ভেন্টিলেটর খুলে দিতে মুমূর্ষু শিশু রোগীর চিঠি, না হলে সবাইকে ধরিয়ে দেয়া হবে...

সংগৃহীত ছবি

ভেন্টিলেটর খুলে দিতে মুমূর্ষু শিশু রোগীর চিঠি, না হলে সবাইকে ধরিয়ে দেয়া হবে...

অনলাইন ডেস্ক

বেশ কয়েকদিন ধেরে মহাখালির ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (পিআইসিইউ) ভর্তি আছে ১৫ বছর বয়সী তানজিম। কভিড নিউমোনিয়া এবং পরে টিউবারকুলেসিস নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিল। অন্য এক হাসপাতাল থেকে রেফার্ড করে এখানে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রাখা হয়েছে তাকে। ভর্তির সময় অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল ছিল।

চিকিৎসকগণ ভেন্টিলেটরে রেখেই তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

কিন্তু ভেন্টিলেটরে থাকতে কিছুতেই ভালো লাগছিল না শিশুটির। সে ভেন্টিলেটর খুলে দেবার জন্য চিকিৎসক, নার্সদের অনেক পীড়াপীড়ি করে। কিন্তু জটিলতা বাড়ার আশঙ্কায় তা করা সম্ভব হয়নি।

অবশেষে একজন নার্সের কাছ থেকে কাগজ আর কলম নিয়ে সেখানকার প্রধান চিকিৎসকের উদ্দেশ্যে লিখেন এক চিঠি। চিঠিতে রীতিমতো হুমকি দিয়ে লিখেন, ‌‘ডক্টর, আমার টিউব খুলে ফেলেন। আমার আর ভালো লাগছে না। এখনই খুলেন। আমি অনেকদিন ধরে বলছি খুলতে কিন্তু আপনারা হেলাফেলা করছেন। আজকেই খুলে দিবেন। নইলে আমি টান দিয়ে খুলে ফেলবো। ৯৯৯ এ কল করবো। সবাইকে ধরায় দিবো। আজকে আমার টিউব খুলে আমাকে কেবিনে দিবেন। ওয়ার্নিং!’

সেখানকার আইসিইউ ও ক্রিটিকাল কেয়ার অফ পেডিয়াট্রিকস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মনির হোসেন বৃহস্পতিবার তানজিমের বাবার অনুমতি নিয়ে তার লেখা চিঠি ও কিছু ছবি পোস্ট করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লিখেন, এখানে ভর্তির সময় অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, সত্যি বলতে কি বর্তমান অবস্থায় সে ফিরে আসবে এটা চিন্তায়ও ছিল না। প্রথমদিকে এক ঘন্টা বা ৪৫ মিনিট পরই তাকে ভেন্টিলেটরে দেয়ার জন্য সে নিজেই হৈ চৈ লাগিয়ে লাগিয়ে দিত। এখন আরও বেশী সময় থাকতে পারে। মোটামুটি জ্ঞান ফিরে আসার পর এবং ফুসফুস ও হার্টের অবস্থা কিছুটা ভালোর দিকে যাওয়ার পর থেকেই আমরা ভেন্টিলেটর সাপোর্ট তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। তার ফুসফুসের (pyothorax with surgical emphysema) পাশাপাশি হার্টের (Myocarditis with all chamber dilated, low EF, High Trop I, Pro BNP & Very high Flatulence--IVIg দেয়া হয়েছে। অবস্থাও খুব খারাপ! এখনোও দুটো Thoracostomy tube দিয়ে Pus আসছে!! 

অধ্যাপক মনির হোসেন ফেসবুকে আরো লিখেন, এই অবস্থায়ও ভেন্টিলেটর খুলে দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিতে প্রতিদিন সে আমাকে শাসাতো! আমিও মাথায় হাত বুলিয়ে ১দিন করে সময় বাড়াই। অবশেষে পেলাম সেই চিঠি। নার্সের কাছ থেকে কাগজ নিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে সে চিঠিটা লিখে রেখেছে। আমি আজ রাউন্ডে তার সামনে যেতেই আঙুলের ইশারায় নার্সকে বললো, চিঠিটা আমাকে দিতে... আমি তো অবাক! ফুসফুস ও হার্টের এই অবস্থায় এই রকম তেজী রোগী আমি পিআইসিইউতে কখনো দেখিনি! তবে আল্লাহর অশেষ রহমতে আজ আমরা ET Tube খুলতে পেরেছি। এখন সে শুধু  অক্সিজেন মেইনটেইন করছে। আবারও প্রমাণ হলো God ই সবকিছু নির্ধারণ করেন।

news24bd.tv/desk