শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি : ২ দিনের রিমান্ডে পশ্চিমবঙ্গের শিল্পমন্ত্রী 

শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি : ২ দিনের রিমান্ডে পশ্চিমবঙ্গের শিল্পমন্ত্রী 

অনলাইন ডেস্ক

পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ (এসএসসি স্ক্যাম) দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হলেন রাজ্যের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও বর্তমান শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার সকাল থেকে টানা ১৯ ঘণ্টা ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের পর স্থানীয় সময় দিবাগত রাত ১.৫৫ মিনিটে বেহালা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ককে গ্রেপ্তার করে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট’র (ইডি) কর্মকর্তারা।

শুক্রবার রাতেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখার্জির টালিগঞ্জের একটি বহুতল আবাসনের (ডায়মন্ড সিটি সাউথ) ফ্ল্যাট থেকে বিপুল অর্থ উদ্ধার হয়। উদ্ধারকৃত ওই রুপির মধ্যে ছিল প্যাকেটে মোড়া ২০০০ ও ৫০০ রুপির নোট।

রুপি গুনতে অর্পিতার বাড়িতে ক্যাশ কাউন্টিং মেশিন নিয়ে যায় ব্যাংক কর্মকর্তারা। ইডি সূত্রে খবর ওই অর্থের মোট পরিমাণ ২১ কোটি ২৯ লাখ রুপি। রুপি ছাড়াও অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে বাজেয়াপ্ত হয় ৭৯ লক্ষ রুপির গয়না, ৫৪ লক্ষ রুপির বিদেশি মুদ্রা, বিশটি মোবাইল ফোন।

শুক্রবার সকালেই পার্থ’র দক্ষিণ কলকাতার নাকতলার বাড়িতে যায় ইডির তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

একটানা জেরায় মাঝেমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন পার্থ। সে সময় তার পারিবারিক চিকিৎসককে ডেকে এনে চিকিৎসা করানো হয়। শুক্রবারের পর শনিবার সকাল থেকে চলে একটানা জেরা। পার্থ’র বাড়িতে ঘিরে ফেলা হয় কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে দিয়ে। বাড়ির ভেতরে অপরিচিতদের প্রবেশের ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি করা হয়।

অর্পিতার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত রুপির সাথে পার্থের কোন যোগ রয়েছে কিনা, এই দুর্নীতিতে আর কারা কারা জড়িত এসব বিষয় জানতে চান এই সমস্ত বিষয় জানতে চায় ইডি। কিন্তু সন্তোষজনক উত্তর না মেলায় গ্রেফতার করা হয় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। এর আগেও গত মে মাসে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে কয়েক দফায় জেরা করে সিবিআই'এর তদন্তকারী কর্মকর্তারা। এদিন গ্রেপ্তারের পরই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় জোকার ইএসআই হাসপাতালে। সেখানে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক পরীক্ষা করা হয়।

এরপর এদিন বিকেলে তাকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়। সেখানে মন্ত্রীকে ২ দিনের জন্য ইডির হেফাজতে পাঠায় বিচারক। সেক্ষেত্রে আগামী সোমবার ফের পার্থকে আদালতে তোলা হবে। ইডির হেফাজতে থাকাকালীন তাকে জেরা করে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে চায় ইডি।  

এদিন আদালতে ইডির আইনজীবীরা জানান, অর্পিতা মুখার্জির সাথে সরাসরি যোগ দিয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। কিছু রুপি সরানো হয়েছে অর্পিতার ফ্ল্যাটে। এছাড়াও প্রচুর সম্পত্তি কেনা হয়েছে ওই রুপি দিয়ে। তার রশিদ পাওয়া গেছে বলে দাবি ইডির আইনজীবীর।

যদিও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবীর দাবি তার মক্কেলের বাড়ি থেকে কোন অর্থ উদ্ধার হয়নি। এদিকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর সকালে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় পার্থ জানান, দলনেত্রী (মমতা ব্যানার্জি) এর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু তাকে পাইনি।

উল্লেখ্য, পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন ২০১৭ সাল থেকে শিক্ষক নিয়োগে বেনিয়মের অভিযোগ ওঠে। অর্থের বিনিময় অনেককে চাকরি পাইয়ে দেবার অভিযোগ ওঠে সেসময়। ফলে মেরিট লিস্টে নাম না থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র রুপির জোরে অনেকেই চাকরি পেয়ে যান।

ওই অভিযোগ আসার পরেই কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তের ভার হাতে নেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। তারা মূলত এই মামলার ফৌজদারির দিকটি দেখছে। কাদের হাত ধরে এই দুর্নীতি হয়েছে তা খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছে সিবিআই-এর তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

অন্যদিকে এই মামলায় আর্থিক দুর্নীতির দিকটি খতিয়ে দেখছে ইডির কর্মকর্তারা। তারই অংশ হিসেবে শুক্রবার রাজ্যের অন্তত ১৪টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালায় ইডি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

এদিকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তার করার খবর গণমাধ্যমে জানতে পারলেও তার কাছে এবিষয় কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি বা তথ্য জানানো হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্য বিধান সভার স্পিকার ও ক্ষমতার ক্ষমতাশীল দলের বিধায়ক বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী কোনো বিধায়ককে গ্রেপ্তার করতে গেলে স্পিকারের অনুমতি নিতে হয়।

এদিকে এসএসসি দুর্নীতি মামলায় জড়িত অভিযোগে সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর গ্রেপ্তার পাহাড়ের চূড়া মাত্র বলে অভিহিত করেছেন এসএসসি চাকরি প্রার্থী মঞ্চের আন্দোলন কারীরা। তাদের দাবি ২০১৮ সাল থেকে তারা তাদের চাকরির বৈধ দাবি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দোষীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।

news24bd.tv/কামরুল