ্ডের ডিপোতে বিস্ফোরণ’

অনলাইন ডেস্ক

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থেকেই সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে এই ঘটনায় বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় আমরা ১৭ ধরনের নমুনা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের ঢাকা ল্যাবে পাঠিয়ে পরীক্ষা করিয়েছি। তাতে ওই ডিপোতে অন্য কোনো কেমিক্যালের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

বুধবার বিকেলে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তরকালে তিনি এসব কথা বলেন। পরে তদন্ত কমিটির সদস্যরা বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিনের কাছে ১৯ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদন এবং প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট আরও ২৫৯ পাতার সহযোগী কাগজপত্র দাখিল করেন।  

এক প্রশ্নের জবাবে মিজানুর রহমান বলেন, ‘হাইড্রোজেন পার অক্সাইড নিজে নিজে জ্বলে না, এটি ঠিক নয়। কারণ, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড নিজে নিজেই জ্বলতে পারে।

’ 

প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের তিনটি বিষয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি হলো ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান, দায়দায়িত্ব নির্ধারণ এবং এ ধরনের দুর্ঘটনার প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়ন। আমরা অগ্নিকাণ্ডের কারণ খুঁজে বের করেছি, দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করেছি কারা এর জন্য দায়ী। আমরা ২০টি সুপারিশ করেছি। সেখানে আমরা বৈধ অবকাঠামোগত প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তুলে ধরেছি। কিছু নিয়মকানুন আছে, কিছু আইন কানুনের অনুপস্থিতির বিষয় ছিল। সেগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি। বিশেষ করে ডিজি কার্গো অ্যাক্ট ১৯৫৩ সংশোধনের জন্য আমরা সুপারিশ করেছি। এটি আমাদের এক নম্বর সুপারিশ ছিল। এটি সংশোধন করতে হবে আইএমডিজি কোডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। আইএমডিজি কোডের সর্বশেষ ভলিউমগুলো বের হয়েছে ২০১৮ সালে। আর আমাদের আইনটা হলো ১৯৫৩ সালে। ’

অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ পাইনি, কোনো সফটওয়্যার পাইনি। মালিকপক্ষ জানিয়েছে, এগুলোর কোনো ব্যাকআপ ছিল না। কিন্তু আমরা এগুলো রিকভার করার চেষ্টা করেছি। এটা মালিক পক্ষের একটা ব্যর্থতা। কারণ, ২০২২ সালে ক্লাউডে বা অন্যত্র কোনো নিরাপদ জায়গায় সিসিটিভি ফুটেজ সেভ থাকবে না এটি আধুনিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যায় না। বিশেষ করে একজন বিদেশি নাগরিক যেখানে এটি মালিক। এটি মালিক পক্ষের এক ধরনের ব্যর্থতা অবশ্যই।

এক প্রশ্নের জবাবে মিজানুর রহমান বলেন, কর্তৃপক্ষ তো অবশ্যই দায়ী। কারণ, আমার ঘরে আগুন লাগলে আমার দায় অবশ্যই থাকবে। তবে যারা এটি তদারকি করতেন, তারাও তাদের দায়িত্ব অবহেলার বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারেন না। ’ এ সময় তিনি বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অন্য কোনো কেমিক্যালের অস্তিত্ব খুঁজে পাননি বলে জানান।  

মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, একটি অপডক পরিচালনার জন্য ২৫ টির মতো লাইসেন্স নিতে হয়। আমরা সুপারিশ করেছি ২০১৬ সালের অপডক নীতিমালা আছে। অফডকগুলো মনিটরিংয়ের জন্য নৌ মন্ত্রণালয়ে একটি মনিটরিং টিম আছে। আমরা বলেছি, ওই কমিটিতে এই ২৫টি সংস্থার প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করলে এই কমিটি মিটিং করে সুপারিশ করতে পারবে। কার লাইসেন্স হবে, আর কার লাইসেন্স হবে না। এখন কোন সংস্থা লাইসেন্স দিয়েছে, কোন সংস্থা লাইসেন্স দেয়নি, এগুলো একটার টা অন্যটা জানে না। কারণ, এক সংস্থার সঙ্গে অন্য সংস্থার কোনো যোগাযোগ নেই।

২৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে জানিয়ে মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি তাদের মধ্যে ৫ জন ছিলেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, যারা ঘটনার সময় সেখানে অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলায় কাজ করেছেন। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এক পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এর বাইরে আল রাজী কেমিক্যালের মালিক, ওই প্রতিষ্ঠানের জিএমসহ (মার্কেটিং) সিঅ্যান্ডএফ, ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স, শিপিং লাইন এবং বিএম কন্টেইনার ডিপোর সঙ্গে জড়িতদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। ডিপো মনিটরিং এবং ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত ৬টি প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা প্রতিবেদন নিয়েছি।

এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা সবকিছু পর্যালোচনা করে এই রিপোর্ট তৈরি করেছি। এই রিপোর্টের একটি সীমাবদ্ধতা আমরা পেয়েছি, সেটি হলো যারা ওই প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন, তাদের মধ্যে প্রায় ১৬ জন ডিপো কর্মী দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। এটি আমাদের জন্য একটা সীমাবদ্ধতা, তারা নিহত হওয়ায় আমরা তাদের বক্তব্য নিতে পারিনি। ডিপো পরিচালনার সঙ্গে জড়িত উচ্চ পর্যায়ের দু-একজনের সঙ্গে আমরা কথা বলতে পারিনি। এর মধ্যে একজন মহাব্যবস্থাপক বিদেশ ছিলেন, আরেকজন হলেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক। ওনার নামে মামলা থাকায় তিনি পলাতক রয়েছেন।

news24bd.tv/আলী