রেডমিট বা লাল মাংসের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে শুনতে শুনতে অনেকেরই মনে হতে পারে লাল মাংস তথা গরু-খাসির মাংসের বুঝি কোনো ভালো গুণই নেই। তবে রেডমিট সম্পর্কে সতর্কবাণী বয়স্ক ও রোগীদের জন্যেই বেশি প্রযোজ্য। যাদের বয়স ৩০-এর নিচে, যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক আছে, যাদের ওজন স্বাভাবিক তাদের জন্য লাল মাংসের এই সকর্তবানী নয়। তবে রেড মিটের রয়েছে ভালো-মন্দ।
দৈনিক কী পরিমাণ?
একজন সুস্থ মানুষ দৈনিক ৮৫ গ্রাম পর্যন্ত মাংস খেতে পারবেন। একটা তাসের বান্ডিলের সমপরিমাণ মাংস নিলেই তা প্রায় ৮৫ গ্রাম হয়ে যায়। সাধারণত পশুর পেছনের পাশের ওপরের অংশের মাংসের ফালি, সিনার মাংস, দাবনার মাংসে কম ফ্যাট থাকে। রেড মিট খাওয়ার সময় এমন মাংস বেছে নিন।
গবেষণা বলছে, কৃশকায় গরুর মাংস স্বাস্থ্যকর। কারণ তাতে কোলেস্টেরল থাকে কম। এ ধরনের গরুর সাধারণ মাংস দৈনিক ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম গ্রহণে খুব একটা অসুবিধা হয় না।
উপকারীতা
- গরুর মাংস বা রেডমিট হচ্ছে প্রাণিজ প্রোটিন, আয়রন, জিঙ্ক, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, সেলেনিয়াম এবং ভিটামিন বি১২-এর অন্যতম উৎস। তাই এই গরুর মাংসই হতে পারে স্বাস্থ্যকর খাবার যদি গরুর মাংসের চর্বি বাদ দিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে খাওয়া যায়।
- গবেষণায় দেখা গেছে, কৃশকায় মানে কম চর্বিসম্পন্ন গরুর মাংসের কিছু উপাদান যেমন- এমাইনো অ্যাসিড, টরাইন এবং আর্জিনাইন সিসটোলিক (উপরের) রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
- কম চর্বিযুক্ত গরুর মাংস শিশু-কিশোর, তরুণ-যুবার জন্য পুষ্টিকর খাবার হিসেবে বিবেচিত। তবে বয়স ৩০-এর ওপরে হলে, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে, মেদাধিক্য ও বাড়তি ওজনদার মানুষ হলে, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য গরুর মাংস তথা রেডমিট এড়িয়ে চলাই মঙ্গলজনক।
- রেড মিট প্রোটিনের খুব ভালো উৎস। পেশির গঠন, হাড়ের বৃদ্ধি এবং ওজন বৃদ্ধির জন্য রেড মিট খাওয়া উপকারী। বিশেষ করে শিশুদের বৃদ্ধির জন্য দরকার।
- রেড মিট আয়রনের চমৎকার উৎস। গর্ভবতী নারী, কিশোরী, বয়স্ক লোক ও শিশুদের হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য রেড মিট দরকার।
- ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের ভালো উৎস রেড মিট হওয়ায় তা স্নায়ুতন্ত্র ও চোখের উন্নতি সাধন, হজমে সাহায্য, চুল, ত্বক ও নখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও বি কমপ্লেক্সের অভাবজনিত রোগ দূর করতে সাহায্য করে।
- জিংকের ভালো উৎস হওয়ায় শরীরের জন্য রেড মিট উপকারী। জিংক দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, রুচি বাড়াতে, ক্ষত শুকাতে, দেহের বৃদ্ধি এবং প্রজনন স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে।
অপকারিতা
- রেড মিটে প্রচুর এলডিএল কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড থাকায় তা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
- স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকায় রক্তনালিতে ব্লক সৃষ্টি করে, যার কারণে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হয়।
- টাইপ-টু ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়।
- অতিরিক্ত রেড মিট খেলে পেটে বদহজম হয়, গ্যাস্ট্রিক এবং আলসারের সমস্যা বেড়ে যায়।
- বৃহদন্ত্র, ক্ষুদ্রান্ত্র, পাকস্থলী, প্রোস্টেট, কোলন ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে অতিরিক্ত রেড মিট গ্রহণ করলে।
- আর্থাইটিস ও কিডনি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়; ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যায়।
সতর্কতা
বেশি বেশি কোনো কিছুই ভালো নয়, তেমনি রেড মিট বা গরু-খাশির মাংসও বেশি খাওয়া ভালো নয়। তবে ঢালাওভাবে সবাই গরুর মাংস এড়িয়ে চলবেন এটা ঠিক নয়।
লেখক : আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশি চিকিৎসক
news24bd.tv/desk