প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজ বোনকে গলাকেটে হত্যা

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজ বোনকে গলাকেটে হত্যা

আব্দুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বৃ-আঙ্গারু গ্রামের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারজু খাতুন (২৮) হত্যাকাণ্ডের দেড় বছর পর প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করেছে সিআইডি পুলিশ। প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যেই নারজুর বড় ভাই আতাহার সরদার ও তার স্বজনরা নারজুকে গলা কেটে হত্যা করেছে। এ ঘটনা আটক রনজু খাতুনের হত্যাকারী সরোয়ার হোসেন নামে একজন আটক করার পর সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী নারজুর বড় ভাইসহ অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলেও জানিয়েছে সিআইডি ইন্সপেক্টর মো.ওহেদুজ্জামান।

সিআইডি ইন্সপেক্টর মো. ওহেদুজ্জামান ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মো. তোফাজ্জল হোসেন জানান, শাহজাদপুর উপজেলার বৃ-আঙ্গারু গ্রামের আতাহার হোসেনের ছেলে সবুজ বাদী হয়ে তার ফুফু নারজু বেগমকে গলাকেটে হত্যা করা হয়েছে মর্মে বাদী হয়ে শাহজাদপুর থানায় মামলা দায়ের করে। মামলায় তাদের প্রতিপক্ষকে আসামি করেন এবং উল্লেখ করেন ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাত ১০টা থেকে পরদিন বিকেল পাঁচটার মধ্যে প্রতিপক্ষের লোকজন তার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ফুফুকে ডেকে নিয়ে গলাকেটে হত্যা করেছে।

থানা-পুলিশ তদন্তের একপর্যায়ে মামলাটি সিআইডির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ স্ব-উদ্যোগে অধিগ্রহণ করে তদন্ত শুরু করেন। প্রাথমিক তদন্তে সিআইডি জানতে পারেন, মামলার বাদীপক্ষ এবং আসামিপক্ষ একই এলাকার বাসিন্দা।

ধোলাই নদীর জলকরসহ নানা বিষয় নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। তারই ধারাবাহিকতা ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর সকালে এলাকায় দুপক্ষের সমন্বয়ে এক সালিস বৈঠক বসে। বৈঠকে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে মামলার বাদী
সবুজ ও তার বাবা আতাহারসহ তাদের পক্ষের লোকজন আব্দুল আওয়াল নামে একজনকে মারপিট করে হত্যা করে। এ ঘটনায় শাহজাদপুর থানায় সবুজ ও তার বাবাসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে আদালতে
অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।

বিষয়গুলো মাথায় নিয়ে সিআইডি গভীরভাবে তদন্ত শুরু করে এবং মামলার সন্দেহভাজন আসামি সরোয়ার হোসেন সনজু নামে একজন আটক করেন।

পরে সনজুকে আদালতে সোপর্দ করলে আসামি সনজু আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে আসামি সরোয়ার হোসেন সনজু উল্লেখ করেন, আওয়াল হত্যাকােণ্ডের পর আওয়ালের স্বজনরা তাদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর, গরু, ছাগল ও মালামাল লুট করে নেয়। ভয়ে তারা দীর্ঘদিন ঘরবাড়ি ছেরে পালিয়ে থাকে এবং অনেকে জেলহাজতে ছিল। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রতিপক্ষককে ঘায়েল এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য নিজেদের কাউকে হত্যা করে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করার পরিকল্পনা করা হয়।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাত ১১ থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে আমরা সকলেই (যে কয়জন ঘটনার সাথে জড়িত) ঘটনাস্থলে একত্রিত হই এবং বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারজু খাতুনের বড় ভাই আতাহারের নির্দেশে আমাদের মধ্যে একজন নারজু খাতুনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আসেন।

পরে আতাহারের নির্দেশে অন্যান্যদের সহযোগিতায় নারজু খাতুনকে গলাকেটে হত্যার পর ফাঁকা জায়গায় ফেলে রাখা হয়। এরপর প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। তিনি আরো জানান, হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

news24bd.tv/ তৌহিদ

এই রকম আরও টপিক