কোলেস্টেরলমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত মাংস রান্নার কিছু কৌশল

তৈলাক্ত মাংস কম খাওয়া ভালো

কোলেস্টেরলমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত মাংস রান্নার কিছু কৌশল

আতাউর রহমান কাবুল

কোরবানীর ঈদে অনেকেই বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কোষ্টকাঠিন্য, ক্যান্সার ইত্যাদির রোগীরা রেডমিট বা গরু, খাসির মাংস খেতে চান না অথবা বর্জন করেন। কিন্তু কিছু নিয়ম মেনে বা কিছু কৌশল অবলম্বল করে মাংস রান্না করলে ক্ষতি হবার আশঙ্কা কম থাকে।

বেছে নিন, রাউন্ড ও সেরলয়েন 
গরুর শরীরের ২টি অংশে চর্বির পরিমাণ অনেক কম থাকে। একটি হল পেছনের রানের উপরের ফোলা অংশের মাংস, যাকে বলে ‘রাউন্ড’।

আর একটি হলো পেছনের দিকের উপরের অংশের মাংস যাকে বলে ‘সেরলয়েন’। একান্তই মাংসে যাদের ভয়, তারা এই দুই অংশের মাংস বেছে নিতে পারেন।  

চর্বি বা কোলেস্টেরলমুক্ত করার কৌশল

  • ছোট টুকরো করে মাংস কাটুন। কারণ মাংসের টুকরো যতো ছোট হবে ততোই এর চর্বির পরিমাণ কমে যাবে।
    তাই কিমা বা ব্লেণ্ড করা মাংসে চর্বি কম থাকে।  
  • মাংসে লেগে থাকা দৃশ্যমান চর্বিগুলো সম্পূর্ণরুপে ফেলে দিন।
  • মাংস কাটা শেষে তা ভালোভাবে ধুয়ে কিছুক্ষণ পানিতে সেদ্ধ করুন। এতে চর্বির স্তর পানিতে ভেসে উঠবে। চর্বিসহ সেই পানি ফেলে দিন।  
  • ঘি, মাখন, ডালডা দিয়ে মাংস রান্না করবেন না। আবার বেশি তেল, মসলা দিয়ে কসিয়ে ভুনা করবেন না। ঝোল ঝোল করে মাংস রান্না করুন, তবে খাবার সময় সেই ঝোল বাদ দেবেন।  
  • মাংসে থাকা ফ্যাট কমাতে ভিনেগার, কাঁচা পেঁপে, লেবুর রস বা টক দই দিয়ে রান্না করতে পারেন।
  • মাংস রান্না হয়ে গেলে ঠান্ডা করে প্রয়োজনে ফ্রিজে রেখে দিন। এরপর জমাট বাধা হলুদ ফ্যাট বা চর্বিগুলো চামচ দিয়ে ফেলে দিন।
  • পুনরায় মাংস গরম করে ঠান্ডা করুন। আগের প্রক্রিয়ায় আবার হলুদ চর্বি বা ফ্যাট অংশটুকু ফেলে দিন।

এভাবে পেয়ে যাবেন কাংখিত কোলেস্টেরল মুক্ত খাবার উপযোগী বা রান্নাকরা মাংস। গবেষকগণ বলছেন, এতে মাংস প্রায় ৮০ ভাগ কোলেস্টেরল মুক্ত হতে পারে। তবে  আমিষের মাত্রার কোন হেরফের হয় না।

খাবার সময় মেনে চলুন

  • মাংসের সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণে সবজি খান। টাটকা সবজি পাকস্থলীকে সাবলীল রাখে।
  • গ্রিল বা শিক কাবাব, জালি কাবাব খেলে ক্ষতির আশঙ্কা কম থাকে। কাবাব বানানোর সময় কিমার সাথে ডাল, আলু, গাজর বা অন্যান্য খাদ্য উপাদান ব্যবহার করুন। ফলে মাংস কম খাওয়া হবে।
  • খাবার মেনুতে যথেষ্ট সালাদ ও লেবু রাখুন।
  • মগজ, ভুঁড়ি বা বট, পায়া, নেহারি, হাড়ের মজ্জা ইত্যাদিতে চর্বির মাত্রা অনেক বেশি। তাই এগুলো পরিমাণে কম খান বা বাদ দিন।

খাবার পর করণীয়

  • মাংস খাওয়ার কমপক্ষে আধা ঘণ্টা পর পানি পান করুন। সহণীয় গরম পানি হলে ভালো।
  • লেবু পানি, টক দই (লো ফ্যাট, চিনি ছাড়া) খেতে পারেন।
  • খাওয়ার এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর হালকা হাঁটাহাঁটি বা চলাফেরা করুন।
  • কোমল পানীয় খাবেন না; এতে ক্ষতির আশঙ্কাই থাকে বেশি।

সতর্কতা

  • লাল মাংসের যেমন উপকারীতা আছে, তেমনি এতে আছে প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাট যেমন ট্রাইগ্লিসারাইড ও এলডিএল, যা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল হিসেবে পরিচিত। এগুলো দেহের ওজন বৃদ্ধি করে, রক্তচাপ বাড়ায়, রক্তনালীতে চর্বি জমিয়ে রক্তপ্রবাহকে ব্যাহত করে। তাই, এমন সমস্যা যাদের আছে তারা চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ মেনে মাংস খান।
  • উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে অতিরিক্ত চর্বি ইত্যাদি না থাকা সত্বেও এই বয়সের সবাইকেই কোরবানীর ঈদের খাবারের ব্যাপারে বাড়তি সতর্ক থাকা দরকার।
  • লাল মাংস ইউরিক এসিড বাড়ায়। যাদের ইউরিক এডিসের পরিমাণ বেশি তাদের কম খাওয়াই ভালো।
  • স্ট্রোক এবং হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীরা অবশ্যই তৈলাক্ত মাংস কম খাবেন। সারা বছর তারা যে ধরণের নিয়মকানুন পালন করেন, কোরবানীর ঈদের সময়ও খাওয়া-দাওয়ায় সেই নিয়মগুলো আপনারা মেনে চলুন।
  • চেষ্টা করুন যেন মাত্রাতিরিক্ত মাংস খাওয়া না হয়। যেকোনো শারীরিক সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

(ইন্টারনেট অবলম্বনে)

news24bd.tv/desk