জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ তৈরিতে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী লামিয়াও ছিলেন

লামিয়া আশরাফ মওলা

জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ তৈরিতে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী লামিয়াও ছিলেন

অনলাইন ডেস্ক

আলোচিত জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া প্রথম পূর্ণাঙ্গ রঙিন ছবি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়েব টেলিস্কোপের প্রথম ছবি সোমবার (১১ জুলাই) হোয়াইট হাউস থেকে প্রকাশ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

নাসা, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি ও কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সির যৌথ উদ্যোগে মহাকাশে পাঠানো হয়েছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। এই জেমস ওয়েব প্রকল্পে কানাডিয়ান টিমের সদস্য হিসেবে ২০২০ সাল থেকে কাজ করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জ্যোতির্পদার্থবিদ লামিয়া আশরাফ মওলা।

ছায়াপথের জন্ম ও বিবর্তন এবং নক্ষত্র ও গ্রহের সৃষ্টির কারণ জানতে গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর মহাকাশে পাড়ি জমায় জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। এই স্পেস টেলিস্কোপটি নকশা ও নির্মাণে লেগেছে প্রায় ৩০ বছর। খরচ হয়েছে ১০ বিলিয়ন ডলার।

কানাডাপ্রবাসী এই বাংলাদেশি বিজ্ঞানী গবেষণা করছেন টরন্টো ইউনিভার্সিটির ডানল্যাপ ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্সে।

১৯৯১ সালে ঢাকায় জন্ম লামিয়ার। এখানেই বেড়ে ওঠা। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শুরু করেছেন কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে। ও-লেভেল, এ-লেভেল সম্পন্ন করার পর পাড়ি জমিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। স্কলারশিপ নিয়ে ভর্তি হন সেখানকার ওয়েলসলি ইউনিভার্সিটিতে। এরপর কানাডার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাস্ট্রোনমিতে পিএইচডি করেছেন।

নিজের পড়াশোনা নিয়ে লামিয়া বলেন, 'প্রথম আমাদের স্কুলে পদার্থবিজ্ঞান পড়েছিলাম। সেই ছোট থেকে আমার পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ ছিল। আমি আসলে ওয়েলসলিতে ফিজিক্স পড়তে যাইনি, গিয়েছিলাম নিউরোসায়েন্স পড়তে। কিন্তু ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার পর একটা অ্যাস্ট্রোনমি ক্লাসে গিয়েছিলাম। আমাদের টেলিস্কোপ ছিল। ক্লাসের প্রথম দিন থেকে বিগ ব্যাং, গ্যালাক্সি নিয়ে কথা হতো। প্রতি সপ্তাহে টেলিস্কোপ দিয়ে আকাশে চোখ রাখতাম। এর পর থেকে আর আমার নিউরোসায়েন্স পড়ার ইচ্ছা রইল না, ফিরে এলাম ছোটবেলার ফিজিক্সে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করলাম ফিজিক্সে। ল্যাবে কাজ করলাম বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট নিয়ে। তারপর অনার্সে থিসিস করলাম এমআইটির লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েব অবজারভেটরিতে (খওএঙ)। তৃতীয় প্রজন্মের লাইগোর সিলিকনের আয়না কীভাবে শীতল করতে হবে, সেটাই ছিল আমার গবেষণার বিষয়। দুটি কাজই খুব মজার ছিল, কিন্তু সারাদিন বেজমেন্টের ল্যাবে কাজ করতে হতো। টেলিস্কোপ মিস করা শুরু করি। তখন বুঝলাম, আমি অবজারভার হতে চাই। আবেদন করলাম অ্যাস্ট্রোনমিতে পিএইচডির জন্য। এরপর ছয় বছর ছিলাম ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে আছি।

সম্প্রতি জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ প্রসঙ্গে লামিয়া বলেন, 'আমার কাছে সবচেয়ে রোমাঞ্চকর বিষয় হবে, প্রথম দিককার সব ছায়াপথ থেকে আলো পাওয়া। দূরের জিনিস থেকে আলো আসতে বেশি সময় নেয়, কারণ আলো একটি নির্দিষ্ট গতিতে চলে। আমরা যত দূরে দেখি, আমরা তত আগের আলো দেখতে পাই। টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা হলো টাইম ট্রাভেল বা সময় পরিভ্রমণের মতো। হাবল ক্ষীণ আলো দেখেছে প্রায় ১৩০০ কোটি বছরের আগেরকার একটি ছায়াপথ থেকে। ওয়েব সেটা নিশ্চিত করবে এবং এ রকম আরও অনেক ছায়াপথ খুঁজে পাবে। আমরা এখন উদগ্রীব হয়ে আছি জানতে, প্রথম গ্যালাক্সি কেমন ছিল। বিগ ব্যাংয়ের পরে কয়েকশ মিলিয়ন বছরে কী কী হয়েছিল? এক্সোপ্লানেটের বায়ুমণ্ডল দেখার জন্য উদগ্রীব বিজ্ঞানীরা। অন্য গ্রহের বায়ুমণ্ডল কেমন, সেটা জানতে চাই আমরা। হাবল আর জেমস ওয়েবের পার্থক্য হলো, জেমস ওয়েবের রেজুলেশন এবং ক্ষমতা হাবলের ১০ গুণ বেশি। খুব ছোট এবং ক্ষীণ জিনিস আমরা স্বচ্ছভাবে দেখতে পাব। '

লামিয়া প্রকল্পে যোগ দেওয়ার পর থেকেই মূলত কভিড মহামারি হানা দেয়। তাই সব কাজ অনলাইনেই করতে হয়েছে বলেও জানান তিনি।

news24bd.tv/রিমু